বৃথা রেলকে দোষ দেওয়া হচ্ছে, পূর্তদপ্তরের রিপোর্টেও মাঝেরহাট ব্রিজকে বিপজ্জনক বলা হয়েছিল

কলকাতা পুলিশ সহ আরও অনেক সংস্থাই মাজেরহাট ব্রিজকে বিপজ্জনক বলেছিল

 |  4-minute read |   05-09-2018
  • Total Shares

২০১৩ সালের ঘটনা। দিনটা ছিল দোসরা মার্চ। ভিআইপি রোডের সঙ্গে ইএম বাইপাসের সংযোগকারী উল্টোডাঙা ফ্লাইওভারের একটি অংশ ভেঙে পড়েছিল সেদিন। ঘটনাটি ঘটেছিল রবিবারের ভোরে।তখনও ঘুম ভাঙেনি শহরের। আর, তাই সেদিনের এই ঘটনা মর্মান্তিক হয়ে ওঠেনি। 

এর ঠিক তিন বছরের মাথায় এই ধরণের আরও একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা। তবে, এবারের ঘটনা সত্যি সত্যিই মর্মান্তিক। ২০১৬ সালের ৩১শে মার্চ ভেঙে পড়ল বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভারের একাংশ।সরকারি হিসেবে বলছে সেদিনের এই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ২৭ জনের। আহত হয়ে ছিলেন আরও ৮০ জন মতো।

body2_090518012526.jpg২০১৬ সালে ভেঙে পড়েছিল বিবেকানন্দ রোড ফ্লইওভার [ছবি: রয়টার্স]

মঙ্গলবার দুপুরে আবার ব্রিজ ভেঙে পড়ল মহানগরীতে। এবার মাঝেরহাট ব্রিজের একাংশ। অনেকেই এই ঘটনার মধ্যে শহরে ঘটে যাওয়া আগের দুটি ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনার ছায়া দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এই তিনটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে বসলে কারণগুলোকে কখনই একসূত্রে বাধা যাবে না।

প্রথম দুটি ঘটনার মধ্যে বিবেকানন্দ রোড ফ্লইওভার নির্মীয়মান অবস্থাতেই ভেঙে পড়েছিল। উল্টোডাঙ্গা ফ্লইওভারের যে অংশটি ভেঙে পড়েছিল তার বয়স সেই সময় মেরেকেটে চার বছর। অর্থাৎ, রক্ষনাবেক্ষনের অভাবের জন্য নয়, নির্মাণ ত্রুটির জন্যেই এই ব্রিজ দুটো যে ভেঙে পড়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। কিন্তু চার দশকেরও বেশি বয়সের মাঝেরহাট ব্রিজে ভেঙ্গে পড়ার কারণ কোনও মতেই নির্মাণ ত্রুটি হতে পারে না। এক হয় সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাব, নয়ত অন্য কোনও 'বহিরাগত' কারণেই এই ব্রিজের একাংশ ভেঙে পড়ল।

সরকার যে কাজটা ভালোই করে থাকে এক্ষেত্রও তার অন্যথা হয়নি - অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো। বস্তুতপক্ষে, মঝেরহাট কাণ্ডে 'বহিরাগত' কারণকেই দায়ী করেছে রাজ্য সরকার। যদিও কলকাতা বন্দর কতৃপক্ষ এই ব্রিজটি নির্মাণ করেছিল, এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অনেকদিন ধরেই পূর্ত দপ্তরের হাতে। ঘটনার পর পূর্ত দফতরের আধিকারীকরা জানান, জোকা-বিবাদি বাগ মেট্রোর কাজের জন্য ভারি ভারি যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। তার জেরেই ওই এলাকায় কম্পন হয় আর তা থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

body_090518012611.jpgরাজ্য সরকার এখন মেট্রো রেলের উপর দোষ চাপাচ্ছে [ছবি: পিটিআই]

