ইন্টারনেটের নেশায় বাড়ে মানসিক সমস্যা, বাদ যায় না শরীরও

ব্যক্তিগত, শারীরিক, সামাজিক ও আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে

 |  3-minute read |   22-04-2018
  • Total Shares

বর্তমান যুগকে আমরা জানি ' ডিজিটাল এজ' নামে। এই ডিজিটাল এজ যেমন সবকিছুকে একবারে আমাদের হাতের মুঠোর মধ্যে এনে দিতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি আবার বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখিও দাঁড় করিয়েছে। যার মধ্যে প্রধান হল 'ইন্টারনেট অ্যাডিকশন'। বহু মানুষ আছেন, বিশেষ করে আজকের যুব সমাজ যারা এই ইন্টারনেট অ্যাডিকশনের দ্বারা আক্রান্ত। ইন্টারনেট অ্যাডিকশন কিন্তু বহু মানুষের জীবনে 'ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার' এও পরিণত হয়েছে, যার ফলশ্রুতি হিসাবে তারা এখন মনোচিকিৎসার অন্তর্গত কারণ এই 'অ্যাডিকশন' তখন ই 'ডিসঅর্ডার' এ পরিণত হচ্ছে, যখন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, শারীরিক, সামাজিক ও আর্থিক জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং ব্যক্তি ক্রমশই স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।

যেমন কমপালসিভ অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে আপনি মনোমত জিনিসটি ঘরে বসে পেয়ে যাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু আপনার বাইরে বেরনো, সামাজিকতা, চারপাশ সম্পর্কে ধ্যানধারণা ক্রমশঃ সীমিত বা তত্ত্বভিত্তিক (থিওরিটিক্যাল) হয়ে যাচ্ছে। কায়িক পরিশ্রম থাকছে না বলে অনলাইন শপিং বেড়েই চলেছে, এর ফলে অনেকেই নানা রকম আর্থিক সমস্যাতেও পড়ছেন। বহু লোককে দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিব্য কথাবার্তা বলছেন অথচ সামনাসামনি দেখা হলে হয় চিনতে পারছেন না বা চিনলেও কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছেন।

abuse_112317081332_042218063803.jpg বহু মানুষ আছেন যারা এই ইন্টারনেট অ্যাডিকশনের দ্বারা আক্রান্ত

আবার প্রচুর নতুন যোগাযোগ হওয়ায় গড়ে উঠছে নতুন রোমান্টিক সম্পর্ক এবং যা অনেক ক্ষেত্রেই বর্তমান সম্পর্ককে তছনছ করে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হওয়া নতুন সম্পর্কগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই 'ফেক' হওয়ায় ডেকে আনছে নিত্য নতুন অসংযমী লাইফস্টাইল, এমনকি প্রতারণার আঘাত সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যাও করছেন। মোদ্দা কথা, মানুষ ক্রমশই বাস্তব থেকে সরে গিয়ে মনগড়া এক অলীক দুনিয়ায় বিচরণ করছে, যেখানে কোনও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোটরা। তাদের মধ্যে বেড়ে চলেছে স্বার্থপরতা, মিথ্যা বলার প্রবণতা, অসহিষ্ণুতা, ক্রোধ, বস্তুকেন্দ্রিকতা, আত্মহত্যা ও খুনের মতো নেতিবাচক আবেগ।

রোগনির্ণয় (ডায়াগনোসিস)

বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডাইজড টুলের মাধ্যমে এই সমস্যা ও তার কারণ অনুন্ধান করে থাকেন মনোবিদ বা মনোচিকিৎসকরা। প্রাথমিক ভাবে বিশেষ কী বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ সেগুলি সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।

লক্ষণ (সিম্পটমস)

সাইকোলজিকাল

মানসিক অবসাদ (ডিপ্রেশন)

অসৎ আচরণ

অনুশোচনা বোধের আধিক্য

উৎকণ্ঠা

ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন সময়ে 'ইউফোরিক' ফিলিং

সামাজিক ভাবে একা (সোশ্যাল আইসোলেশন) কিন্তু শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয়

বিরক্তি ভাবের আধিক্য

মেজাজ ঠিক না থাকা (মুড সুইং)

রুটিন কাজকর্মে অনীহা

বিরক্তি ভাব (বোর ফিলিং)

দৈনন্দিন কাজে আলস্য অথচ মোবাইলে অ্যাক্টিভ

শারীরিক (ফিজিক্যাল)

শরীরে ব্যথা বৃদ্ধি

কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম

মাথাব্যাথা

ক্ষুধামান্দ্য বা অতিরিক্ত ক্ষিধে

ইনসোমনিয়া হওয়া বা বেশি ঘুমোনো

ড্রাই আইজ এবং চোখের অন্যান্য সমস্যা

ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি পাওয়া

ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিজর্ডারের কারণ

অভ্যাসের দরুণ নির্ভরতা তৈরি হওয়া

প্যাথোলজিকাল গ্যাম্বলিং বা সাবসট্যান্স অ্যাবিউজ মতো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যাবলি থাকা

মস্তিস্কের হোয়াইট ও গ্রে ম্যাটারে পরিবর্তন আসা যার ফলে স্মৃতি, একাগ্রতা, পরিকল্পনা, গুরুত্ববিচার প্রভৃতিতে বিঘ্ন ঘটে

মস্তিস্কের প্রি-ফ্রন্টাল অংশেও পরিবর্তন আসে যার ফলে মস্তিস্কের প্লেজার সেন্টারের উত্তেজনা বেড়ে যায়

ভ্যারিয়েবল রিইনফোর্সমেন্টের দ্বারা নিজের ইমিডিয়েট গ্র্যাটিফিকেশনকে স্যাটিসফাই করা অর্থাৎ যা চাইছেন তা তৎক্ষণাৎ ই পাওয়া যাচ্ছে এবং ক্রমাগত তা চলতেই থাকছে

কোনও বায়োলজিকাল প্রি-ডিসপোজিশন থাকলে যেমন বিভিন্ন নিউরো ট্রান্সমিটার ডোপামিন, সেরোটনিন প্রভৃতি হ্রাস

চিকিৎসা (ট্রিটমেন্ট)

গ্রুপ, ফ্যামিলি থেরাপি

ডায়ালেক্টিকাল বিহেভিয়ারাল থেরাপি

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি

আর্ট বা মুভমেন্ট থেরাপি

রিয়্যাকশন থেরাপি

মাইন্ডফুলনেস প্র্যাক্টিস

ফ্যামিলি সাইকো এডুকেশন

ফার্মাকোথেরাপি

 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ANINDITA RAYCHAUDHRY ANINDITA RAYCHAUDHRY @raychaudhry

Psychological Counsellor, Writer and Columnist.

Comment