কেন এখন নিত্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হচ্ছে ভারতীয় রেলের টেলিকম সংস্থা রেলটেলকে

১৯৯৯ সালে স্যাম পিত্রোদার পরামর্শে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলটেল গঠন করেন

 |  2-minute read |   29-04-2018
  • Total Shares

রেলটেল নামটা আমজনতা খুব একটা জানে না। রেলটেল নতুন যুগের টেলিকম সংস্থা। সাধারণ মানুষের ধারণা যে টেলিকম মানেই মোবাইল পরিষেবা, ধারণাটা ভুল। আদ্যোপান্ত টেলিকম সংস্থা হলেও রেলটেল মোবাইল পরিষেবা দেয় না। রেলটেল জিনিসটা ঠিক কী, বা এই সংস্থাটা ঠিক কী কাজ করে সেটা আগে বলে না নিলে সংস্থাটি সম্পর্কে আপনাদের সম্যক ধারণা হবে না। আসুন গোড়ার কথাটা তা হলে জেনে নিই।

১৯৯৯ সালের কথা। এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রকের দায়িত্ব তখন কলকাতার দক্ষিণের সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। রেলের আর্থিক দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য উপায় অর্থ উপার্জনের কথা ভাবছিলেন। পণ্য আর যাত্রী পরিষেবা ছাড়া আর কী কী ভাবে রেলের আয়ে বাড়ানো যায় তা জানতে সেই সময় তিনি স্যাম পিত্রোদার দ্বারস্থ হলেন।

রেলমন্ত্রী তখন জানতে পারলেন যে ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে প্রায় ২৫,০০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার পেতে রেখেছেন। কিন্তু তার উপযোগী খুবই সামান্য, বলতে গেলে একেবারে নগণ্য। অর্থাৎ, বেশির ভাগ অপটিক্যাল ফাইবারই অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। পিত্রোদার পরামর্শে তিনি তখন এই অপটিক্যাল ফাইবার থেকে আয়ের পরিকল্পনা ছকলেন। এর পরের বছর, ২০০০ সালে, রেলমন্ত্রক নতুন একটি টেলিকম কোম্পানি তৈরি করল। যার নাম দেওয়া হল রেলটেল।

body1_042918075443.jpg রেলের আর্থিক দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য উপায় অর্থ উপার্জনের কথা ভাবছিলেন

এই নতুন সংস্থাটিকে রেল ২৫,০০০ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার লিজে দিয়ে দেয়। তবে কোনও রকম আর্থিক অনুদান দেওয়া হল না। হাতে গোনা কয়েকজন টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে শুরু হলো রেলটেল। কিন্তু বিনিয়োগ করবার জন্য অর্থ কী ভাবে উঠবে। এসবিআই-এর কাছ থেকে ১৭০ কোটি টাকা ধার নিল রেলটেল।

অবশেষে ২০০২ সালের শেষের দিকে দিল্লি, মুম্বাই আর সেকেন্দরাবাদে কাজ শুরু করল রেলটেল। ২০০৩ সালে মাত্র তিনজন আধিকারিক দিয়ে কলকাতায় রেলটেলের দপ্তর খুলল।

অপটিক্যাল ফাইবার কাজে লাগাতে যথেষ্ট প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ শুরু হল। বড় বড় রেল স্টেশনে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তির জন্য সরঞ্জাম বসান শুরু করলাম।

ভাগ্য ভালো ছিল রেলটেলের। ২০০৪ সালে ভারতে মোবাইল পরিষেবা নেওয়ার ধুম পড়ে গেল। আমাদেরও নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ একেবারে শেষের দিকে। সব মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলোর রাতারাতি ব্র্যান্ড উইদ্থ প্রয়োজন। সবাই আমাদের কাছে পরিষেবা চাইল। ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন (তখন ভারতে হাচ নামে পরিচিত), এয়ারসেল আর টাটা ইন্ডিকম আমাদের দ্বারস্থ হল।

রেলটেলের সূচনাটা ভালোই হল। আমদের সামর্থ্যের পুরোটাই পরিষেবায় লেগে গেল। সব মিলিয়ে ব্যবসা জমে উঠল। কিন্তু চাহিদাও বাড়তে ক্রমে আরও টাকা বিনিয়োগ করে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হল।

body_042918075529.jpgমোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলোর রাতারাতি ব্র্যান্ড উইদ্থ প্রয়োজন, সবাই আমাদের কাছে পরিষেবা চাইল

এত কিছু করেও কিন্তু রেলটেল লাভ করতে পারল না। কারণ মোটা টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হলো। ২০০৮ সালে দেনার দায়ে শেষ হয়েছিল এবং চালুর সাত বছর পর, ২০০৯ সালে, প্রথম লাভের মুখ দেখল রেলটেল।

কিন্তু এর দু'বছরের মধ্যে আবার ধাক্কা। এর মধ্যে প্রায় সবকটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা নিজস্ব ব্র্যান্ড উইদ্থ তৈরি করে ফেলেছে। ফলে, আমাদের পুরোনো ব্যবসায় টান পড়ল। রেলটেল নতুন নতুন পরিষেবা ব্যবসাতে পা বাড়াল।

প্রযুক্তি দিনে দিনে যে ভাবে উন্নত হচ্ছে তার সঙ্গে পা মিলিয়ে চলতে হবে রেলটেলকে। ডারউইনের 'সার্ভিভাল অফ দ্য ফিটেস্ট' তত্ত্ব তো সবারই মনে রেখে চলা উচিৎ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GANESH CHAKRAVORTY GANESH CHAKRAVORTY

Mentor & Ex Dy. General Manager Mktg. & NW Plg. at RAILTEL

Comment