নাসিরুদ্দিন শাহের জন্য উপদেশ: ভীত নয়, ক্ষিপ্ত হন
মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদের ক্ষমতা তাদের নেই, অসহিষ্ণুতার প্রচারকদের বুঝিয়ে দিতে হবে
- Total Shares
আর মাস খানেকের মধ্যেই ঘটা করে প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হবে। অনুষ্ঠানে বেশ কিছু গুরুগম্ভীর বক্তৃতা শোনা যাবে। আর প্রধান অতিথির আসন আলোকিত করে থাকবেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার অনুগামী রামাফোসা প্রবাসি ভারতীয় দিবসেও উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানটি তাঁর ভারত সফরের সময়েই পালন করা হবে। তিনি ভারতের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবর্ষ উদযাপন পালন করবেন।
ভারত অহিংসা, শান্তি, বহুত্ববাদ ও সাংবিধানিক মূল্যের বাণী শোনাবে।
অন্যদিকে বেশ কিছু ভারতীয় ঘৃণার বাতাবরণ সৃষ্টি করে যাবে।
সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হবে। উগ্র দেশপ্রেমকে দেশপ্রেম বলে দাবি করা হবে। আর, ভারতজুড়ে যখন গণতন্ত্রের কলঙ্কময় অধ্যায়ে নিয়ে আলোচনার ফাঁকে বুলন্দশহরের মতো ঘটনাগুলো আমরা দ্রুত ভুলে যাব।
এরপর রাজসমন্ডের ঘটনাটি দেখুন। গণপিটুনিতে মৃত্যুকে আমরা যেন স্বাভাবিক বলেই ধরি।
কেউই যদি নাসিরুদ্দিন শাহের মতো প্রতিবাদ করতে চান তাহলে তাঁকে দেশদ্রোহীর আখ্যা দেওয়া হবে।
প্রতিবাদ করলেই দেশদ্রোহীর আখ্যা দেওয়া হবে, নয়ত পাকিস্তান চলে যেতে বলা হবে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এর পর এই সব প্রতিবাদীদের অভিপ্রায় নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হবে আর তাঁদের দেশপ্রেমকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্ৰশ্ন তোলা হবে। এই ফাঁকে কিছু আমলা, সেনাধ্যক্ষ বা সমাজকর্মীরা সরকারকে চিঠি লিখে জানাবেন যে দেশে অসহিষ্ণুতা আর মেকি দেশপ্রেমের বাড়বাড়ন্ত ঘটেছে।
সরকার ও সংবাদমাধ্যম অবশ্য তাঁদের কথায় কর্ণপাত করবে না। এর পরেও তাঁরা যদি বিষয়টি নিয়ে বেশি 'বাড়াবাড়ি' করতে থাকেন তাহলে তাঁদেরও দেশদ্রোহী বলে সম্বোধন করা হবে।
কিন্তু মূল কারণটি খুঁজে বের করা বা তার সম্ভাব্য সমাধান সূত্রগুলো নিয়ে কেউই আলোচনা করবে না।
সবকিছুই স্বাভাবিক রয়েছে বলেই জাহির করতে আমরা পছন্দ করি।
ঠুটকুড়ি ও রাজাসমন্ডের ঘটনার সময়ে আমরা যা করলাম। অনেকেই আবার পুলওয়ামার ঘটনার পর উৎসবে মত্ত হয়েছিল। টিভি চ্যানেলগুলোর সঞ্চালকরা অতিরিক্ত অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলে চলবেন, মহিলাদের হেনস্থা হতেই হবে আর সংখ্যালঘুদের তোষণ করলেই আপনার দেশাত্মবোধ প্রশ্নের মুখে পড়বে।
কৃষকদের গুণ গাওয়া হবে। কিন্তু চাষিরা আত্মহত্যা করেই চলবেন। সাধারণ মানুষের প্রশংসা করে করদাতাদের টাকা থেকেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। আবার সাধারণ মহিলাদের সেই উপেক্ষিত থেকে যেতে হবে। কিন্তু অন্য দেশের নেতারা এ দেশের এলেই আমরা বোঝাতে শুরু করে দেব ভারত কত সুন্দর ছিল, আছে এবং থাকবে।
রাজাসমুন্ড বা ঠুথুকুড়ির ঘটনার পরেও আমরা বলব সমস্ত কিছু স্বাভাবিক [স্ক্রিনগ্র্যাব]
আমরা তখন ভুলে থাকব যে বুলন্দশহরের এক পুলিশকর্মীর পরিবার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে।
এর মধ্যেই কানপুরের একটি বিলাসবহুল গোশালায় ৫৪০টির মধ্যে ১৫২টি গরু মৃত্যুর খবর কিন্তু লোকে ভুলতে বসেছে। আসলে, এ দেশে গোরু বা পুলিশ কেউই সুরক্ষিত নয়।
তারই মধ্যে শান্তির ভাষণ চলবে। তারই মধ্যে রামাফোসা বারাণসীতে গান্ধীর সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনিও জানবেন যে দেশ হিসেবে ভারত কতটা মহান। দেশবাসীর দুঃখ দুর্দশা অবশ্য তাঁর জানার কথা নয়।
আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করি। আবার, ধর্ম বা জাতপাতের ভেদাভেদেও বিশ্বাস করি। আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি। কিন্তু 'জাতীয় স্বার্থে' মানবাধিকারে বিশ্বাস করি না।
ভারতের মতো মহান দেশে দেশবাসীর প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই বিনম্র। আমরা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনও ফারাক খুঁজে পাই না।
সরকার নিয়ে প্রশ্ন তুললেই আপনাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হবে। পাকিস্তান চলে যাওয়ার জন্য আপনাকে আহ্বান জানানো হবে।
তাই এবার নাসিরুদ্দিন শাহের ভীত নয়, ক্ষিপ্ত হওয়া উচিত।
যাঁরা অসহিষ্ণুতার বার্তা ছড়াচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে এবার ভারতীয়দের একজোট হওয়ার সময় এসেছে।
ভারতীয় বলতে যাঁরা ভারতকে বোঝেন, ভারতীয় বলতে যাঁরা ভারতীয় আদর্শে বিশ্বাসী।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

