নিটের নতুন নিয়মগুলো কী আদৌ বাস্তবসম্মত?
বছরে দু'বার ভর্তি নেওয়ার মতো পরিকাঠামো কী সরকারি হাসপাতালে আছে?
- Total Shares
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর সম্পর্কিত তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে যে আগামী বছরের নিট পরীক্ষা সংক্রান্ত যে টুইট করেছেন তার থেকে পরিষ্কার যে ২০১৯-এর নিট পরীক্ষার বিভিন্ন রদবদল হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার পুরো বিষয়টা নিয়ে এখনও পর্যন্ত খোলাখুলি ভাবে জানায়নি।
প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে যে আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে নিট পরীক্ষা দু'খেপে নেওয়া হবে, একবার ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা নেওয়া হবে আর একবার অগস্ট মাসে নেওয়া হবে। তাহলে কি এখন থেকে বছরে দু'বার ডাক্তারিতে ভর্তি নেওয়া চালু হবে? যদিও জানা গেছে যে দু'বারের মধ্যে যে বারে নম্বর বেশি থাকবে সেই নম্বরের ভিত্তিতেই ভর্তি নেওয়া হবে।
নিট বেশ কঠিন একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা। পরের বার আগের চেয়ে আরও ভালো নম্বর হতে পারে সেই আশায় ছাত্রছাত্রীদের সারা বছর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। ফলে একজন পড়ুয়াকে একই পরীক্ষা বছরে দু'বার দিতে হচ্ছে তার কি তা হলে আর অন্য কোনও পড়াশোনা নেই?
ছাত্রছাত্রীদের এভাবে পরীক্ষার মধ্যে ব্যস্ত করে রাখার কি কোনও প্রয়োজন আছে? অথচ যখন নিট পরীক্ষা প্রথম চালু হয় তখন বলা হয়েছিল যে মেডিক্যালে ভর্তির একটি মাত্র প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে যাতে সারা বছর ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন মেডিক্যালের প্রবেশিকা দিতে না হয়। এর ফলে তাদের উপর চাপ কম হবে সেই কোথাও বলা হয়েছিল। তাহলে এখন তারা অন্য কথা কেন বলছে?
ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলোয় কি এমন শিক্ষা পরিকাঠামো রয়েছে যাতে বছরে দু'বার ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া সম্ভব হবে?

আগামী বছর থেকে পুরো পরীক্ষাটাই অনলাইনের মাধ্যমে হবে। এটা একেবারেই অযৌক্তিক। এমন বহু পড়ুয়া রয়েছে যারা পরিকাঠামোগত বিভিন্ন কারণে কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানে না। তা হলে তারা কী ভাবে পরীক্ষা দেবে? এটা মোটেই বাস্তব সম্মত ব্যবস্থা নয়। এখনও পর্যন্ত সেই সব এলাকার পড়ুয়ারা মেধার জোরে এবং কঠিন পরিশ্রম করে ডাক্তারি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করছে। তবে নতুন নিয়ম হলে তাদের খুব স্বাভাবিক ভাবেই তারা পিছিয়ে পড়বে। অনলাইনে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে পুরো পরীক্ষাটাই অবজেক্টিভ টাইপ বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ভিত্তিতে হবে কিন্তু আগে কিছুটা অংশে বড় প্রশ্ন থাকত। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের সেই বিষয়টির প্রতি সম্যক ধারণা রয়েছে কি না সেটা যাচাইয়ের একটা ব্যবস্থা ছিল। অনলাইনে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে মেধার যাচাইটাও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এমনিতেই আঞ্চলিক ভাষার প্রশ্নপত্রে অসংখ্য ভুল থাকে, তাই অনলাইনে আঞ্চলিক প্রশ্নপত্রগুলোতেও যে অজস্র ভুল থাকবে সেটা আর বলা অপেক্ষা রাখে না। আমরা আগেও যেমন বলেছি কেন্দ্র সরকার ধীরে ধীরে আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি তুলে দিতে চাইছে। কারণ নিট চালু হওয়ার সময় শুধুমাত্র হিন্দি ও ইংরেজিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই কথা বলা হয়েছিল পরে অবশ্য চাপের মুখে পরেই তাদের ১০টা আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা নেওয়ার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়।
পাশাপাশি আগামী বছর যখন উচ্চমাধ্যমিক হবে তখনই এই নিট পরীক্ষার তারিখ ঠিক হয়েছে। আমরা দেখেছি এমনিতেই সারা রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নানা প্রস্তুতি চলে আর ঠিক সেই সময় যদি নিট চলে সেটা একটা অসুবিধার সৃষ্টি করবে।
সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল কেন্দ্রীয় সরকার নিজেরাই সব ঠিক করছে এবং সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। দেশের শিক্ষাবিদ বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কিছুই করছেন না বা তাঁদের মতামত আহ্বান করছেন না। কেন্দ্র সরকার কী করবে তা কারও সঙ্গে আলোচনা না করে নিজেরাই স্থির করে ফেলছে। একবারও ছাত্রছাত্রীদের দিকটাও চিন্তা করছে না কিংবা তাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকগুলো খতিয়ে দেখছেন না। এটা একেবারেই অগণতান্ত্রিক।

