এশিয়ার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি দামাভান্দ জয়ের অভিজ্ঞতা শোনালেন পর্বতারোহী
এখনও পর্যন্ত আমার সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা দামাভান্দ জয় করতে যাওয়া
- Total Shares
অল্পদিন হল আমি পাহাড়ে চড়া শুরু করেছি এবং এর মধ্যে আমি বেশ অনেকগুলো শৃঙ্গ জয় করে ফেলেছি। তবে ইরানের দামাভান্দ পর্বত জয় করা আমার অভিজ্ঞতায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে চমকপ্রদ ও কঠিন।
ইরানের সব চেয়ে উঁচু পর্বত হল এই দামাভান্দ এবং এশিয়া মহাদেশের এটিই সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরিটি নিষ্ক্রিয় হলেও পর্বতের গায়ে যে গন্ধকের আস্তরণ আছে তার থেকে সর্বক্ষণ জলীয় বাষ্প বেরোতে থাকে যা থেকে একটি বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। পর্বতটির চূড়া থেকে মোটামুটি ২০০ মিটার নীচে শৃঙ্গকে ঘিরে রয়েছে এই বাষ্পের বলয়, যা অনেক দূর থেকেই খালি চোখে দেখা যায়।
যাত্রা শুরু
এই ধোঁয়া ও বাষ্প শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং অসাবধান হলে পর্বতারোহী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পর্বতটির উচ্চতা হল ৫৬১০ ফুট।
আমি একটি বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করি। কর্মসূত্রে আমি বেঙ্গালুরুতে থাকি। এখানকার একটি ক্লাবেই আমার পাহাড়ে চড়ার হাতেখড়ি হয়। বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ জয় করেছি। তবে দামাভান্দ শৃঙ্গ জয়ের পুরো কৃতিত্বই আমি সত্যরূপ সিদ্ধান্তকে দিতে চাই। তিনি না থাকলে আমার পক্ষে হয়তো এটা সম্ভব হত না। বিশ্বের সাত মহাদেশের তিনটি শৃঙ্গ জয় করেছেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। এটা ছিল চতুর্থ।

যাত্রা পথএর আগে তিনি আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইউরোপের এলব্রুশ, দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু ওজোস ডেল সারাডো জয় করেছেন। সত্যরূপ সিদ্ধান্ত আমার পূর্বপরিচিত। তাই এবার যখন ঠিক করেন যে দামাভান্দ পর্বতে উঠবেন তখন তিনি সেই দলে আমাকেও সামিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। দলে আমি ছাড়াও দলে আরও একজন মহিলা ছিলেন - ভাস্বতী চট্টোপাধ্যায় যাঁর বয়স ৫০।
আমরা তিনজন ৬ সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরু থেকে যাত্রা শুরু করি। ৭ তারিখ আমরা শৃঙ্গে ওঠা শুরু করি। ১০ তারিকে আমরা শৃঙ্গটি জয় করি। শৃঙ্গটি খুবই দুর্গম। পর্বতটি অতন্ত শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি বলে ওঠার বা নামার পথটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অত্যন্ত সাবধান না হলে এবং সতর্ক না থাকলে যে কোনও সময় কোনও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। দামাভান্দ পর্বত জয়ে করার স্বপ্নটা এতটাই প্রবল ছিল যে গোড়ার দিকে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লেও আমি মনের জোর রেখেছিলাম। আমরা যখন পাহাড়ের শিখরে পৌঁছলাম তখন ধোঁয়া চোখে লেগে যাওয়ার ফলে সত্যরূপ সিদ্ধান্তের চোখে সমস্যা দেখা দেয় যার রেশ চলে অনেকদিন পর্যন্ত।এই বাষ্প থেকে বাঁচার একটাই উপায়, তা হল এক টুকরো ভেজা কাপড় যাকে পর্বতারোহীরা 'বাফ' বলেন সেটা দিয়ে মুখ এবং নাককে আগাগোড়া ঢেকে রাখা।
হাত বাড়ালেই জয়
ইরানরের সময় অনুযায়ী পর্বত শিখরে আমরা ঠিক দুপর ১২.৪৫য়ে পৌঁছেছিলাম। ট্রেকিং-এর কয়েকটা নিয়ম আছে যার মধ্যে একটা প্রধান নিয়ম হল পাহাড়ের বেশ উপরের দিকে ওঠার নির্দিষ্ট কয়েকটা সময় রয়েছে, যার পর পাহাড় থেকে নেমে আসতে হয় কাছাকাছি ক্যাম্পটিতে। সৌভাগ্যবশত আমরা যখন শৃঙ্গে পৌঁছলাম তখন ওখানকার সময় অনুসারে বাজে দুপুর ১২.৪৫ আর তার ঠিক ১৫ মিনিটের মধ্যেই হাওয়ার অভিমুখ বদল হওয়ার কথা ছিল।
এই পর্বতশৃঙ্গে উঠতে বেশ সময় লাগে বলে নিজেদের শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।
শৃঙ্গ জয় করার পর পাহাড়ের চূড়ায় যখন পতাকা ওরাই তখন পর্বতারোহণের অক্লান্ত পরিশ্রম মুছে গিয়েছিল।
শৃঙ্গ জয়ের পর
স্বপ্ন আরও উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার, তাই নিজেকে সেভাবে প্রস্তুতও করছি। এ বার লের বেশ কয়েকটি শৃঙ্গ জয় করার ইচ্ছে আছে।

