কলড্রপ সমস্যার সমাধানের জন্য সরকার কী ভাবছে?
টেলিকম বিভাগ ২০২২এর মধ্যেই সবাইকে ৫জি ও কমপক্ষে ৫০এমবিপিএস ব্রডব্যান্ড পরিষেবা পৌঁছে দিতে চান
- Total Shares
গত দু'বছরে ভারতীয় টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে একটা ব্যাপক রদবদল হয়েছে। ভারতীয় টেলিকম বাজারে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও প্রবেশ করার পর প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে অনেকটা, এর ফলে টেলিকম বাজারে দামের লড়াই শুরু হয় গেছে যার দরুন ফোনের খরচ অনেক কমে গেছে। স্পেক্ট্রামের দাম থেকে শুরু করে যাঁরা এই সংস্থার কানেকশন ব্যবহার করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের ডেটা ব্যবহারের খরচও কমে গেছে। পাশাপাশি একজন ব্যক্তি মাসে কতগুলো ফোন করতে পারবেন তার মাত্রাও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
টেলিকম শিল্পে জিওর রমরমায় ভয় পেয়ে দেশের অন্যান্য মোবাইল সংস্থাগুলি তড়িঘড়ি নিজেদের মোবাইল নেটওয়ার্ক ৪জি এলটিই-তে আপগ্রেড করে ফেলে, যাতে সেই পরিষেবা ব্যবহারকারীদের আরও দ্রুততর ও উন্নত পরিষেবা দেওয়া যায়। পরিষেবাকে আরও উন্নত মানের বানাতে গিয়ে এই সংস্থাগুলো যে দিকে নজর দেয়নি সেটা হল ব্যান্ডউইথ বাড়ানো।
এর ফলে আজ টেলিকম বিভাগের সব চেয়ে বড় যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে সেটা হল কলড্রপ এবং ডেটা স্পিড কম হয়ে যাওয়া। যদিও এই সমস্যাটির মীমাংসার জন্য টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ট্রাই) সবকটি অপারেটরদের সঙ্গেই কথা বলেছে। কোনও সুরাহা না খুঁজে পেয়ে এই সমস্যার মীমাংসার জন্য ট্রাই একটি বৈপ্লবিক পরিকল্পনার প্রণয়নের অনুমতি দিয়েছে।
ব্রডব্যান্ডের সাহায্যে ল্যান্ডলাইন ও মোবাইলে ফোন করা যাবে
দা টাইমস অফ ইন্ডিয়া খবরের কাগজের একটি প্রতিবেদন অনুসারে টেলিকম বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকম, ডিওটি) সম্প্রতি একটি প্রস্তাবে এই দেশে ইন্টারনেট টেলিফোনি চালু করার মঞ্জুরি দিয়েছে। এই পরিষেবাটি চালু হলে বিভিন্ন টেলিকম অপারেটর যেমন ভোডাফোন, জিও ও এয়ারটেলকে ওয়েব টেলিফোনি লাইসেন্স নিতে হবে, "তারপর সংস্থাগুলি ব্যবহারকারীদের একটি করে নতুন নম্বর দেবে যা দিয়ে কোনও রকম সিম ছাড়াই শুধুমাত্র ইন্টারনেট টেলিফোনি অ্যাপটি ডাউনলোড করেই ফোন করা যাবে।"এর ফলে একজন ব্যক্তি যিনি এই কানেক্শন ব্যবহার করছেন তিনি যদি এমন কোনও স্থানে থাকেন যেখানে ওয়াইফাই বেশ শক্তিশালী তাহলে ওয়াইফাইর সাহায্যে ফোন করতে পারবেন।
ডিজিটাল কমিউনিকেশন বিভাগে প্রায় ৪০ লক্ষ্য কর্মসংস্থান হবে
