কেরলবাসী এতদিন ভারী বর্ষণকেও ভয় পেত না, কিন্তু এ বার সামান্য বৃষ্টিতেও আতঙ্কিত হয়ে পড়বে

বন্যার কারণগুলো নিরূপণ করে অবিলম্বে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারি

 |  2-minute read |   23-08-2018
  • Total Shares

সপ্তাহখানেক হত চলল আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে রয়েছি। দুশ্চিন্তায় রয়েছি বললেও কম বলা হবে। কেরলের পরিস্থিতি নিয়ে আমি যারপরনাই উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত।

আমার শ্বশুরবাড়ি এর্নানুলেইতে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভালো। কিন্তু এখান থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ত্রিশূরের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। শেষ কিছুদিন ধরে আতঙ্কে কাটিয়েছে ত্রিশূরের বাসিন্দারা। শুনতে পাচ্ছি বুধবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়রা কিছুদিন অপেক্ষা করেই আমাকে বাড়ি ফেরার পরামর্শ দিচ্ছে।

জানি না ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে আমার ত্রিশূরের বাড়িটি। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল ত্রিশূর শহর। আমার বাড়ির একতলা তো পুরো জলে ডুবে গিয়েছিল। আমার দু'একজন প্রতিবেশীর মৃত্যু সংবাদও আমি পেয়েছি। সব মিলিয়ে মন মেজাজটাও ভালো নেই।

ভয়াবহ বন্যায় ঘর ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির আশ্রয়ে আই এম বিজয়ন! ত্রিশূর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গত পাঁচ দিন ধরে রয়েছেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।

body_082318121959.jpgত্রিশূরের পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ [ছবি: পিটিআই]

আসলে বন্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই ছিল না। এর আগে টেলিভিশন বন্যার খবর দেখেছি বা সংবাদপত্রে বন্যা সংক্রান্ত খবর পড়েছি। কয়েকবছর আগে চেন্নাইতেও তো ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল। তবে এই প্রথম আমার বন্যার অভিজ্ঞতা হল। এবং এই অভিজ্ঞতার কথা যত দ্রুত সম্ভব মন থেকে মুছে ফেলতে পারব ততই মঙ্গল।

ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাব এই জন্য যে, ভাগ্যিস দ্রুত এর্নানুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম, না হলে হয়ত আমাকে এখন সপরিবারে ত্রাণ শিবিরে দিনযাপন করতে হত। আমরা যে দিন সকালে শ্বশুরবাড়ির চলে এলাম সেদিন দুপুরের পর থেকেই যান চলাচল প্রায় বন্ধ ত্রিশূরে। শুনলাম কাল সন্ধ্যা থেকে যানবাহন আসতে আসতে পথে নামতে শুরু করেছে।

এখন মনে বারংবার প্রশ্ন জাগছে, কী কারণে এ ধরণের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হল? কেরলের বৃষ্টিপাত অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাই ভারী বর্ষণ হলেও আমরা খুব একটা ভয় পাই না। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য কেরলবাসী।

body1_082318122057.jpgপরিস্থিতির পুনারাবৃত্তি রুখতে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে [ছবি: পিটিআই]

শুধু একটা খবরেই কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। ত্রিশূর স্টেডিয়াম ও রাজ্যের অন্যান্য ফুটবল গ্রাউন্ডগুলো সে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখেছি বেশ কয়েকটি স্টেডিয়াম জলমগ্ন হলেও মোটের উপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

শুনতে পাচ্ছি যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন উদাসীনতার জন্যেই নাকি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সে ক্ষত্রে, যে যে কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোকে সনাক্ত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়াটা প্রয়োজনীয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় এর জন্যে সবচেয়ে আগে সচেতনতার প্রয়োজন। প্রয়োজন পড়লে আমি, পিটি ঊষা বা এ রাজ্যের অন্য সেলিব্রিটিদের নিয়ে এই সচেতনামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

আর কেউ করুক না করুক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করব। এমন একটা কিছু করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি এড়ান যায়। প্রকৃতির খেয়ালের উপর কারও হাত নেই। কিন্তু এই খামখেয়ালিপনার প্রভাব যতটা কমানো যায় তা আমাদেরকেই দেখতে হবে।

সব শেষে আমি দেশের সেনাবাহিনী, সংবাদমাধ্যম ও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই পরিস্থিতিতে তারা যে ভাবে কেরলের সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাঁর জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

IM VIJAYAN IM VIJAYAN

The writer is a former Indian football captain who is also popular as "Kalo Horin". Arjuna Award recipient.

Comment