সব ধরনের আমানকে আমানতে সুদের হার ক্রমাগত কমতে থাকায় বিনিয়োগ বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডে
ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদের হার নিম্নমুখী, বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে এসআইপি-তে
- Total Shares
ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে ক্রমেই কমছে আমানতের উপের সুদের হার। সুদের হার কমছে প্রভিডেন্ট ফান্ডেও। রাজনৈতিক দলগুলি হইচই শুরু করে দিয়েছে। আর মাত্র এক বছর পরেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সরকারের বিরুদ্ধে এমন একটা খোলতাই ইস্যু পেলে কোন রাজনৈতিক দল তা ছেড়ে দেবে?
ব্যাঙ্কের সুদ সরকার যে স্থির করে না, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির উপর ভিত্তি করে ব্যাঙ্কগুলিই স্থির করে, এ কথা রাজনৈতিক নেতারা জানেন। আর যাঁরা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন, তাঁরা সরকার আর কপালের উপরে সব দোষ না দিয়ে টাকা এমন জায়গায় রাখেন, যে খানে রাখলে টাকার অঙ্কটা বাড়বে। বিনিয়োগ নিয়ে দেশে সচেতনতা বাড়ছে বলেই সংবাদপত্রের খবর, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের অঙ্ক এখন স্থায়ী আমানতের এক-পঞ্চমাংশ হয়ে গিয়েছে।
যে কোনও বিনিয়োগেই ঝুঁকি আছে
সকলেই যে শেয়ারবাজার বোঝেন এমন নয়। শেয়ারবাজার সম্পর্কে নিত্য খোঁজ রাখাও সম্ভব নয়। এই অবস্থায় অনেকই ঝুঁকছেন মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। কারণ তাতে ঝুঁকিটা কম। মনে করুন, আপনি যে ১০০০ টাকা বিনিয়োগ করলেন এমন আরও ১০০০ জন একই অঙ্ক বিনিয়োগ করলেন। এবার মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা মোট ১,০০০,০০০ টাকা পেল। নিজেদের খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ছোট-বড় মিলিয়ে হয়তো ১২টি সংস্থায় বিনিয়োগ করল। পরের মাসে হয়তো কম লাভজনক সংস্থায় কম বিনিয়োগ করে বেশি লাভজনক সংস্থায় বেশি বিনিয়োগ করল। এই ভাবে পেশাদার সংস্থা আপনার টাকা এমন ভাবে বিনিয়োগ করবে, যাতে আপনার বিনিয়োগ যথাযথ ভাবে বাড়তে থাকে।
বিভিন্ন ব্যাঙ্কও এখন মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবসা করছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস অফ ইন্ডিয়া বা অ্যাম্ফির তথ্য অনুযায়ী, গত দু’বছরে লাফিয়ে বেড়েছে মিউচুয়াল ফান্ডে আমানতের অঙ্ক। অ্যাম্ফির সর্বশেষ রিপোর্ট অনুয়ায়ী, এপ্রিলের শেষ দিন অবধি অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট (এইউএম) ২৩.২৬লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে।
প্রশ্ন হল কোথায়, কী ভাবে বিনিয়োগ করবেন। যাঁরা বিমা-এজেন্ট, তাঁদের অনেকেই এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তা ছাড়া ইন্টারনেটে একবার সার্চ করে দেখে নিতে পারেন, কী ধরনের ফান্ডে কী হারে রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে কতটা রিটার্ন পাবেন, সে ব্যাপারে কোনও গ্যারান্টি কোনও মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা দেয় না। বিনিয়োগের ঝুঁকি এখানেও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন বিনিয়োগ করবেন? একটু ইন্টারনেট ঘাঁটলেই দেখতে পাবেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদে সুদের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে রিটার্ন বেশি।
অ্যাম্ফির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি-তে বিনিয়োগ বাড়ছে বেশ দ্রুত হারেই। এপ্রিলের কথাই ধরা যাক। ২০১৬-১৭ সালে ৩,১২২ কোটি টাকা এসআইপি বাবদ সংগ্রহ হয়েছিল, ২০১৭-১৮ সালে এই অঙ্ক ছিল ৪,২৬৯ কোটি টাকা এবং এ বছর এপ্রিল মাসে বিনিয়োগ হয়েছে ৬,৬৯০ কোটি টাকা।
ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদের হার কমায় আগ্রহ বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডে
ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে যেমন রেকারিং ডিপোজিট করা যায়, প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নির্দিষ্ট সময় ধরে জমা করতে হয়, এখানেও তাই। রেকারিং ডিপোজিট করার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে গেলে আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়, মেয়াদ শেষে কত টাকা হাতে পাবেন। এখানে অবশ্য তেমন কোনও গ্যারান্টি নেই। তবে কী ধরনের খাতে বিনিয়োগ করলে কেমন রিটার্ন আসছে, তা ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখে নিতে পারেন যে কেউ। ঝুঁকি কমানের জন্য একটি ফান্ডে পুরো টাকা বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ করাই শ্রেয়। ৫০০ টাকা থেকে বিনিয়োগ শুরু করা যায়। তবে বিনিয়োগ করার সময় অবশ্যই বুঝে নেবেন, আপনি কোনও পনজি স্কিমে টাকা দিচ্ছেন না তো? সারদা, রোজ ভ্যালি, এমপিএস প্রভৃতি হল পনজি স্কিম। তাই বিনিয়োগ করার আগে খোঁজ নিন, হাতের কাছে স্মার্ট ফোন থাকলে একবার গুগল করে দেখে নিতে পারেন।
মিউচুয়াল ফান্ডে সব সময়ই দীর্ঘ মেয়াদি রিটার্নের দিকে নজর দেওয়া দরকার। এ সচেতনতা-মূলক প্রচারেও সে কথাও বলা হয়। তাই এক মাস বা তিন মাসের রিটার্ন নয়, পাঁচ বা দশ বছরের রিটার্নের তথ্য দেখে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে টাকা রাখলে যে সুদ পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ থেকে।
যে সরকারই আসুক, ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে আমানতের উপরে সুদের হার বাড়বে, এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই ভাবনা-চিন্তা করে বিনিয়োগ করাই ভালো। শেয়ারবাজার সম্বন্ধে ধারনা না থাকলে মিউচুয়াল ফান্ড ও এককালীন বিনিয়োগের ঝুঁকি না নিতে চাইলে এসআইপি করাই বাঞ্ছনীয়।