ট্রাইয়ের উপদেষ্টা অরবিন্দ কুমার জানিয়েছেন যে ব্যবহারকারীদের জন্য এই অ্যাপটি খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন,“যে সব জায়গায় ফোনের পরিষেবা ঠিকঠাক পাওয়ায় যায় না সেইসব জায়গায় এই পরিষেবা কাজে আসবে। এমন কী যে সব বাড়িতে প্রচলিত টেলিকম সিগন্যাল খুব দুর্বল সেখানে যদি ওয়াই-ফাই শক্তিশালী হয় তাহলে ফোন করা যাবে।"
ইন্টারনেট টেলিফোনি চালু হলে ব্যবহারকারীরা একটা ১০ সংখ্যার টেলিফোন নম্বর পাবেন যেটা কোনও সিম কার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না বরং বিশেষ কোনও একটি অপারেটরের মোবাইল টেলিফোনি এপ্লিকেশন ডাউনলোড করলেই ব্যবহারকারীদের একটি নতুন ১০ সংখ্যার টেলিফোন নম্বর দেওয়া হবে। আর যদি এই ব্যক্তি সেই অপারেটরের আগের থেকেই সেই অপারেটরের কানেকশন ব্যবহার করেছেন যদি সেই সংস্থার ইন্টারনেট টেলিফোনি অ্যাপটি ডাউনলোড করেন তাহলে তাঁকে কিন্তু আর নতুন করে কোনও ১০ সংখ্যার নম্বর দেওয়া হবে না বরং সেই ব্যক্তি আগেই যে নম্বরটি ব্যবহার করছিলেন সেই একই নম্বর ব্যবহার করতে থাকবেন।
ব্যান্ডউইথের প্রয়োজনীয়তা
যদিও এটা দারুন একটা পরিকল্পনা কিন্তু আমাদের দেশে ইন্টারনেট টেলিফোনি বাস্তব রূপ পেতে হলে অনেকগুলো বাঁধা অতিক্রম করতে হবে। এই বাঁধাগুলির মধ্যে সব চেয়ে বড় বাধা হল ফোনের দুর্বল ইন্টারনেট পরিষেবা ও তারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক। কিন্তু মনে হয় সরকারের কাছে এই সমস্যার একটা সমাধান রয়েছে।
সম্প্রতি সরকার ন্যাশনাল ডিজিটাল কমিউনিকেশনস পলিসি ২০১৮" নামে একটি খসড়া নীতি তৈরি হয়েছে। "এ দেশে ডিজিটাল কমিউনিকেশন ক্ষেত্রে মার্কিন টাকায় প্রায় দশ হাজার কোটি ডলারের ব্যবসা নিয়ে আসাই" এই নীতিটির উদ্দেশ্য এবং সেই মূল্যটিকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি পরিকাঠাম খাড়া করা যাতে সবাইকে ২০২২এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ এমবিপিএস স্পিড সহ ৫জি পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যেই ১ গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ডের এবং ২০২২ সালের মধ্যে ১০ গিগাবাইট গতিতে যাতে সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায় সে বিষয়েও আমাদের সরকার নজর দিচ্ছে।
নতুন একটি পরিষেবা চালু হওয়ার পর গোড়ার দিকে ঠিক কতটা আদায় আসবে সেই দিকটিকে মাথায় রেখেই খসড়ায় লাইসেন্সে বানাবার খরচ, স্পেক্ট্রামের খরচ ইউনিভার্সাল সার্ভিস অবলিগেশন ফান্ড লেভি, এই সবকটি ক্ষেত্রেই টেলিকম পরিষেবার খরচে অনেকটা তারতম্য হবে।
রিপোর্ট অনুসারে খসড়াটি আমাদের দেশে "ডিজিটাল কমিউনিকেশন বিভাগে প্রায় ৪০ লক্ষ্য কর্মসংস্থান হবে"। পাশাপাশি ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি)র প্রায় ৮ শতাংশ আসবে টেলিকম সেক্টর থেকে যা ২০১৭ সালে ছিল ৬ শতাংশ।

