মোবাইল ফোনে চ্যাট করা বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না
নির্দিষ্ট কারণে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা হয়, মনগড়া কারণে বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়া যায় না
- Total Shares
কেউ যদি ফোনে কথা বলেন তাতে ক্ষতিটা কোথায়? ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে মানবতা ও মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারের কথা বলা আছে।
একজন মহিলা যদি মোবাইল ফোনে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকেন তা হলেও কিন্তু তাঁর স্বামী এই ভিত্তিতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা রুজু করতে পারেন না, কারণ মোবাইলের আসক্তি কোনও ধরণের হিংস্রতা নয়। আর কোনও মামলা করার একটি ভিত্তি হল হিংস্রতা। তবে কেউ যদি আর পরিবারের প্রতি দ্বায়িত্বশীলা না হন বা সব সময় বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ান তাহলে সে বিষয় তাঁকে বোঝানো যেতে পারে। তবে তা নিয়েও মামলা করা যায় না।
নয়াদিল্লির বিবাহ বিচ্ছেদের খবরটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে স্বামী যে অভিযোগগুলি তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে এনেছেন তার মধ্যে একটি হল স্ত্রী রাত জেগে একাধিক পুরুষের সঙ্গে চ্যাট করেন এবং তিনি তাঁর স্বামীকে কোনও সময় দেন না এবং স্বামীকে সঙ্গ দেন না। এই দম্পতির মাত্র এক বছর আগেই বিয়ে হয়েছে। নিঃসন্দেহে পরিস্থিতিটি বেশ জটিল। তবে আমার মনে হয় সেই স্বামী প্রথমে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান হচ্ছে কী না সে বিষয়ে নজর করা। কারণ এই ধরণের অভিযোগ কোনও বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার ভিত্তি হতে পারে না।

আর যদি মামলা দায়ের হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগগুলি প্রমান সাপেক্ষ।
স্বামী যেমন তাঁর স্ত্রীর প্রতি অভিযোগ করেছেন ঠিক তেমন ভাবেই স্ত্রীর দিকের সম্পূর্ণ ঘটনাক্রম শুনে তারপরেই মামলাটির বিচার করা উচিৎ। একতরফা ভাবে বিচার করা যায় না। মামলাতে স্বামী অভিযোগ করেছেন যে তাঁর স্ত্রী একাধিক পুরুষের সঙ্গে কথা বলছেন... আইনে কী কোথাও লেখা আছে যে যদি একজন স্ত্রী একাধিক পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন বলে তা হলে তার ভিত্তিতে তাঁর স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারেন।
এক বছরের মাথায় স্বামী এই সব অভিযোগগুলি এনে বিবাহ বিচ্ছেদ চেয়েছেন। এটা তো গেলো হয়ে যেন সেটা সম্ভব নয়। আমি যদি এই ভদ্রমহিলার আইনজীবী হতাম তাহলে আমি পাল্টা স্বামীকে জিজ্ঞেস করতাম যে বিয়ের আগে কী তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও রকম চুক্তি হয়েছিল যে তাঁর বিবাহিত স্ত্রী ফোনে কথা বলতে বা চ্যাট করতে পারবেন না বা কথা বলতে পারলেও কতক্ষণ কথা বলতে পারবেন?

এত বছর আইনি পেশায় থেকে আমার মনে হয় আদালত এই মামলাটিকে খারিজ করে দেবে। আর মামলাটি বাতিল হয়ে গেলে স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করতে পারেন। এবং যদি তা কোর্টে প্রমাণ হয় তাহলে স্বামীকে ছ' মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত হাজতবাসও করতে হতে পারে। এবার ইচ্ছে করলে স্ত্রী উল্টে স্বামীর বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে পারেন।
কোনও একটা কারণ নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ চাওয়া যায় না তার জন্য বিশেষ কয়েকটা কারণ থাকা প্রয়োজন যেমন, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, যদি দম্পতির কারও এইডস থাকে কিংবা উভয়ের একজন কেউ মানসভারসাম্যহীন হন কিংবা কেউ একজন যদি আসামি হন কিংবা কোনও ধরণের খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনও সত্য গোপন করে থাকেন।

