অত্যাধুনিক মাঝেরহাট সেতু নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের ম্যানুয়াল এ দেশে নেই

অত্যাধুনিক এই সেতু দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের ম্যানুয়াল এ দেশে নেই

 |  2-minute read |   06-09-2018
  • Total Shares

যে কোনও দুর্ঘটনার পিছনে অনেকগুলো করে কারণ থাকে। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পিছনেও একাধিক কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি অভ্যন্তরীণ (ইন্টারনাল) এবং কয়েকটি বাহ্যিক কারণ  (এক্সটার্নাল) রয়েছে।

আমার মতে মূলত অভ্যন্তরীণ কারণই এই সেতু ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী।

৫২ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই মাঝেরহাট ব্রিজ। আমাদের দেশে প্রথাগত ভাবে যে সেতুগুলো তৈরি হয়, এই সেতুর নকশা সেগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। সেই সময়কার বিশিষ্ট সেতু প্রযুক্তিবিদ কৌনিশ রায় এই সেতুর নকশা তৈরি করেছিলেন। এই ধরণের সেতুর পোশাকি নাম প্রিকাস্ট প্রিস্ট্রেসড স্ল্যাববিমডেক। ষাটের দশকে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে গণ্য হত।

ফলে এই ধরণের সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ প্রথম থেকেই খুব সহজ ছিল না। এই ধরণের সেতুর জন্য অত্যন্ত উচ্চ মানের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। একটি সত্যি কথা এখানে বলে ফেলা দরকার এই ধরণের সেতুর ইন্সপেকশন ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ম্যানুয়াল কিন্তু ভারতে নেই। সুতরাং ধরে নেওয়া যেতেই পারে, শুধুমাত্র প্রথাগত ভাবে যা দেখে এসেছেন, শুরুর দিন থেকেই তার উপর নির্ভর করেই সরকারি কর্মচারীরা এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে এসেছেন। আর, সেই রক্ষণবেক্ষণ যে উপযুক্ত নয় তা তো বলাই বাহুল্য।

tweet_090618053052.jpgসেতু ভাঙার মূল কারণ বয়স ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব [ছবি: পিটিআই]

বয়স হয়েছিল সেতুটির। তার উপর উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফলে, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। চাপ সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ভেঙেই পড়ল।

ঘটনার পর আমি একবার এই সেতু পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তখন দুটি বাহ্যিক কারণও চোখে পড়ল। এই ব্রিজের তলা দিয়ে বয়ে চলেছে একটি খাল। আর এই খালের জল খুব সম্ভবত ব্রিজের তলার কয়েকটি স্তম্ভের নিচের দিকটাকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। দ্বিতীয় বাহ্যিক কারণ হচ্ছে জোকা-বিবিদিবাগ মেট্রোলাইনের কাজ। খালি চোখে বোঝা যাবে না, কিন্তু পরীক্ষা করে জানতে হবে যে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজের জন্য মাটির তলায় কোনও ভাইব্রেশন হয়েছিল কি না। তবে যদি হয়েও থাকে তা কখনই সেতু ভেঙে পড়ার মূল কারণ হতে পারে না।

এই সেতু ভাঙার মূল কারণ বয়স ও পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব।

ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা এড়ানোর জন্য এই সেতু ভেঙে পড়ার কারণগুলো পুঙ্খনাপুঙ্খ ভাবে আলোচনা করা খুব প্রয়োজন। এর জন্য একটি উচ্চ প্রর্যায়ের টাস্কফোর্সকে প্রয়োজন, সেই দলে থাকবেন যেখানে এই ধরণের সেতুর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা।

পরিশেষে আর একটি কথা বলব। ৫২ বছরের মধ্যেই ইতিহাস হয়ে গেল মাঝেরহাট সেতু। যে অংশটি ভেঙে পড়েছে শুধুমাত্র সে অংশটি আর মেরামত করা যাবে না। গোটা সেতুকেই সরিয়ে ফেলে আবার নতুন একটা সেতু তৈরি করতে হবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BISWAJIT SOM BISWAJIT SOM

The writer is bridge expert and a visiting faculty of construction engineering department, Jadavur University.

Comment