মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল দাবি করে দেশের বিজ্ঞানকে হাসির খোরাক করলেন বিপ্লব দেব

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার

 |  3-minute read |   19-04-2018
  • Total Shares

বর্ষীয়ান বিজেপি নেতারা যে কতবার বিজ্ঞানকে পরিহাসের বিষয় করে তুলেছেন তা গুণে শেষ করা যাবে না। সম্প্রতি এই নেতাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব। তিনি দাবি করেছেন, ভারতবর্ষে বেশ কয়েক হাজার বছর আগেও ইন্টারনেট ও উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল।

এই বক্তব্যের পর বিপ্লব দেবকে নিয়ে উপহাস কম হয়নি। তা সত্বেও নিজের দাবিতে অনড় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। উল্টে তিনি দেশের সংস্কৃতি ও দেশের বিজ্ঞানের গৌরবজনক ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হওয়ার জন্য ভারতীয়দের দুষেছেন।

বিপ্লব দেব, সত্যপাল সিং বা হর্ষ বর্ধনরা হয়ত মনে করছেন এই ভাবেই দেশের বিজ্ঞান-ইতিহাসের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা সম্ভব। কিন্তু আদতে এর উল্টো পরিণাম হচ্ছে। ভারতীয় বিজ্ঞান গোটা বিশ্বে হাসির খোরাকে রূপান্তরিত হচ্ছে।

যেমন ধরুন, ২০১৫ সালে ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে আনন্দ বোডাস ও অমেয়া যাদব তাঁদের গবেষণাপত্রে দাবি করেছিলেন যে বৈদিক যুগেও ভারতবর্ষে জাম্বো বিমানের প্রচলন ছিল এবং এই বিমানের প্রযুক্তি এতটাই আধুনিক ছিল যে তা যে কোনও দিকে উড়তে পারত, এমনকি গ্রহান্তরেও যেতে পারত। বোডাস নিজে একজন পাইলট ছিলেন। যাদব একটি কলেজের অধ্যাপক। তাই তাঁদের গবেষণাপত্রে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যতার প্রয়োজন ছিল। তাঁরা ভৈমনিকা শাস্ত্রের উপর ভিত্তি করা একটি গবেষণাপত্র পাঠ করে এই দাবি করেছিলেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এই গবেষণাটি করেছিল। এবং এই গবেষণা কোনও মতেই ১৯০৪ সালের আগে নয়। বৈজ্ঞানিকরা যখন তাঁদের এই গবেষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তখন দক্ষিণপন্থী সমর্থকরা যুক্তি সাজিয়ে পাল্টা তর্ক না করে বৈজ্ঞানিকদের নামে কুৎসা রটাতে শুরু করে দিলেন।

body_041918065521.jpgএই বক্তব্যের পর বিপ্লব দেবকে নিয়ে উপহাস কম হয়নি, তা সত্বেও নিজের দাবিতে অনড় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

body1_041918065557.jpgকোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ ছাড়াই ভুলভাল দাবি করলে আমাদের সাফল্য হাস্যকর হয়ে উঠবে

প্রাচীন ভারত থেকে আমরা নিঃসন্দেহে প্রচুর শিক্ষালাভ করতে পারি। আমরা রীতিমতো গর্ববোধ করতে পারি। বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের বিরাট অবদান রয়েছে। ৮০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বে সুলবা সূত্র রচিত হয়েছিল যা আদতে পিথাগোরাসের সূত্রের উপর আলোকপাত করে। প্রাচীন ভারতে 'শূন্য' আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং প্রাচীন ভারত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানের শৌর্য বেশ ভালো ভাবেই লিপিবদ্ধ করা রয়েছে।

কিন্তু কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ ছাড়াই ভুলভাল দাবি করলে আমাদের সাফল্য হাস্যকর হয়ে উঠবে। আধুনিক বিশ্বেও বিজ্ঞানের অগ্রগতির বিষয় ভারতের গর্ববোধ করবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উন্নতিশীল দেশগুলোর মাঝে ভারত বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রশংসা করতেই হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি উন্নতমানের বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন। তাঁর সময়কালে তিনি কোনওদিন বিজ্ঞান কংগ্রেসে অনুপস্থিত থাকেননি এবং সবসময় সকলকে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায় গড়ে ওঠার জন্য উৎসাহিত করে গেছেন।

দুৰ্ভাগ্য, এখন বিজ্ঞান নিয়েও রাজনীতি হয়। তবে এই সমস্যা শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। মার্কিন মুলুকেও প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সরকারি খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ দেশেও বিভিন্ন সময় এ ধরণের প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছে। এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখে চেন্নাইতে এ ধরণের একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সরকারি ভাতা বাড়িয়ে জাতীয় আয়ের তিন শতাংশ করবার দাবি তোলা হয়েছিল।

আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবিপত্র রাজ্যপালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন যা শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছানোর কথা। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রী দেশের অগ্রগতির জন্য দলীয় নেতাদের বক্তব্য থেকে সরে বিজ্ঞানের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেবেন। হাজার হোক, ভুলভাল তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক তথ্য বলে প্রচার করলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয়।

আমজনতার উচিৎ রাজনৈতিক সমর্থনকে সরিয়ে রেখে দেশের অগ্রগতির জন্য বিজ্ঞানের অবদানের উপর মনোনিবেশ করা। ইতিহাস হোক বা বিজ্ঞান (যা নিয়ে ডানপন্থীরা মাঝে মাঝেই ভুলভাল মন্তব্য করেন) আমরা তর্ক বিতর্কের অধিকার কিন্তু বিশেষজ্ঞদের হাতেই ছেড়ে দেব। ভুলে গেলে চলবে না, বিজ্ঞান আমাদের দেশের অগ্রগতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। তাই বিজ্ঞান নিয়ে এই ধরণের মন্তব্য আদতে জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MADHURI DANTHALA MADHURI DANTHALA @madhuism_

The author is a political analyst based out of Bengaluru.

Comment