সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ, তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কেকেআরের
পাশে বসা রাজস্থান সমর্থক আঙ্কেল হটাৎই কেকেআর সমর্থক হয়ে গেলেন
- Total Shares
বাঘাযতীন থেকে ইডেন গার্ডেন্সের দূরত্ব আর কতই বা হবে? কিন্তু বুধবার সন্ধ্যাবেলা সেই পথটা যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না। একে তো প্রথমবার আইপিএল দেখতে ইডেনে যাচ্ছি। তার উপর আবার কেকেআরের মরণ-বাঁচন ম্যাচ। জিতলে আবার শুক্রুবার খেলবে, হারলে এ বছরের আইপিএল থেকে চিরবিদায়। এই ম্যাচটা তো শুধু দীনেশ কার্তিকরা খেলবেন না। আমাকেও খেলতে হবে। জিতিয়ে ফিরতে পারলে বন্ধুদের মাঝে আমি হিরো, আর হারলে বন্ধুরা আমাকে নিয়েও (যারা মাঠে যেতে পারেনি) হাসাহাসি করবে।
কেকেআর ব্যাট করতে নেমেছে। আমিও বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্যালারিতে জাঁকিয়ে বসিয়েছি। কিন্তু এ কী? শুরুতেই, ধাক্কা। ৪০ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলল কেকেআর। এর মধ্যে আমি আলাদা করে নীতীশ রানার উইকেটটার কথা বলব। যে ভাবে, ওই পরিস্থিতি আর্চারের বলে লোপ্পা ক্যাচ তুললেন তিনি তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আমার দুর্ভাগ্য। যে ব্লকে আমরা বসেছিলাম সেই ব্লকে বেশ কিছু আঙ্কেল রাজস্থানের জার্সি গায়ে রাজস্থানকে সমর্থন করছিলেন। গোটা ব্লক যখন কেকেআরের এই পরিণতি দেখে হতবাক হয়ে চুপ করে বসে আছে, তখন এই আঙ্কেলরা রীতিমতো লম্ফ-ঝম্প শুরু করে দিলেন। দেখে গা শিরশির করে উঠল। মনে মনে ভাবলাম, "এর বদলা নিতেই হবে।"
কার্তিক-রাসেল জুটির উপর ভর করে কেকেআর ১৬৯ রানে পৌঁছাল
ততক্ষণে দীনেশ কার্তিক ও শুভম গিল খেলাটা কিছুটা হলেও ধরে ফেলেছেন। প্রথমবার আইপিএল খেলতে নেবে বেশ কয়েকটি ম্যাচে শুভম কেকেআরকে উদ্ধার করেছেন। সত্যিই তিনি প্রতিভাবান। উল্টোদিকে, আমার অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। মনে মনে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যে কার্তিক আজ আবার কেকেআরের দিকে ম্যাচ ঘোরাবে। ২৮ রান করে আউট হলেন শুভম। নামলেন আন্দ্রে রাসেল।
ব্যাস, ইডেন আবার জেগে উঠল। কার্তিক-রাসেল জুটির উপর ভর করে কেকেআর ১৬৯ রানে পৌঁছাল। কার্তিক ৫২ করেছেন আর রাসেলের ব্যাট থেকে এল অপরাজিত ৪৯। কার্তিক আর রাসেল যখন ব্যাট করছিলেন তখন সময়টা কী ভাবে কেটে গেল বুঝতে পারেনি। শুধু তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে গেছি।
ঘোর ফিরল রাজস্থান ইনিংসের শুরুতে। ১৬৯ রান রুখতে পারবে তো কেকেআর। পাশে বসা রাজস্থান সমর্থক আঙ্কেলকে একবার দেখে নিলাম। বেশ গদগদ দেখাচ্ছে তাঁকে। আর শুরুতেই বিপর্যয়। রাহানে আর ত্রিপাঠী অনবদ্য ক্রিকেট খেলতে শুরু করে দিলেন। কার্তিক ফিল্ড ও বোলার পরিবর্তন করেও কিছুতেই বাগে আনতে পারছিলেন না। দ্রুত অধৈর্য্য হয়ে পড়ছিলাম। তবে একটা জিনিস ভালো লাগল। দর্শকরা কিন্তু রাজস্থানের ব্যাটসম্যানদের বাহবা জানাতে ভোলেননি।
ম্যাচটা কেকেআরে দিকে ঘোরাতে শুরু করে দিলেন কুলদীপ ও পীযূষ
অবশেষে স্পিনার এল। এবং ম্যাচটা কেকেআরে দিকে ঘোরাতে শুরু করে দিলেন কুলদীপ ও পীযূষ। মাঝের ওভারগুলোতে তাঁরা একবারে রান তুলতে দেননি রাজস্থানের ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু সঞ্জু স্যামসন তখনও ক্রিজে। যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচ রাজস্থানের পক্ষে চলে যেতে পারে। ৫০ রান করে পীযূষের বলে যখন ক্যাচ তুললেন স্যামসন ইডেনের গ্যালারি গর্জে উঠেছে। আমিও উত্তেজনায় টগবগ করছি। কেকেআরের জয় তখন নিশ্চিত মনে হচ্ছে।
কী আশ্চর্য! রাজস্থান সমর্থক সেই আঙ্কেল তখন কলকাতার সমর্থক হয়ে উঠেছেন। জার্সির পিছনে 'আরআর' লেখাটি কেটে তার উপর রং দিয়ে 'কেকেআর' লিখে ফেলেছেন তিনি। যাক, তাহলে আমার আর বদলা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল না।
অবশেষে ম্যাচ জিতল কেকেআর। এখন আমিও বন্ধুদের বলতে পারব যে প্রথমবার আইপিএল ম্যাচ দেখতে গিয়ে আমি কেকেআরকে জিতিয়ে ফিরেছি।
এখন প্রশ্ন হল, কেকেআর কি চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে? সামনে দু'দুটি কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমি আশাবাদী কেকেআরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
আপাতত আমার লক্ষ শুক্রবারের হায়দরাবাদ ম্যাচ। বাবার কাছে টিকিটের জন্য আগাম বায়না করে রেখেছি।

