ব্রিটিশ সাংবাদিকের কলমে: মালালা ও তাঁর পরিবারের সোয়াটে প্রত্যাবর্তনের কাহিনি
গুলি খাওয়ার সাড়ে চার বছর পর সোয়াটে পা দিলেন নোবেল পুরস্কার জয়ী সাহসী কন্যা
- Total Shares
বেনজির ভুট্টোর পরিবার ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া দেশের আর কোনও প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতা তাঁকে জনসমক্ষে স্বাগত জানাননি।
স্কুল বাসে গুলি করে তালিবান তাঁকে খুনের চেষ্টা করেছিল। তারপর তিনি বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। অবশেষে, প্রায় সাড়ে চার বছর পর, পাকিস্তানের সেই সোয়াট উপত্যকায় পা দিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মালালা ইউসুফজাই ও তাঁর পরিবার। মালালার নিজের ঘরে প্রত্যাবর্তনের হাসিটা সত্যিই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে এক লহমায় নিজের ভিটেমাটি, পরিচিত ও শুভানুধ্যায়ীদের ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি দেওয়াটা কতটা কষ্টের - একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে মালালার আব্বু জিয়াউদ্দিন গরিবদের জন্য একটি স্কুল নির্মাণ করেছিলেন; মিঙ্গরায় তাদের বাড়ির আম গাছের তলায় মালালার আম্মি তোর পোকাই গরিব সন্তানদের জলখাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন, যাতে সেই স্কুলের পড়ুয়ারা স্কুল সম্পর্কে মনোযোগী হয়; সেই বাড়ির ছাদেই বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলতেন মালালার দুই ভাই কুশল ও অটল।
সোয়াটে পরিবারের সঙ্গে মালালা
গত চার বছরে মালালার উপর হয়ত গোটা বিশ্বের নজর ছিল। কিন্তু সোয়াটে পর্বতমালার খোলামেলা পরিবেশ থেকে কয়েকহাজার মাইল দূরে বার্মিংহামে দিনযাপন একেবারেই সহজ ছিল না মালালার পরিবারের কাছে। শুরুর দিনগুলোতে তাঁরা নিঃসঙ্গতায় ভুগতেন, বিশেষ করে তোর পোকাই, যিনি একদমই ইংরেজি জানতেন না। বার্মিংহামের মতো হাই টেক শহরের সংস্কৃতির, যেখানে প্রতিবেশীরা একে অপরের সঙ্গে কালেভদ্রে কথা বলেন, সে সবের সঙ্গে একেবারেই মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। আমি প্রায়ই দেখতাম যে অবসর সময়ে তাঁদের বার্মিংহামের বাড়ির বাগানে তিনি পাখিদের খাওয়াচ্ছেন।
এই পরিবারটিকে নিয়ে তো পাকিস্তানের গর্ববোধ করা উচিৎ। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল পুরষ্কার জয়ী এই পরিবারের সদস্য, যিনি বিশ্ব জুড়ে শিশুশিক্ষা নিয়ে প্রচার করে চলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বেশ কিছু পাকিস্তানী এখনও প্রচার করে চলেছেন যে তাঁকে নাকি গুলি করাই হয়নি (চিকিৎসা চলাকালীন ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওঁর এক্স-রে রিপোর্ট দেখেছি এবং পেশোয়ারে যে চিকিৎসক তাঁর অস্ত্রোপচার করেছিলেন তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম) এবং এই পুরো ঘটনাটাই নাকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর চক্রান্ত। এ বিষয়ে যত কম শব্দ খরচ করা যায় ততই ভালো।
"আই অ্যাম নট মালালা" গ্রন্থটির উপদেষ্টাদের একজন তো বলেই সরাসরি বলেই দিলেন যে মালালার পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের পিছনে নাকি আমি! বেনজির ভুট্টোর সন্তানরা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সাহিদ খোকন আব্বাসি ছাড়া আর কোনও রাজনৈতিক নেতা মালালাকে স্বাগত জানাবার সাহস দেখাতে পারলেন না, তাঁরা মালালার মতো সাহসী হয়ে উঠতে পারলেন না।
মানব সভ্যতায় আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী মানুষটির নাম মালালা ইউসুফজাই। তাঁর পরিবারের একজন বন্ধু হতে পেরে আমি গর্বিত।
(প্রতিবেদক এই লেখাটি প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন)

