কন্যা সোহিনীকে উচ্চপদে বহাল করতেই কি মোহনবাগানে অচলাবস্থা জারি রাখছেন অঞ্জন মিত্র?
বকেয়া টাকা না মেটাতে পারলে এএফসি লাইসেন্স বাতিল হতে পারে, দলগঠনেও সমস্যা তৈরি হবে
- Total Shares
ইউনাইটেড স্পোর্টিং বা চার্চিল ব্রাদার্সের কী পরিণতি হয়েছিল মনে আছে নিশ্চয়ই? এএফসি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি পূরণ করতে পারেনি বলে আই লিগ থেকে রেলিগেট করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে যে সমস্ত মোহনবাগান সমর্থক বা আপামর ফুটবলপ্রেমীরা মোহনবাগানের অচলাবস্থা নিয়ে চিন্তিত তাঁদের প্রথমেই বোঝা দরকার যে দেশের জাতীয় ক্লাবেরও একই পরিণতি হতে পারে।
ফুটবলারদের তিন মাসের বকেয়া বাকি। এই অবস্থায় এএফসি লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করা হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই এআইএফএফের কর্তারা মোহনবাগান পরিদর্শনের জন্য আসবেন। পরিদর্শনের আগে বকেয়া মেটাতে না পারলে বা পরিদর্শনের সময় মোহবাগান কর্তারাদের আত্মপক্ষ সমর্থন যদি যুক্তিপূর্ণ না হয় তা হলে ক্লাবের এএফসি লাইসেন্স প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যেতে পারে। মোহনবাগানের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রাখলে বিষয়টি কিন্তু খুব একটা ভালো নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বেতন বকেয়া কেন?
টুটু বসুর ইঙ্গিতটা বেশ পরিষ্কার - বয়সের জন্য যদি আমি পদত্যাগ করি, তাহলে অঞ্জন মিত্রেরও দায়িত্ব ছাড়া উচিৎ
জন্মলগ্ন থেকেই গড়ের মাঠের ক্লাবগুলো ব্যক্তিগত আর্থিক আনুকূল্যে চলে। সদস্যদের চাঁদা বাদ দিলে এই ক্লাবগুলোর বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক রয়েছেন। যাঁরা নিজেদের পকেট থেকে অর্থ সাহায্য করে ক্লাবগুলো চালাতেন। বছর বারো আগে এই পরিস্থিতি বদলে গেল। ইউবি গ্রুপ কলকাতার দুই প্রধানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হল। স্পনসর পেয়ে পেশাদার হয়ে উঠল কলকাতার ফুটবল। অস্বীকার করে লাভ নেই স্পনসর আসায় অর্থও এসেছিল কলকাতা ফুটবলে। কিন্তু ইউবি গ্রুপের কর্ণধার বিজয় মালিয়া বিভিন্ন আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়ার পর সমস্যার সৃষ্টি হল। আবার নতুন করে স্পন্সরের খোঁজে নামতে হলো ক্লাবগুলোকে।
গত কয়েক বছর ধরে মোহনবাগান বেশ কিছু স্পনসর পেলেও টাইটেল স্পনসর এখনও জোগাড় করে উঠতে পারেননি মোহনবাগান কর্তারা। তার ফলে ভাঁড়ারে টান পড়েছে। এই অবস্থায় একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রাক্তন সভাপতি টুটু বসু ক্লাবের জন্য অর্থদান করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করবার পরেই মোহনবাগান আর কোনও পাওনা মেটাতে পারছেন না।
বর্তমান সচিব অঞ্জন মিত্র বলেই খালাস যে ক্লাব সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেবে। আগামী বছরের জন্য দল গঠন শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু সেই অর্থের সূত্র কী তা এখনও পর্যন্ত তিনি জানাতে পারেননি।
এই অবস্থায় মোহনবাগানের কাছে দুটি রাস্তা খোলা রয়েছে। এক সচিব প্রাক্তন সভাপতির সঙ্গে কথা বলে অর্থের ব্যবস্থা করুক। অঞ্জন মিত্র অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কোনও মতেই টুটু বসুর কাছে টাকা চাইতে যাবেন না। আর একটি পথও খোলা রয়েছে। কার্যনির্বাহী সমিতির অন্তত ২০জন ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। তাই সচিবের উচিৎ অবিলম্বে বার্ষিক সাধারণ সভা ডেকে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেওয়া। তাও করতে নারাজ অঞ্জন মিত্র। কিন্তু কেন?
শোনা যাচ্ছে নিজের মেয়ে সোহিনীকে ক্লাবের একটি উচ্চপদে বসাবার চেষ্টা করছেন তিনি। তাঁর সেই আকাঙ্ক্ষার পথ পরিষ্কার করতেই তিনি সময় নিচ্ছেন। নির্বাচনে দাঁড়ালে তিনি হেরে যেতে পারেন এই আশঙ্কাও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে।
অঞ্জন মিত্র ও টুটু বসুর সম্পর্কেও চিড় ধরেছে সভাপতি পদত্যাগ করবার পরে। পদত্যাগের সময় টুটু বসু বলেছিলেন, "আমার বয়স হয়েছে তাই পদত্যাগ করছি। ক্লাবের দায়িত্ব এবার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়ার সময় হয়েছে।" টুটু বসুর ইঙ্গিতটা বেশ পরিষ্কার ছিল - বয়সের জন্য যদি আমি পদত্যাগ করি তাহলে অঞ্জন মিত্রেরও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিৎ। এতেই বোধহয় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন অঞ্জন মিত্র।
একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে টুটু বসুর এই দাবিতে কোনও ভুল নেই। অসুস্থতার জন্য গত কয়েক বছর অঞ্জন মিত্র ক্লাবে সময় দিতে পারেননি। অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত ও সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো সামলাচ্ছিলেন। সচিব অবশ্য দাবি করছেন যে তিনি সুস্থ এবং তিনি পদত্যাগ করবেন না, কারণ তিনি ক্লাবের নির্বাচিত প্রতিনিধি।
নির্বাচন হলে নিজে হেরে যেতে পারেন এই আশঙ্কাও তাড়া করে বেড়াচ্ছে অঞ্জন মিত্রকে
খুব ভালো কথা। তাহলে গণতন্ত্র পদ্ধতি মেনে ক্লাবের নির্বাচন করতে বাধা কোথায়। আবার নির্বাচিত হলে তিনি দায়িত্বে থাকবেন। হেরে গেলে সরে যাবেন। কিন্তু দায়িত্বে থাকতে হবে বলে বা নিকট আত্মীয়কে ক্লাবের গুরত্বপূর্ন পদে বহাল করতে হবে বলে ক্লাবে অচলাবস্থা জারি করে রাখব, এটা কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়।
চিন্তা শুধু এএফসি লাইসেন্স নিয়ে নয়। প্রাথমিকভাবে, আগামী মরশুমের জন্য ২৫ জনের দল ঠিক করে রেখেছেন মোহনবাগান কর্তারা। অগ্রিমের ব্যবস্থা করে এই ফুটবলারদের যদি দ্রুত চুক্তিবদ্ধ না করা যায় তাহলে এই ফুটবলারদের ধরে রাখা মুশকিল হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী মরসুমে পারফরম্যান্স নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট চিন্তায় থাকবে সবুজ-মেরুন শিবির।
আইএসএল কিন্তু দেশের ক্লাব ফুটবলের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে ফুটবলপ্রেমী হিসেবে ক্লাব কর্তাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, দয়া করে স্বজনপোষণ না করে, সস্তার রাজনীতি বন্ধ করে বাংলার ফুটবলকে বাঁচান।

