ঠেক থেকে সরাসরি: রাজ্য থেকে কে ক’টা আসন পাবে?

অন্য কোথাও না হোক, চায়ের দোকানে সিপিএম, মানে বামপন্থীদের দেখা পাবেন

 |  4-minute read |   21-01-2019
  • Total Shares

“তা হলে এবার এখান থেকে, মানে এই রাজ্য থেকে বিজেপি ক’টা পাবে? ২০-২২ না হোক, অন্তত ১৩-১৪টা?”

“বিজেপি যদি ১৩-১৪টা আসন পায়, তা হলে তৃণমূল কটা পাবে?”

ভীমের চায়ের দোকানে রোজই নানা বিষয়ে তর্ক বাধে। সামনে ভোট। তাই খান-কতক খবরের কাগজ নিয়ে তর্কাতর্কি হয়। ভীমদা তাঁর দোকানে একটাই খবরের কাগজ রাখেন, বাংলা কাগজ। তবে বাকিরা নিজেদের পছন্দের খবরের কাগজ নিয়ে এই চায়ের দোকানে প্রভাতী আড্ডা দেন। হাওড়া শহরের চায়ের দোকানের আড্ডা চিরপরিচিত। কোনও কোনও দোকান একশো পেরিয়েছে। দোকান বদলেছে, দোকানিও। আড্ডাটা বদলায়নি।

india-tea_012119015721.jpg চায়ের দোকানে আড্ডা। (উপস্থাপনামূলক চিত্র/রয়টার্স)

আজকাল রাস্তাঘাটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেমন কথা শোনা যায় না, কারণ পাড়ায় পাড়ায় সকলেই তৃণমূল হয়ে গেছে সিপিএম থেকে, অবশ্য এ রাজ্যে কোনও দিন পিএমকে, মানে দক্ষিণ ভারতের পাট্টালি মক্কল কাটচি যদি সরকার গড়ে তা হলে পাড়ায় পাড়ায় সবাই পিএমকে হয়ে যাবে, সে ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হতে পারে – বাঙালি মাত্রই আম খেতে ভালোবাসে আর ওদের দলের চিহ্ন তো আম, সেই জন্য!

স্রোতের বিপরীতে যাওয়া, কথা বলার লোকও চিরকাল পাড়ায় পাড়ায় থেকে যাবে। না হলে আর তর্ক জমবে কী করে! এই বাজারে অন্য কোথাও না হোক, চায়ের দোকানে সিপিএম, মানে বামপন্থীদের দেখা পাবেন।

কানুদা একটু ভারিক্কি ধরনের মানুষ। তিনিই রাজ্যের বিজেপির ভবিষ্যৎ জানতে চান। আর শ্যামল পুরোপুরি তৃণমূল হয়ে গেছে ২০১২-১৩ নাগাদ। শ্যামলই বলল, “বিজেপি কোথায় কোথায় আসন পাবে বলুন তো? আপনার কী মনে হয়, কোন কোন আসন পাবে?”

কানুদা গম্ভীর হয়েই বললেন, “দিলীপ ঘোষের কথা না হয় বাদই দিলুম, অমিত শাহ যে বলছেন, কিছু তো একটা হিসাব কষেই বলছেন। ত্রিপুরায় তো করে দেখিয়েছে। তা ছাড়া এখন তো আবার মুকুল রায়ও আছে। ও তো ভোট-টা বোঝে। ওরা ২১-২২টা বলছে, আমি তার চেয়ে কমিয়ে ১৩-১৪ করেছি। তা তোমার হিসাবটা কি?”

t1_012119015930.jpgশান্তির জন্য পরিবর্তন: পরিবর্তন হয়, শান্তি ফেরে কি? (ছবি: ডেইলিও বাংলা)

“শুনুন কানুদা, আমাদের দিদি বলছেন ৪২টার মধ্যে ৪২টাই পাবেন। এখানে হিসাবের কিছু নেই। আপনার দিলীপদা আর অমিতদা কোন ২২টা ধরেছেন বলুন, আর আপনিই বা তার থেকে ৭-৮টা বেদ দিলেন কেন?”

এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কানুদারপক্ষে কঠিন নয়, কিন্তু নাম করে আসনগুলো জিজ্ঞাসা করতেই তিনি মুশকিলে পড়লেন। তবে তাঁর পাল্টা, “কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার জন্য বিজেপির আসন কমলে রাজ্যে কী ভাবে তৃণমূল ৪২ টা পাবে? তোমাদের দিদি তো আসামেও ২টো আর ঝাড়খণ্ডেও কয়েকটা আসন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন ভাবছেন!”

ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে শ্যামলের জবাব, “রাজ্যে সাড়ে সাত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও তো পঞ্চায়েতে অতগুলো আসন পেল!”

ফোঁস করে ওঠেন অমলদা। বয়স্ক লোক, এখনও পুরোনো দিনের ইংরেজি খবরের কাগজ পড়েন। “সে তো রিগিং করে, কাউকে ভোট দিতে না দিয়ে!”

শ্যামল গলা চড়ায়, “আপনারা তো ৭৭ সাল থেকে জিতে আসছেন, তখন তো আপনাদের নেতারা বলতেন বিরোধীদের হয়ে কি আমরা প্রার্থী দিয়ে দেব! আর এখন যদি বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারে তা হলেই ভায়োলেন্স-রিগিং! আপনার মুখে এসব কথা মানায় না অমলদা। নতুন কেউ আসছে আপনাদের দলে? প্রতি বছর শীতকালে তো সমর্থক কমছে!”

বয়স্কদের মৃত্যুর সঙ্গে দলের সদস্যসংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ ভালো ভাবে নেওয়ার কথা নয়। তবে এই ধরনের আড্ডায় এ সব চলে। কেউ কিছু মনে করে না। অমলদা বলেন, “তোমার বয়স কত? কী বোঝ রাজনীতির? পড়াশোনা করেছ রাজনীতি নিয়ে?”

দু’জনকেই থামালেন কানুদা। পুরোনো কথা ছাড়ুন, “অমলদা, এ বার আপনারা রাজ্য থেকে কটা সিট পাবেন বলুন তো? আন্দাজ...”

“একটাও পাবে না।” শ্যামল কাউকে বলারই সুযোগ দেয় না।

অমলদাও সেই সুযোগ নেন। ওই তো, “শ্যামল তো বলেই দিল, এখন তো ওরাই ভোট দিয়ে দেয়। আমরা সাড়ে চৌত্রিশ বছরে কোনও দিন ৪২টা আসন পাওয়ার কথা ভাবিনি। উন্নয়নের এত জোয়ার ছিল না তো! এখন তো শুনছি চাঁদ থেকে চিনের প্রাচীর নয়, রাজ্যের উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে।”

“হচ্ছে বৈকি, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী করছেন, তাই হচ্ছে। আপনারা করেননি, তাই হয়নি।”

“হ্যা, শুধু হচ্ছে না, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় হচ্ছে। সিঙ্গুরে শিল্প বন্ধ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়, এখন চাষ হচ্ছে না সেটাও তো মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। তোমাদের আমলে চপশিল্প ছাড়া আর কী শিল্প হয়েছে?” অমলদার কথা শেষ হতে না হতেই শ্যামলের পাল্টা, “আপনারা শিল্প বন্ধ করেছেন একটার পরে একটা। রাজ্যের বদনাম করেছেন।”

t3_012119020047.jpgথেকে যায় আড্ডার রেশ। (ছবি: ডেইলিও বাংলা)

দোকানি বয়স্ক ভীমদা সাধারণ ভাবে আলোচনায় থাকেন না, তবে মাঝেমধ্যে ফুট কাটেন। এ বার বললেন, তা হলে শেষ পর্যন্ত কে ক’টা সিট পাচ্ছে?

কানুদা এবার আরেকটু কমিয়ে, মানে বিজেপির আসন কমিয়ে হিসাব কষতে লাগলেন, “ধর সিপিএম যদি একটা পায় আর মালদা-মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে কংগ্রেস যদি ২-৩টে পায়, বিজেপি তা কমসে কম গোটা আটেক পেলেও তৃণমূল ৩০টা মতো পাবে।”

শ্যামলের টিপ্পনি, “আপনি হিসাবটা সিপিএম থেকে শুরু না করে তৃণমূল থেকে করে দেখুন কে ক’টা পায়। সিয়োর হয়ে একটা আসনের নাম করুন যেখানে তৃণমূলের জেতার আশা নেই।”

এতক্ষণ আধভাঁড় চা খেয়ে, সেটা বেঞ্চের উপরে রেখে, হোয়াটসঅ্যাপ করছিল লালটু। সে বলল, এই সকলে শুনুন, সালোক সংশ্লেষের একটা ব্যাপক সংজ্ঞা পেলাম হোয়াটসঅ্যাপে – “শিক্ষক: সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে?

ছাত্র: যে প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মাটি থেকে জল ও পাতার ক্লোরোফিলের সহায়তায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে তাকে সালোকসংশ্লেষ বলে।”...

আড্ডা ভাঙে, বাড়ির দিকে পা বাড়ান সকলে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment