সৌদি সাংবাদিকের রহস্য মৃত্যুতে মধ্যে প্রাচ্যের পরিস্থিতি কতটা জটিল হবে

মনে করা হচ্ছে জামাল খাশোগ্গিকে দূতাবাসের মধ্যে সৌদি এজেন্টরা খুন করেছেন

 |  4-minute read |   09-10-2018
  • Total Shares

তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক এমনিতেই বেশ খারাপ। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগ্গির রহস্য মৃত্যুর পর সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসের ভিতরে খাশোগ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার খাশোগ্গিকে (৫৯) শেষ বারের দেখা গিয়েছিল যখন তিনি দূতাবাসে প্রবেশ করছিলেন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে এবং তাঁকে খুঁজে বের করতে তুরস্ক প্রশাসন এখন প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। তুরস্কের পক্ষ থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে সৌদি দূতাবাসের মধ্যেই সৌদির 'এজেন্টরা' খাশোগ্গিকে হত্যা করেছে এবং তাঁর মৃত্যদেহ লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।

চিত্রনাট্যের মধ্যে আগাথা ক্রিস্টির রহস্য রোমাঞ্চকর সিরিজের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আর, এ সবের মাঝে রিয়াধ ও আঙ্কারার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে।

body_100918053432.jpgশেষ বারের জন্য খাশোগ্গিকে দূতাবাসে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল [ছবি: এপি]

গোটা বিশ্বজুড়েই খুনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ, সাংবাদিক হিসেবে খাশোগ্গির বেশ নাম ডাক ছিল এবং আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর বেশ ভালো যোগাযোগ ছিল। সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের চক্ষুশূল হওয়ার ফলে আশঙ্কা করা গিয়েছিল যে সৌদি প্রশাসন তাঁর উপর আক্রমণ করতে পারে। সেই কারণে খাশোগ্গি ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। রাজপরিবারের ক্ষমতা ও দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশ করে সৌদি প্রশাসনের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন এই সাংবাদিক।

এই খুনের ঘটনার পর রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে তুরস্ক সরকার। অনেকেই জানেন যে সম্প্রতি মধ্যে প্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতা দখলের লড়াই তুরস্ক ও সৌদির মধ্যে বিবাদ চরমে পৌঁছিয়েছে। ইতিমধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে কূনৈতিকভাবে সৌদিকে চাপে ফেলতে উদ্যত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে, ৪ অক্টোবর খাশোগ্গি নিরুদ্দেশ হওয়ার পর আঙ্কারার সৌদি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল তুরস্কের বিদেশ মন্ত্রক। পাশাপাশি, তুরস্কের শাসকদলের মুখপাত্র ওমের সেলিক এই ঘটনায় সরাসরি রিয়াধকে আক্রমণ করেছেন।

বলা হচ্ছে সৌদি থেকে একটি ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি তুরস্কে এসেছিল। সেই দলে, কূটনীতিবিদ, ছাড়াও নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা ছিল। মনে করা হচ্ছে, এই দলটি সাংবাদিককে খুন করে তাঁর মুখ বন্ধ করেছে।

body1_100918053529.jpgতুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই সৌদিকে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন [ছবি: রয়টার্স]

উল্টোদিকে, রিয়াধ তুরস্ককে ঘটনাটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলেছে। এমনকি ইস্তানবুলে সৌদির দূতাবাসের ভিতরে তল্লাশি করবারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তদন্তে যে প্রশ্নটি প্রথমেই উঠছে তা হল খাশোগ্গি ইস্তানবুল গিয়েছিলেন কেন?

বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, তুরস্কের নাগরিক হাটিস সেনগিজ়কে বিয়ে উপলক্ষেই ইস্তানবুল গিয়েছিলেন খাশোগি। তিনি যে বিবাহ বিচ্ছিন্ন, তা প্রমাণের জন্য তাঁকে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হত ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে। তাঁর প্রেমিকা হাটিস দাবি করেছেন যে তিনি দূতাবাসের বাইরে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু খাশোগ্গি দূতাবাসে প্রবেশ করলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসেননি।

তুরস্কের প্রশাসন যতই খাশোগ্গি খুন হয়েছে বলে দাবি করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও খুনের তত্ত্ব মানতে রাজি নয়। মার্কিন প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে বিষয়টির উপর তারা নজর এবং খাশোগ্গি যে খুন হয়েছে সে বিষয় তারা এখনও নিশ্চিত নয়।

ওয়াশিংটন পোস্টে কর্মরত ছিলেন খাশোগ্গি এবং সেখানে পত্রিকার "গ্লোবাল ওপিনিয়ন" কলমে তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত।

এছাড়াও তিনি আল হায়াত ও আল ওয়াতানের মতো পত্রিকাগুলোর মুখ্য সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর সঙ্গে সৌদির গোয়েন্দা বিভাগের সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। ওই অঞ্চলের হালহকিকত সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান সৌদির গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মজবুত করেছে। দেশের গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছে থেকে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে পরমর্শ নিতেন।

body2_100918053621.jpgখাশোগ্গি রহস্যের পিছনে কার হাত রয়েছে [ছবি: এপি]

পরবর্তীকালে প্রিন্স তুর্কি যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডে সৌদির রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করে ছিলেন। সেই সময় তিনি খাশোগ্গিকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

সাংবাদিক হিসেবে তিনি একাধিকবার আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে দেখা করেছেন। আফগানিস্তানের তোরা বোরাতে লাদেন যখন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তখনও খোশাগ্গি লাদেনের সঙ্গে দেখা করেন। শুধু ইন্টারভিউ নেওয়া নয়, খাশোগ্গি নাকি লাদেনকে সন্ত্রাসবাদ ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়ে ছিলেন। নির্ভীক সাংবাদিকতায় খাশোগ্গির জুড়ি মেলা ভার।

যা বোঝা যাচ্ছে সৌদিতে মানাবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে লিখে তিনি প্রমান করতে চেয়েছিলেন এমবিএস কতটা অত্যাচারী শাসক। এর ফলে তাঁকে সৌদি-বিরোধী আখ্যা পেতে হয়েছিল।

খাশোগ্গি ছাড়াও সৌদির রাজপুত্রের বিরাগভজনের তালিকায় অনেকেই রয়েছেন।

এমবিএস সমালোচকরা বলে থাকেন সৌদির অবস্থা আতঙ্কজনক। তাঁরা মনে করেন খাশোগ্গিকে হত্যা করে এমবিএস একটা বার্তাই পাঠালেন - বিরোধিতা করলে বিরোধিতার পরিনাম এরকম হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার ফলে এমবিএস নিজের সম্পর্কে বেশ আত্মবিশ্বাসী। সম্প্রতি তিনি হয়ত ইসরাইলি গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন। কারণ এই রহস্যে পেশাদারদের হাত রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সৌদির কাছ থেকে এধরণের আরও কিছু ঘটনা আশা করা যেতেই পারে।

এ মাসের ১৩ তারিখে ষাট বছরে পা দিতেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী খাশোগ্গি।

তাঁর মৃত্যুতে সৌদি-তুরস্ক সম্পর্কে যে আরও অবনতি ঘটবে তা বলাই বাহুল্য।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment