মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন: কেমন আছে পিপলি লাইভ সিনেমার সেই গ্রাম?

মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কম নয়, তবে গ্রামবাসীরা স্থানীয় বিজেপি বিধায়কের উপর ক্ষুব্ধ

 |  4-minute read |   25-11-2018
  • Total Shares

২০১০ সালে আমির খানের প্রযোজিত পিপলি লাইভ সিনেমাটি রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। কিন্তু যে গ্রামটিকে কেন্দ্র করে এই সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল সেই গ্রামটি সম্পর্কে লোকজন খুব একটা ওয়াকিবহাল নন।

এই গ্রামটির নাম সেহরা। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপাল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটি। মধ্যপ্রদেশের নির্বাচন কভার করতে গিয়ে আমি এই গ্রামটিতে গিয়েছিলাম। সিনেমার নাথা চরিত্রটি যার উপর নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে সেই রক্তমাংসের নাথার সঙ্গেও এই গ্রামেই দেখা হয় আমার।

নাথা চরিত্রটি কুঞ্জিলাল মালবীয়র উপর তৈরি হয়েছিল। তিনি একটি জ্যোতিষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৭৫ বছর বয়সে মরবেন বলে নিজের ভবিষ্যদ্বাণী নিজেই করে ফেলেন। ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা যাননি। কিন্তু তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণী সে সময়ে সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছিল। এর সাত বছর বাদে আমির খান এই বিষয়টি নিয়েই সিনেমা তৈরি করে ফেলেন।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা ২০০৩ সালের সেই দিনটির স্মৃতিরোমন্থন আজও করেন। যেদিন তাঁর মৃত্যু হবে বলে কুঞ্জিলাল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সেদিন নাকি আশেপাশের গ্রাম থেকে শয়ে শয়ে লোক তাদের গ্রামে ভিড় করেছিল। কুঞ্জিলালের ভবিষ্যদ্বাণী ফলে কিনা তা প্রত্যক্ষ করার জন্য।

body_112518023015.jpgমধ্যপ্রদেশের শেহরা গ্রামের ২০০৩ সালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিপলি লাইভ সিনেমাটি তৈরি হয় [সৌজন্যে: ইউটিউব]

কুঞ্জিলালের বয়স এখন নব্বই। বয়সের ভারে স্বাস্থ্য অনেকটাই ভেঙেছে, কিন্তু রাজ্য রাজনীতি নিয়ে এখনও তাঁর উৎসাহের অন্ত নেই।

তিনি অবশ্য কোনও দিনও পিপলি লাইভ সিনেমাটি দেখেননি।

মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের কাজে তিনি খুশি। কুঞ্জিলালের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী শুধু তাঁদের গ্রাম শেহরার উন্নয়ন করেননি, গোটা বেতুল জেলার উন্নয়ন করেছেন।

কুঞ্জিলালের এই বক্তব্য মেনে নিতেই হচ্ছে। এই গ্রামে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে আর গ্রামটির কাছেই একটি হাইস্কুলও রয়েছে। জেলা সদর বেতুল থেকে শেহরা যাওয়ার যে রাজ্য সরকার নির্মিত হাইওয়ে রয়েছে সেটিরও যথেষ্ট রক্ষণাবেক্ষণ হয়। শেহরার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। এই গ্রামে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে এবং নিকটতম সরকারি হাসপাতালটিও খুব দূরে নয়।

তাই বলে গ্রামের প্রত্যেকেই খুশি, এমন অবশ্য নয়। গ্রামের অনেকেরই অনেক অভিযোগ রয়েছে।

body1_112518023242.jpgসিনেমার নাথার চরিত্রটি কুঞ্জিলাল মালবীয়কে (বসে) কেন্দ্র করে [ছবি: লেখক]

আটাত্তর বছরের পরশুরাম দাদা যেমন বলছেন যে শেষ কয়েকটি নির্বাচনে শাসক বিজেপি ও বিরোধীরা একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পালনের কোনও উদ্যোগই নেই। পরশুরামের কথায়, "প্রতি নির্বাচনেই তারা কৃষকদের ঋণ মকুবের ও পরিস্রুত জলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। দুটি প্রতিশ্রুতির একটিও এখনও অবধি পালন করা হয়নি।"

গ্রামবাসীদের রাগ মুখ্যমন্ত্রীর উপরে যত না, তার চেয়ে ঢের বেশি স্থানীয় বিধায়কের উপরে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বেতুল আসনটি থেকে বিজেপির টিকিটে জেতার পর বিধায়ক হেমন্ত খাণ্ডওয়াল এই গ্রামে কোনও দিনও পা রাখেননি। অনুজ নামের স্থানীয় গ্রামবাসী জানালেন, "যখনই সাহায্যপ্রার্থী হয়ে আমরা ওঁর দপ্তরে যাই আমাদের বলা হয় যে উনি হয় ভোপালে, নয়ত দিল্লি কিংবা আমেরিকায় গিয়েছেন।"

কৃষকরা যে সত্যি সত্যিই সাহায্যপ্রার্থী তা তাঁদের কথাতেই বোঝা গেল।

কৃষক রামকিশোর জানালেন, "আমি আমার পরিবার নিয়ে দিন রাত হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে চলেছি। কিন্তু তাও দু'বেলা দুমুঠো অন্ন জোটে না আমাদের। চাষের খরচও আমরা কুলিয়ে উঠতে পারি না। যার ফলে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হই, এই ঋণের বোঝা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।"

body2_112518023322.jpgপানীয় জলের অভাব এই গ্রামের প্রধান সমস্যা [ছবি: লেখক]

তরুণ প্রজন্মের আবার অন্য সমস্যা।

দীপক বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছেন। সন্তোষ আবার বিসিএ কোর্সে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা আদৌ চাকরি পাবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। গ্রামের তরুণরা জানালেন যে মাত্র ১০ শতাংশ গ্রামবাসীর এখনও পর্যন্ত কর্মসংস্থান হয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস বর্তমান সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ এবং তাই তাঁরা অন্য কোনও দলকে ভোট দিতে বদ্ধপরিকর।

নিঃসন্দেহে এই গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের অভাব। গোটা গ্রামের জন্য মাত্র একটি নলকূপ যার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় গ্রামের মহিলাদের। শিশুরাও বাড়িতে জল বয়ে নিয়ে যায় মায়েদের সঙ্গে। তাই তারা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। এই নলকূপে আবার একদিন অন্তর জল পাওয়া যায়।

বছরের নির্দিষ্ট সময় সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে। লক্ষী হুকুম সিংয় জানালেন, "ফেব্রুয়ারী শেষে কিংবা মার্চের শুরুতে এই টিউবওয়েলের জল একেবারে শুকিয়ে যায়। তখন শিশুদের নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে দূরের জলাশয় থেকে জল নিয়ে আসতে হয়।"

গ্রামের অনেকই মনে করেন এই ধরণের উন্নয়নমূলক বেশ কয়েকটি প্রকল্প রাজ্য সরকার রয়েছে। তা সত্ত্বেও, সেই প্রকল্পের সুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছায়নি কারণ স্থানীয় প্রশাসক ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতায়।

তার মানে, মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কম এমন নয়। কিন্তু স্থানীয় বিধায়কের ব্যর্থতার জন্যই অনেকেই শাসক দল বিজেপি থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে।

এ বারেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতির অন্যথা হয়নি। এখন দেখতে হবে গ্রামবাসীরা কার কথায় ভরসায় রাখে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ASHUTOSH MISHRA ASHUTOSH MISHRA @ashu3page

The author is a journalist with India Today Group

Comment