র‌্যাঙ্কিংয়ে উপরে উঠলেও কেন বিশ্বকাপে খেলা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে ভারতের?

ভারত যে কিনিয়াকে হারাল তারাও হয়তো বিশ্বকাপ খেলবে, ভারতের তারকারা বিশ্লেষণ করবেন

 |  2-minute read |   03-07-2018
  • Total Shares

তখনও কপিলের ভারত ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জেতেনি। স্বাধীনোত্তর ভারতের মনে রাখার মতো পারফর্ম্যান্স বলতে শুধুমাত্র পাঁচটি অলিম্পিকের স্বর্ণপদক এবং ১৯৭৫ সালে কুয়ালালামপুরে হকিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ফুটবলেও অবশ্য কয়েকটি সাফল্য এসেছিল। ১৯৫১ সালে দিল্লি ও ১৯৬২ সালে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম আমরা।

১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা বলছি। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের আমন্ত্রণে পাঁচটি আন্তর্জাতিক দল এ দেশে এসেছিল নেহেরু কাপে যোগ দিতে। আমার পরম সৌভাগ্য যে সেই দলে সুযোগ পেয়ে গেলাম আমিও। আলোক মুখোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়— সম্মিলিত সেই দলের কাঁধে বিশাল দায়িত্ব। উল্টোদিকে, উরুগুয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, সাবেক যুগোস্লাভিয়া, চিন ও ইতালি।

ভাবতেই এখনও গায়ে কাঁটা দেয় যে উরুগুয়ে দলে ফ্রান্সসেসলির মতো তারকারা। শুধু উরুগুয়ে কেন,  প্রায় পূর্ণশক্তির দল নিয়ে ভারতে এসেছিল এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি দেশই। আসলে ১৯৮২ নয়, ১৯৮৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে তারাই টুর্নামেন্টকে বেছে নিয়েছিল।

ভারত হয়তো জিততে পারেনি। ভারত হয়তো গ্রুপ পর্যায়ে ছ’টি দলের মধ্যে পাঁচ নম্বরে শেষ করেছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালের নেহেরু কাপে আন্তর্জাতিক মানের দলগুলোর সঙ্গে আমরা কিন্তু সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেছিলাম। চিনের সঙ্গে প্রথম ম্যাচেই ড্র। পরের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ২-২ ফলাফলে ম্যাচ শেষ করেছিলাম। ইতালির অলিম্পিক দলের সঙ্গে হারলেও যুগস্লাভিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছিলাম। বড় ব্যাবধানে শুধুমাত্র উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ১-৩ গোলে হেরেছিলাম।

body_070318073849.jpg

ভাবতে অবাক লাগে যে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সমতা বজায় রাখলাম বা ড্র করলাম। যুগোস্লোভিয়াকে আমরা হারালাম। তাদের থেকে আমরা এখন কতটা পিছিয়ে পড়েছি। অবিভক্ত যুগোস্লাভিয়া আর নেই। কিন্তু ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে ক্রোয়েশিয়া ও সার্বিয়ার মতো দেশগুলো এখন বিশ্বকাপ খেলছে। দক্ষিণ কোরিয়া তো শেষ ম্যাচে রীতিমতো বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে পরাজিত করল। অথচ ভারতের এখনও বিশ্বকাপ খেলা হল না।

শেষ পাঁচটি নেহরু কাপে পাঁচবারচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। কিন্তু সুনীলদের কৃতিত্বকে খাটো না করেই বলছি, সুনীলদের প্রতিপক্ষ আর আশির দশকে নেহরু কাপে খেলতে আসা দলগুলোর মানের জমিন-আসমান তফাৎ রয়েছে। আসলে সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা চাইছে কোনও মতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ম্যাচের পর ম্যাচে জয় লাভ করে দেশের র‌্যাঙ্ক কমাতে। কিন্তু তাতে ভারতীয় ফুটবলে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলে আমরা আমাদের পিঠ চাপড়াচ্ছি আর দেশের ফুটবল মান রয়ে যাচ্ছে সেই তিমিরেই।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ভারতকে এশিয়ার সেরা দলগুলোর মধ্যে দেখতে হলে আমাদের এই সেরা দলগুলোর বিরুদ্ধে আরও বেশি করে ম্যাচ খেলতে হবে। জাপানের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, কোরিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে হবে আবার সৌদি আরবের বিরুদ্ধেও খেলতে হবে। এই দলগুলোর বিরুদ্ধে খেললে যাচাই করা যাবে আমরা কোথায় কোথায় পিছিয়ে রয়েছি আর যত বেশি খেলবে তত দ্রুত এই দলগুলোর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য নিজেদের ফুটবল মানও উঁচু করা যাবে।

body1_070318073903.jpg

সমস্যাটা হচ্ছে যোগ্য প্রশাসকের অভাব। ভারতীয় ফুটবলের মাথায় বর্তমানে রাজনৌতিক ব্যক্তিত্ব প্রফুল্ল প্যাটেল রয়েছেন। কিন্তু তিনি তো রাজনীতি করে, ব্যবসা সামলে তারপর যদি কোনও সময় বাঁচে সেই সময়টা ফুটবলে দিচ্ছেন। এই ব্যবস্থায় কোনও দিনও ভারতীয় ফুটবল উপরে উঠতে পারবে না। ভারতের প্রয়োজন পূর্ণ সময়ের একজন প্রশাসক, যাঁর ধ্যান-ধারণা চিন্তা সমস্তই ফুটবলকে ঘিরে থাকবে।

প্রশাসকরা যদি ফুটবল নিয়ে ভাবনা চিন্তাই না করেন তা হলে আর ভবিষ্যতের ফুটবলাররা উঠে আসবে কী করে?

এই নেহরু কাপের ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়েছে সুনীলরা। হয়ত দেখবেন ২০৫৪ সালে এই কেনিয়া বিশ্বকাপ খেলছে আর সুনীলরা বসে বিশ্লেষণ করছে "কেন ভারত আজও বিশ্বকাপ খেলতে পারল না।"

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ATANU BHATTACHARJEE ATANU BHATTACHARJEE

The writer is a formernational goalkeeper and member of Asia All Star IX (1986).

Comment