দুর্ঘটনা হ্রাস পেয়েছে: তাই কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেই নরেন্দ্র মোদীর রেলমন্ত্রক
ভারতীয় রেলের সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগ অমোঘ, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই রেলকে হাতিয়ার করে
- Total Shares
ভারতীয় রেলের সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগ অমোঘ। রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব যিনিই পান তাঁরই মুখ্য কাজ হয় জনদরদী প্ৰকল্প ঘোষণা। এ যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ দেশে। শুধু কী তাই? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার বা লালুপ্রসাদ যাদবের মতো আঞ্চলিক দলের নেতারা রেল মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মানেই নেতাদের নিজের রাজ্যের জন্য বরাদ্দ থাকে 'বাড়তি উপহার'। মানে রেলকে হাতিয়ার করে স্বরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করে দেওয়ার অদম্য প্রচেষ্টা।
ভারতীয় রেলের ক্ষেত্রে এর উল্টো পিঠটাও প্রযোজ্য। অর্থাৎ, রেল দুর্ঘটনা মানেই বিরোধীদের হাতিয়ার। সাঁতরাগাছি স্টেশনের ওভারব্রিজ ভেঙে দু'জনের মৃত্যুর পর রেলকে দোষ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অমৃতসরে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর বিরোধী দলগুলোও বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মঞ্চে নেমেছেন।
নিঃসন্দেহে, মর্মান্তিক ছিল দুর্ঘটনা দুটিই। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে পুঙ্খনাপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় কেউ দায়ী থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
তবে, রেকর্ড ঘটলে তো বাহবা দিতেই হবে এনডিএ সরকারের রেল মন্ত্রককে। শেষ পাঁচ বছরে কাগজে কলমে রেল দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে।
রেকর্ড বলছে, ২০১৩-১৪ সালে সারা দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১১৮ টি। ২০১৭-১৮ সালে দুর্ঘটনা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩-এ। অর্থাৎ, প্রায় ৬২ শতাংশ ট্রেন দুর্ঘটনা কমেছে এই ক'বছরে।
রেল দুর্ঘটনা হ্রাস পেয়েছে ভারতে [ছবি: পিটিআই]
ক্ষমতায় আসার পর এনডিএ সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপদ এবং ঝঞ্ঝাট মুক্ত রেলসফরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে হয়েছিল। এবং, সেই পথেই নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে সরকার।
রেল ট্র্যাকের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে পুরনো ট্র্যাকের পরিবর্তনও করা হয়েছে। এই ধরণের কাজ শেষ চার বছরে তার আগের পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশের মতো। ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ২৯২৬ কিমি রেল ট্র্যাকের পরিবর্তন করা হয়েছিল, সেখানে ২০১৭-১৮ সালে ৪,৪০৫ কিমি ট্র্যাকের পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিগন্যালিং সিস্টেমের উন্নতিসাধনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তাই বলে রেলের গতি যে কমেছে বরঞ্চ বেড়েছে। রাজধানী এক্সপ্রেস, দিল্লি অমৃতসর শতাব্দী এক্সপ্রেস-সহ দেশের ১৪ টি বিশেষ ট্রেনের যাত্রার সময়ও কমানো হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে রাজধানী-শতাব্দী-সহ ৩৫০ টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের এবং ৭৪ টি সুপারফাস্ট ট্রেনের যাত্রার সময় ২৫ মিনিট অবধি কমেছে।
দুর্ঘটনাগুলো দুর্ভাগ্যজনক।, কখনও কখনও মর্মান্তিক। কিন্তু পাঁচ বছরে যদি গড়ে ৬০ শতাংশ মতো দুর্ঘটনা কমে তাহলে প্রশংসা নিঃসন্দেহে রেলমন্ত্রকের প্রাপ্য।