এর পরেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। নিগমের বক্তব্য তারা প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ চলছে। একাধিকবার বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। ব্রিজটির যে করুণ অবস্থা সেটাও জানানো হয়েছে। এক নিগম কর্তা বলেন, "মাটির তলায় পাইলিং-এর কাজ বছর খানেক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। আর ব্রিজের যে অংশ ভেঙে পড়েছে সেটা গার্ডার ও স্ল্যাব। মাটির তলায় কাঁপুনির জন্য সমস্যা হলে তার প্রভাব সেতুর পিলারে পড়ত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাটির তলায় কোনও কাজই হচ্ছে না। সুতারং মাটির তলায় কম্পনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।"

আসলে এই ঘটনা থেকে রাজ্য সরকার কোনও মতেই নিজেদের দায়ে এড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপদ সঙ্কেত দেওয়া হয়ে ছিল যে মাঝেরহাট ব্রিজের অবস্থা বেশ করুন।

এর মধ্যে প্রথম সঙ্কেতটি আসে ২০১৫ সালে। যখন পূর্ত দপ্তরের নিজস্ব অডিট রিপোর্টেই মাঝেরহাট ব্রিজকে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরের বছরের অডিট রিপোর্টেও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছিলেন পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা। এ বছর জুন মাসে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের তরফ থেকেও চিঠি মারফৎ পূর্ত দপ্তরকে জানানো হয়েছিল যে মাঝেরহাট ব্রিজের অবস্থা ভালো নয়।কিন্তু এত বিপদ সঙ্কেত থাকা সত্ত্বেও ব্রিজের রক্ষনাবেক্ষনের উপর জোর দেওয়ায় হল না?

পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন যে মূলত ব্রিজের তলায় বর্জ্য পদার্থ বা ময়লা ডাম্প করার জন্যে পিলার বা ব্রিজের গার্ডার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নিয়মিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো মেরামতিও করা হয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান (ব্রিজের তলায় যাতে কোনও রকম গার্বেজ ডাম্প না করা হয়) সূত্র খুঁজে বের করা হচ্ছে ততক্ষন কোনও কিছুই করা সম্ভব নয়।

body1_090518012700.jpgব্রিজগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষ মানুষের জীবন [ছবি: রয়টার্স]

কলকাতার বেশ কিছু ফ্লইওভার বা ব্রিজের তলায় সরকারের তরফ থেকে সৌন্দর্যায়ন ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকুরিয়া বা মাঝেরহাট ব্রিজে এই ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে অন্য সমস্যা রয়েছে। এক পূর্ত আধিকারিকের কথায়, "এই গুলোকে আরওবি বা রেলওয়ে ওভারব্রিজ বলে। এর ব্রিজগুলোর তলায় রেললাইন আছে। আর, এই রেললাইন ও তার সংলগ্ন কিছুটা জমি রেলের অধীনে রয়েছে। তাই এই জায়গায় শুধুমাত্র মেরামতির কাজ করা যায়। পূর্ত দপ্তর, কেএমডিএ বা কলকাতা পুরসভা সেখানে কোনও রকম প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারে না।"

আধিকারিকের দাবি ঢাকুরিয়া ব্রিজেও একই সমস্যা রয়েছে। ব্রিজের দুপাশের সমস্যা অনেকটাই সমাধান করে গেছে। কিন্তু ব্রিজের তলার ঠিক মধ্যিখানের জায়গাটা রেলের জমি। সেখানে পূর্ত দপ্তরের আধিকারিকরা মেরামতি ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।

এই আধিকারিকের বক্তব্য হয়ত ঠিক। কিন্তু এই বক্তব্য সাফাই ছাড়া আর কিছুই নয়। যে কোনও কারণেই ব্রিজের রক্ষনাবেক্ষনের সঙ্গে কোনও সমঝোতা চলে না। হাজার হোক, কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন যখন এই ব্রিজগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment