দুষ্কৃতীরা শাসক আশ্রিত, তাই মহানগরীর বুকে গুলিবৃষ্টি চলতেই থাকবে

শাস্তি অবধারিত অবধারিত বুঝে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায় পুলিশ

 |  3-minute read |   11-07-2018
  • Total Shares

কেন কিন্ত এই দলটার প্রাণকেন্দ্রবছর তিনেক আগের ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার একটি এলাকায় মধ্যে রাতে দুটি দুষ্কৃতী দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রায় শেষ রাত অবধি চলা এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে মোট তিনটে থানার পুলিশকর্মীদের পথে নামতে হয়। ভোর রাতে দুই পুলিশকর্মী ছোটেন এলাকার এক 'প্রভাবশালী' দুষ্কৃতীর বাড়িতে। পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছিল যে এই দুষ্কৃতীর প্ররোচনায় ওই দিনের ঝামেলার সূত্রপাত। এর দিন দু'য়েকের মধ্যে সেই দুই পুলিশ কর্মীকে কম্পালসরি ওয়েটিং-এ পাঠানো হয়। খবরের প্রকাশ, স্থানীয় এক কাউন্সিলরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের  এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনার মাসকখানেক বাদে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা সেই কাউন্সিলরের হয়ে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন যে থানার এক পুলিশকর্মী প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় ওই দুষ্কৃতীর অফিসে বসে থাকতেন আর কাউন্সিলর সেই অভিযোগই করেছিলেন পুলিশ প্রশাসনকে।সেই নেতার বক্তব্য,  "প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ওই দুষ্কৃতীর অফিসে ছুটে যেতেন ওই পুলিশকর্মী। আর, আজ সেই পুলিশকর্মীই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে তাঁর বাড়ির দরজা ভাঙচুর করছেন। কাউন্সিলর বিষয়টি পুলিশের নজরে এনে ঠিকই করছেন।"

কাউন্সিলরের অভিযোগ যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে সেই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই উচিৎ ছিল। কিন্তু তাই বলে এমন একটা সময় কেন যখনও সেই দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়নি। তাই বলে একজন নয় দু'জন (যাঁরা সেদিন দুষ্কৃতীর বাড়িতে গিয়েছিলেন) পুলিশকর্মীকে শাস্তি দেওয়া হল কেন? এর পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন থানার কর্মীদের একটিই বার্তা পাঠালেন - ওই দুষ্কৃতী ধরা পড়ুক তা তাঁরা পছন্দ করছেন না।

২০১৫ সালের জুলাই মাস। হরিদেবপুরের এক পানশালায় এক নর্তকীর কাছে পছন্দের গান শোনাকে কেন্দ্র করে এলাকার দুটি দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বাধে পানশালার মধ্যে। এর ঘণ্টাখানেক পরে কবরডাঙ্গার মোড়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। চলে মধ্যরাত অবধি। ঘটনায় নিহত হন একজন, আহত হন আরও দু'জন।

body_071118050743.jpgদুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে পুলিশের বদলি অবশ্যম্ভাবী

   

এর পর একে একে গ্রেপ্তার হন নান্টে ঘোষ, কালী দুর্গার মতো এলাকার প্রভাবশালী দুষ্কৃতীরা যারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে যে এই দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে কেন এত বড় ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হল পুলিশকে? যেখানে এদের প্রত্যেকেরই বিরুদ্ধে ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ বর্তমান।

পুলিশ মহলের খবর অনুযায়ী এই দুষ্কৃতীদের পিছনে শাসক দলের কয়েক জন প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে। সে কারণেই বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া ওই পানশালা চলছিল। আইনে নিষিদ্ধ হলেও নিয়মিত বসত নাচের আসর। পানশালাটির সামনেই হরিদেবপুর থানার একটি কিয়স্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই পানশালায় ‘বেআইনি’ কাজকর্ম চালাতে কোনও দিনও কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।

এই ঘটনার মাস সাতেক আগে হরিদেবপুর থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর ওই ঘটনায় জড়িত দুই দুষ্কৃতী কালী-দুর্গার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উঠে-পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু এর ২৪-ঘণ্টার মধ্যেই সেই সাব-ইন্সপেক্টরের বদলির নির্দেশ আসে। লালবাজার থেকে বিভাগীয় ডিসি-র কাছে বদলির নির্দেশ এসেছিল এবং এই ডিসি না চাইলেও এই নির্দেশ মানতে বাধ্য হন।

এক্ষেত্রেও, এই সাব-ইন্সপেক্টরের সহকর্মীদের কাছে বার্তাটা বেশ পরিষ্কার - পুলিশ প্রশাসন চায় না দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পুলিশ প্রশাসন চায় না মানে আসলে শাসক দল চায় না।

অগত্যা?

যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কখনও হরিদেবপুর, কখনও কসবা বা কখনও বেনিয়াপুকুর শহর জুড়ে এই দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর দাপাদাপি চলছে। কখনও মধ্যরাতে, কখনও আবার দিনের আলোতেই চলছে গুলিবৃষ্টি। চলছে বোমাবাজি। আর, শুধুমাত্র ঘটনার পরিণাম ভয়ঙ্কর হলেই ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। অন্যথায়, খুলেআম ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই দুষ্কৃতীরা।

body1_071118050846.jpgসামনে লোকসভা নির্বাচন, এখন কি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব

এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়?

এই দুষ্কৃতীরা থাকে শাসক দলের ছত্রছায়ায়। যতক্ষণ না শাসক দল চাইছে ততক্ষন এদের টিকি ছোওয়ার ক্ষমতা নেই পুলিশের। থানার পুলিশকর্মীদের তো নেই, লালবাজারের শীর্ষকর্তাদেরও নেই।

এক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, "যতক্ষণ না দুষ্কৃতীরা পুলিশকে ভয় পাবে ততক্ষন শহর জুড়ে এই গুলিবৃষ্টি চলতেই থাকবে। এখন অবশ্য পুলিশরাই এই শাসক আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ভয় পেয়ে চলছে। কে জানে, ব্যবস্থা নিতে গিয়ে আমাদের লঘু পাপে গুরু দণ্ড হয়ে যাবে না তো?"

এখন প্রশ্ন হল, শাসক দল কী ভাবছে? - সামনে লোকসভা নির্বাচন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment