ভারতীয় বোর্ড কি শুধু পয়সা কমাতে চায়? কোহলিদের উচিৎ কম টেস্ট আর বাড়তি টি-২০র বিরোধিতা করা
টি-২০-র সংখ্যা বাড়িয়ে টিভি স্বত্ব থেকে বেশি মুনাফা লুটতে চায় বোর্ড
- Total Shares
আধুনিক ক্রিকেট মানেই শুধুমাত্র মাঠের ভিতরকার খবর নয়। মাঠের বাইরের খবরগুলো এখন অনেক বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর শ্রেষ্ট নিদর্শন তো বিরাট কোহলি আর অনুষ্কা শর্মার বিবাহ। শুধু বিবাহ নয় নবদম্পতির মধুচন্দ্রিমার ছবিগুলোও সোশ্যাল মিডিয়াতে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। খবরের ব্যবসা ও সমর্থকদের জন্য সুখবর যে এই বিষয়গুলোর মধ্যে কোনোরকম "আমি পেয়েছি" বা "ও পায়নি" মার্কা ব্যাপার নেই। দুই মহাতারকাই নিজেদের টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্টগুলো করছিলেন।
আর এসবের মাঝেই দেশের মাটিতে ক্রিকেট কেন্দ্রিক এক ধরণের 'বিপ্লবের' প্রস্তাব পেশ হয়ে গেল।
প্রথমত, ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাইনে বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোহলিদের ভবিষ্যতের সফরগুলো নিয়ে (সংক্ষেপে এফটিপি) যে প্রস্তাবটি পেশ করা হয়েছে তাতে ক্রিকেটারদের কর্মভার অনেকটা হ্রাস পেতে চলেছে। এফটিপি ঠিক কি ধরণের পরিবর্তন আনতে চলেছে তা বুঝতে গেলে আমাদের প্রস্তাবটি একবার খতিয়ে দেখে নিতে হবে।
এফটিপি নিয়ে বিশ্লেষণের আগে পাঠকদের একটা কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। ক্রিকেটারদের কর্মভার কমানোর অনুরোধটা ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির কাছ থেকে এসেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন সফরের আগে সুপরিকল্পিত প্রস্তুতির কথাও তিনি বলেছিলেন। তিনি নিজে শ্রীলঙ্কা সফরে বিশ্রাম নিয়েছেন।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কি বোর্ডকে টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা কমাতে বলেছে?
এবার এফটিপি-র দিকে মনোনিবেশ করা যাক। বলা হচ্ছে ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ভারতের ম্যাচ খেলার দিন ৩৯০ দিন থেকে কমে ৩০৬ দিনে এসে দাঁড়াবে। সফরের কথা মাথায় রাখলে নিঃসন্দেহে দিনের সংখ্যা কমবে। কিন্তু এই হিসেবের মধ্যে তিনটি আইসিসি পরিচালিত টুর্নামেন্টের উল্লেখ নেই - বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও টি-২০ বিশ্বকাপ।
শেষবার এই তিনটে টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ভারত ১৯টি ম্যাচ খেলেছিল। তার মানে ভারত আদতে ৫০ দিন মত কম খেলবে। এবং টেস্ট ক্রিকেট কম খেলবে। অর্থাৎ, প্রতি বছর আড়াইটে মত টেস্ট কম খেলবে। প্রস্তাবিত এফটিপি-তে বলা হয়েছে যে প্রথম সারির দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভারত বেশি খেলবে। তুলনামূলক ভাবে দুর্বল দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিরাট কোহলিরা অনেকটাই কম খেলবে। তবে এই বিষয়টা কার্যকর করতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিষদের অনুমোদনের প্রয়োজন।
এখনও অবধি কেউ নিশ্চিত নয় যে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা ঠিক কি চিন্তাভাবনা করছেন। বোর্ডের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্তা রাউল জহরি সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে এই বিষয় তারা টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলে তাদের পরামর্শ নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
একটি বিষয় জানতে হবে যে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কি বোর্ডকে টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা কমাতে বলেছে, নাকি টেস্ট পাঁচ দিন থেকে চার দিনের করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রস্তাবিত এফটিপি-তে টি-২০ ম্যাচের সংখ্যা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। তার মানে বোর্ড টিভি স্বত্ব থেকে বেশি মুনাফা লুটতে চাইছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের স্বত্ত্ব প্রায় ১৬,৩৪৭.৫ কোটি টাকায় পাঁচ বছরের জন্যে ষ্টারকে বিক্রি করা হয়েছিল। সুতারং টেস্ট কমিয়ে টি-২০ ম্যাচের সংখ্যা বাড়িয়ে বোর্ড তো ভারতীয় ক্রিকেটের রূপরেখা পরিবর্তনের চেষ্টা করবেই।
টেস্ট ক্রিকেট কেউ দেখে না - এটা বলা হয়তো বেয়াদপি হবে। ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট ম্যাচগুলোকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল। অ্যাশেজ সিরিজ নিয়েও তো যথেষ্ট উদ্দীপনা ছিল।
বিমান যাত্রা যে পরিমান বাড়বে তাতে ধকলও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। ভারতেই বিভিন্ন শহরের আবহাওয়া বিভিন্ন ধরণের। আমার তো মনে ক্রিকেটেররাও এই অতিরিক্ত টি-২০র সূচিতে খুব একটা খুশি হবেন না।
৫৩টা টি-২০ ম্যাচ খেলা মানে টি-২০ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে ২৬টি আবার বিদেশের মাটিতে। কিছুদিন আগেই কথা হচ্ছিল যে একদিনের আন্তর্জাতিক প্রবলভাবে টি-২০র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের পরিকল্পনা দেখে মনে হচ্ছে একদিনের ম্যাচ নয়, টেস্ট ম্যাচ টি-২০র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
উল্টোদিকে অস্ট্রেলিয়াকে দেখুন। তারা টেস্ট ক্রিকেটের নতুন বিপ্লব আনছে।নৈশালোকে, গোলাপি বলে টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত করছে। টেস্ট ক্রিকেট সংরক্ষণের প্রয়োজনে উদ্ভাবনী পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। সৌরভ গাঙ্গুলীও তা মনে করেন।
বোর্ডের সদরদপ্তর একটা বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে - ভারতীয় বোর্ড শুধু অর্থ কামানোর চিন্তাতাই মশগুল। বাড়তি টি-২০ ম্যাচ তার উপর আবার আইপিএল - আর কি চাই?
(সৌজন্য: মেল টুডে)

