জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো কী ভাবে পিরপঞ্জাল শ্রেণীর দক্ষিণে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে

উত্তর কাশ্মীর ক্রমশ সন্ত্রাস মুক্ত হচ্ছে, কিন্তু দক্ষিণ কাশ্মীরে মাথাচাড়া দিচ্ছে জঙ্গিরা

 |  3-minute read |   05-11-2018
  • Total Shares

গত বৃহস্পতিবার কিশত্বর অঞ্চলের জনপ্রিয় বিজেপি নেতা অনিল পারিহার ও তাঁর ভাই অজিতকে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা গুলি করে হত্যা করেছে। স্থানীয় তপল গলি মহল্লায় পারিহারদের বাড়ি। সেদিন দোকান থেকে ফেরার সময় আততায়ীরা তাঁদের গুলি করে হত্যা করে।

এই হত্যাকাণ্ড অবশ্য কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। বছরের শুরুতেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে জঙ্গি অনুপ্রবেশে সাহায্য করতে সীমান্তের ওপার থেকে গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ন্ত্রণকারী ও মেন্টররা এবার সন্ত্রাস ছড়াতে চায় জম্মু অঞ্চলের পিরপঞ্জাল শ্রেণীর দক্ষিণেও।

গত এক দশকে দেশের নিরাপত্তা কর্মীরা জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাস দমন ও নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল হয়েছেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁরা এতটাই সফল হয়েছেন যে দীর্ঘদিন সন্ত্রস্ত হয়ে থাকা জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে - বিশেষ করে জওহর টানেলের দক্ষিণের অংশটি এখন বছরের সিংহভাগ সময়ই নিরুপদ্রবে থাকে। অমরনাথ যাত্রার সময়েও অনভিপ্রেত ঘটনা খুব একটা ঘটে না। বছরের শুরুতে সুনজওয়ান সেনা-শিবিরে আক্রমণ ছাড়া মোটামুটি গোটা ছয়েক বড় ধরণের ঘটনা ঘটেছে এ বছর। বৈদ্যুতিন যন্ত্রের সাহায্যে নজরদারি, গোয়েন্দাদের অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ, অনুপ্রবেশ রোখার মরিয়া চেষ্টা ও অনেক বোশি মাত্রায় পুলিশি তল্লাশি - সব মিলিয়ে এই অঞ্চল অন্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেকটাই শান্তিপূর্ণ।

body_110518062834.jpgদক্ষিণ কাশ্মীরে সন্ত্রাস মাথা চারা দিয়েছে [ছবি: রয়টার্স]

গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, অগস্টের মাঝামাঝি পাকিস্তান একটি সন্ত্রাস বিষয়ক অডিট করেছিল। সেই অডিটে দেখা যাচ্ছে যে আইএসআইয়ের মাথারা নাকি তৃণমূল স্তরের কর্মীদের উপর খুশি নন। রিপোর্টে বলা হচ্ছে প্রায় এক ডজন জঙ্গি সংগঠনের আঞ্চলিক নেতাদের সরিয়ে সরাসরি দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে আইএসআইয়ের মাথাদের হাতে। লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদের মতো সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও এই একই ধারা বলবৎ হতে দেখা যাচ্ছে। নতুন কমান্ডারদের কাজ করে দেখানোর জন্য তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। খুব সম্ভবত, অপারেশন অল আউটের (২০১৭ সালের অগস্ট মাস থেকে অন্তত ২০০জন জঙ্গি নিহত হয়েছে) ফলেই এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হচ্ছে আইএসআই।

এর ফলে জম্মু অঞ্চলে নিজেদের স্ট্রাটেজিও পরিবর্তন করেছেন জঙ্গিরা। অনুপ্রবেশ খুব একটা হচ্ছে না বা এদিক থেকেই খুব বেশি লোককে সীমান্ত পার করানো হচ্ছে না। এর আগে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে স্থানীয় ছেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। কিন্তু এখন জঙ্গি প্রশিক্ষকদের এদেশে পাঠানো হচ্ছে জম্মুর স্থানীয় ছেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তাই তো জম্মু অঞ্চলে জঙ্গি দলগুলোর তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বল্প পরিমাণ অস্ত্র সমেত এদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা করা হয়েছে। শেষ কয়েক বছরে এটাই যেন নিয়ম হয়ে উঠেছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গিরা বাড়তি কিছু সুবিধা পায়। তাই তো কাশ্মীরের এই অঞ্চলে 'নতুন ধারা'র সন্ত্রাসবাদ ফুলেফেঁপে উঠছে। এই অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক গঠন এমনই যে খুব সহজেই আত্মগোপন করে থাকা যায়। শহরগুলোতে জনসংখ্যা যথেষ্ট বেশি এবং এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো।

body1_110518063108.jpgদক্ষিণ কাশ্মীরে জঙ্গিরা বাড়তি কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে [ছবি: রয়টার্স]

এছাড়া একটা সহমর্মিতার বিষয়ও রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ স্থানীয় সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়। স্থানীয়রা কিছুটা হলেও সমর্থন করছে। কিন্তু অনেকেই বলছেন যে এই অঞ্চলে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অনেকেরই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে বছরের শুরুতে সুনজোয়ান সেনা শিবিরে আক্রমণের পর। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রোহিঙ্গারা নাকি সন্তাসবাদীদের পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। অনেক সংবাদমাধ্যমে আবার এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে আক্রমণের আগে রোহিঙ্গারা নাকি সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়ও দিয়েছিল।

একটা বিষয় যদিও এখনও প্রমাণ করা যায়নি, কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে ২০১৫ সালে নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে নিহত জঙ্গি আব্দুর রহমান আরকানি (যিনি ছোটা বৰ্মী নামে পরিচিত ছিলেন) মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা। গোয়েন্দারা দাবি করছেন যে এখন জঙ্গি সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের সময় 'বৰ্মী' শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার করে।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বেশ কঠিন। কখনও কখনও তা আবার বিরাট যুদ্ধের আকার ধারণ করে। নিরাপত্তা রক্ষী ও প্রশাসনের দায়িত্ব সন্ত্রাসবাদ যেন মাথা চাড়া দিয়ে না ওঠে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment