মহানগরের স্টেশনগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম পরিবেশবান্ধব স্টেশনের তকমা কেন হাওড়াকে
মাত্র সাড়ে সাত মাসের মধ্যেই বড় বড় স্টেশনগুলোকে টেক্কা দিয়ে হাওড়া স্টেশন পরিবেশবান্ধব হয়েছে
- Total Shares
মনে করুন কেউ দিল্লি থেকে প্রথমবারের জন্য অফিসের কাজে বা বেড়াতে কলকাতায় কিংবা পশ্চিমবঙ্গে আসছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর হাওড়ার স্টেশনেই নামার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ হাওড়া স্টেশনেই তাঁর শহর বা রাজ্যের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটবে। সহজ-সরল ভাবে বলতে গেলে বিমানবন্দর, রেল স্টেশন কিংবা বাসস্ট্যান্ড আদতে দেশ, রাজ্য বা শহরের মুখ। তাই এই মুখটাকে সবার আগে সুন্দর করে তুলতে হবে।
গত বছর আগস্ট মাসে সেই চেষ্টাতেই নেমে ছিলাম আমরা। আর, মাত্র সাড়ে সাত মাসের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রথম লক্ষ্য সম্পন্ন করে ফেলেছি। দেশের বড় বড় স্টেশনগুলোর মধ্যে হাওড়া স্টেশন সর্বপ্রথম গ্রিন স্টেশন বা পরিবেশবান্ধব স্টেশন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সত্যি, এ এক অনন্য অনুভূতি।
গ্রিন স্টেশন বলতে আমরা পরিবেশ বান্ধব স্টেশনের কথাই বুঝি
গ্রিন স্টেশন বিষয়টা কী তা আগে বুঝতে হবে। গ্রিন স্টেশন বলতে আমরা পরিবেশ বান্ধব স্টেশনের কথাই বুঝি।
পরিবেশ থেকে আমরা রোজ যা যা গ্রহণ করছি তা আমাদের পরিবেশকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। এমন ভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে যাতে পরিবেশ যেন কোনও ভাবেই দূষিত না হয়। যেমন ধরুন, আপনি যদি বেশি মাত্রায় কয়লা পোড়ান তাহলে পরিবেশ দূষিত হবে। কিন্তু আপনি যদি অচিরাচরিত বিভিন্ন শক্তি ব্যবহার করেন তাহলে পরিবেশকে দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে।
হাওড়া স্টেশনে যেমন আমাদের নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আছে। স্টেশনের যত নোংরা জল তৈরি হয় তা আমরা গঙ্গায় ফেলি, কিন্তু এক ফোঁটা নোংরা জলও এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিস্রুত না হয় গঙ্গায় যায় না। আপনারা হয়ত জানেন এলইডি বাতিতে বিদ্যু সবচেয়ে কম খরচ হয়। আমাদের গোটা স্টেশন জুড়েই এখন এলইডি আলো বসান হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে সোলার প্যানেল বসিয়েছিলাম যা ব্যস্ততম সময় ৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারবে। পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হওয়ায় এ বার আমরা ছ'মেগাওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট সোলার প্যানেল বসাতে চলেছি। এ জন্য আমরা স্টেশন লাগোয়া অঞ্চলে জায়গা খুঁজছি।
শুধু এলইডি নয়, আমরা স্টেশনের ছাদে স্কাইলাইট বসিয়েছি। এটা এক ধরণের ট্রান্সপারেন্ট সিট যা ভেদ করে সূর্য্যের আলো ঢুকতে পারে কিন্তু সূর্য্যের তাপ কোনও ভাবেই প্রবেশ করবে না। দিনের বেলায় তাই আমাদের আর বৈদ্যুতিক আলোর প্রয়োজন পড়ে না, অথচ স্টেশনের ভিতরের অংশ অনেকটাই ঠান্ডা থাকে। এছাড়া, আমরা উন্নত প্রযুক্তির পাখা বসিয়েছি। এই পাখাগুলো ধীরে ধীরে ঘোরে অথচ হাওয়া বেশি উৎপাদন করে। এর ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এই মুহূর্তে আমাদের তিনটি এ ধরণের পাখা রয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা আরও আটটি পাখা নিয়ে আসব।
হাওড়া স্টেশনে সোলার প্যানেল বসানোর জায়গা খুঁজছে রেল
আরও একটি নতুন প্ৰযুক্তি আমরা চাইছি, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত জল পরিস্রুত করে আবার পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বিদেশে এই প্রযুক্তির বেশ চল আছে। এই প্রযুক্তি বেশ খরচ সাপেক্ষ। প্রতি পাঁচ লিটারের জন্য প্রায় ২০০ ডলার খরচ পড়বে। আমরা দেখছি আরও কম খরচে এই প্রযুক্তি জোগাড় করা যায় কিনা।
পরিশেষে একটা কথা বলি, গত বছর আগস্ট মাসে আমরা আইজিবিসির সঙ্গে প্রথমবার কথা বলি। এই সংস্থাটি গোটা দেশে পরিবেশ বান্ধব বাড়িগুলোর নাম ঘোষণা করে। সংস্থাটির পরামর্শ শুনে গত সাড়ে সাত মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা গ্রিন স্টেশনের তকমা পেলাম। তবে এই তকমা সিলভার ক্যাটেগরি। আমদের লক্ষ্য প্রিমিয়ার ক্যাটেগরির তকমা। আমি আশাবাদী, খুব শীঘ্রই আমরা সেই লক্ষে পৌঁছতে পারব।
আপাতত আমি গর্বিত যে লাল রঙের হাওড়া স্টেশন সবুজ হয়ে উঠতে পেরেছে বলেছে।

