সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ইতিহাস থাকলেও জাপানের সমর্থক না থাকাটাই আশ্চর্যের

শউদু ওকাকুরা নন, রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে বিশ্বভারতীতে এসেছেন অন্তত দু-জন যুযুৎসু প্রশিক্ষক

 |  2-minute read |   02-07-2018
  • Total Shares

ফুটবল বিশ্বকাপ এলে বাঙালি মাত্রই ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা কিংবা জার্মানির সমর্থক হয়ে যায়। আজকের নতুন প্রজন্ম নাকি আবার পর্তুগাল, স্পেন বা ফ্রান্স সমর্থক হয়ে উঠেছে। যতই এশিয়ার দেশ হোক না কেন, বাঙালির হৃদয়ে জাপান ফুটবল দলের জন্য কোনও স্থান নেই। আজ রাতে

বিশ্বকাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নামছে জাপান। কিন্তু এ বঙ্গের ফুটবল সমর্থকদের আশা আকাঙ্ক্ষা এখন নেইমার ও ব্রাজিলকে ঘিরেই। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।

বিশ্বমঞ্চে বাঙালি সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে গর্ব করে সেই নোবেলজয়ী বিশ্বকবি তো জাপানিদের ক্রীড়াচর্চার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিলেন। জাপানিদের ক্রীড়াচর্চা ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করেছিল রবীন্দ্রনাথকে। জাপানে বেশ কিছু ঐতিহ্যশালী খেলা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্যারাটে বা যুযুৎসু। আর রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে একবার নয়, দু'-দু'বার দু'জন যুযুৎসু প্রশিক্ষক এসে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন।

body1_070218063843.jpgবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে একবার নয়, দু'-দু'বার দু'জন যুযুৎসু প্রশিক্ষক এসে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন

প্রথমজন এসেছিলেন ১৯০৫ সালে।তাঁর নাম জিননোসুকে সানো। শুধুমাত্র যুযুৎসু শিক্ষাই নয়, সানো রীতিমতো জাপানি ভাষার ক্লাস নিতেন বিশ্বভারতীতে। এর পর ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রপ্রেমী ওকাকুরা কাকুসোর সুপারিশে বিশ্বভারতীর ছাত্রদের যুযুৎসু শেখাতে আসেন সিংজো তাকাগাকি। ছাত্রদেরই বা বলি কী করে? তাকাগাকির কাছে মেয়েরাও, মানে ছাত্রীরাও তো তালিম নিতেন। আর এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের মাও তাকাগাকির কাছে যুযুৎসু প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

যুযুৎসু ছাড়াও জাপানিদের আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় প্রথাগত খেলা রয়েছে। যেমন ইয়াকিউ। সহজ সরল ভাষায় বেসবল। এ ছাড়া জাপানের সুমো কুস্তি তো জগদ্বিখ্যাত। ঐতিহাসিক কাল থেকেই জাপানিরা এক ধরণের জুয়া খেলেন। অনেকটা নেপালের ক্যাসিনোর মতো। এর নাম পাচিনকো। জাপানে দাবার মতো একটি বোর্ড গেমও বিখ্যাত, যার পোশাকি নাম গো।

body_070218063906.jpgজাপানে সেই খেলাটির নাম সাক্কা

আমরা যাকে ফুটবল বলি, গোটা বিশ্বে যা সকার বলে পরিচিত, জাপানে সেই খেলাটির নাম সাক্কা। আজ রাশিয়ায় এই সাক্কা খেলায় জাপানের মরণ বাঁচন লড়াই। জাপান যদি জিতে পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে যায় তা হলে আমি অন্তত অবাক হব না। জাপানিদের কাছে সত্যিই অসম্ভব বলে কিছুই নেই।

জাপানিরা তো সাক্কা খেলতেই শুরু করল ১৯ শতকের শেষের দিকে, মেজির সংস্কারের পরে। সেই সময় বিশ্বের জন্য দ্বার খুলে দিল জাপান। পশ্চিমি দুনিয়া থেকে যা যা আমদানি করেছিল তারমধ্যে একটি হল এই ফুটবল। আর মাত্র দেড়শো বছরের মধ্যেই জাপান এখন এশিয়ার অন্যতম সেরা দল যা পৃথিবীর সেরা দলগুলোর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে।

আসলে জাপানের ফুটবল কিন্তু কলকাতার রাস্তায় বিক্রি হওয়া চাইনিজ খাবারের মতো নয়। চিনে খাবারকে নিজেদের মতো করে বানিয়ে নিয়েছি আমরা। জাপান বিশ্বের কাছে যা শেখে তার অরিজিনালিটি থেকে সরে আসে না। তারা ইউরোপীয়দের মতই ফুটবল খেলে তাই ইউরপিয়দের সঙ্গে টক্করও দিতে পারে।

আপাতত ম্যাচ শুরুর আগে আমি শুধু একটা কথাই বলব - ওমেদেতো। অভিনন্দন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

NILANJAN BANERJEE NILANJAN BANERJEE

The writer is an official of Viswa Bharati and Japan enthusiast.

Comment