অঙ্গপ্রতঙ্গ দালালচক্র রুখতে প্রয়োজন 'ব্রেনডেথ'-এর পরিসংখ্যান
অন্য রাজ্যে প্রশাসনিক গাফিলতির জন্য এখনও এই নিয়মটি চালু করা যায়নি
- Total Shares
মাঝে মধ্যেই খবরের কাগজে কিংবা শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে সাঁটা একটা ছোট বিজ্ঞাপন "কিডনি চাই'' আমাদের অনেকেই চোখে পরে। অনেক সময় এইসব বিজ্ঞাপন-দাতারা সত্যি যেমন একটি অসহায় পরিবারের যোগাযোগ আবার অনেক সময় এইসব বিজ্ঞাপনের পেছনে থাকে কিডনি বা অঙ্গপ্রতঙ্গ পাচারকারী দালালচক্র।
আমাদের রাজ্যে এই অঙ্গপ্রতঙ্গ পাচারের দাদাগিরি রুখতে কোনও রকম কড়াকড়ি নেই বললেই চলে। গণদর্পন দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে চলেছে।
যে সব রোগীর ব্রেনডেথ হয়েছে শুধুমাত্র তাঁদের অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজে ব্যবহার করা হয়
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে আমরা অনেক বার প্রস্তাব দিয়েছি এই পাচার চক্রের রমরমা কমানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল যেখানে যেখানে আইসিইউ ও আইটিউ রয়েছে সেই সব প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক মাসে কতজন রোগীর 'ব্রেনডেথ' হয়েছে তার একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এই তালিকাটিতে থাকবে রোগীর নাম, বয়স, মৃত্যুর কারণ ও ঠিকানা।
এই নিয়মটি প্রথম চালু হয় তামিলনাড়ুতে। তারপর ধীরে ধীরে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও কেরল অনুসরণ করে। যদিও কেরল অনেক পরে আসে।
আমাদের রাজ্যে মানবেন্দ্র রায় যখন স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন, তখন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত যতজন স্বাস্থ্যসচিব এসেছেন তাঁদের সকলের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি ও এই মর্মে চিঠিও দিয়েছি। আমাদের দাবি যুক্তি সঙ্গত বলে মেনে নিলেও কোনও ক্ষেত্রেই এই বিষয় আর তেমন কথা এগোয়নি। তাই আজ পর্যন্ত এটা নিয়মে পরিণত করা সম্ভব হয়নি।
তালিকাটি প্রকাশ হলে কিডনি বা অঙ্গপ্রতঙ্গ পাচার দলগুলোর রমরমা অনেকঅংশে হ্রাস পাবে বলে আমার বিশ্বাস
স্বাভাবিক নিয়মে এই তালিকাটি প্রকাশ হলে কিডনি বা অঙ্গপ্রতঙ্গ পাচার দলগুলোর রমরমা অনেকঅংশে হ্রাস পাবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে যদি ব্রেনডেথ-এ মৃতের সংখ্যাটা জানাই না যায় তা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
যে সব রোগীর ব্রেনডেথ হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁদের অঙ্গপ্রতঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজে ব্যবহার করা হয়। আইসিউ অথবা আইটিইউতে থাকাকালীন মৃত্যু হলে তৎক্ষণাৎ সেই রোগীকে ভেন্টিলেশনের সাহায্যে তাঁর অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো বাঁচিয়ে রাখা হয় যাতে সেগুলো অন্য কারও শরীরে প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নিয়মটি প্রথম চালু হয় তামিলনাড়ুতে
শুধুমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতির জন্য এখনও এই নিয়মটি চালু করা যায়নি। আমাদের একটা কথা বুঝতে হবে যে অঙ্গপ্রতিস্থাপনের বিষয়ে কড়াকড়ি না করা যায় তাহলে কোনও রোগীর প্রাণ বাঁচাতে অঙ্গের প্রয়োজন পড়লে তা মিলবে না।
দিলচাঁদ সিংহের সুস্থ হয়ে তাঁর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গ যে নিচ্ছে সেটা কী ঠিক? আমার মনে হয় না। কারণ দিলচাঁদ ঝাড়খণ্ডের রোগী যে চিকিৎসা করতে এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসেছিল। প্রতিস্থাপনের জন্য তাঁর হৃদপিণ্ডটি এলো বেঙ্গালুরুর থেকে আর যেই চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করলেন তিনি এলেন দক্ষিণ ভারত থেকে। শুধু মাত্র রাস্তা "গ্রিন করিডোর" করে দেওয়া ছাড়া আমাদের শহরের কৃতিত্ব এখানে কতখানি?
দিলচাঁদ সিংহের সুস্থ হয় তাঁর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গ যে নিচ্ছে সেটা কী ঠিক?
তাই দিলচাঁদ সিংহের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের আনন্দে মেতে থাকলেই চলবে না, বরং আমাদের ভাবতে হবে যে কী ভাবে আমরা সফল ভাবে আমাদের রাজ্যে এই নিয়মটি ঠিক মতো চালু করে আরও অনেক বেশি রোগীকে বাঁচাতে পারি।
সারা পূর্ব ভারত তথা উত্তর পূর্ব ভারতে এই প্রচার আন্দোলনে আমরা নেতৃত্ব দিচ্ছি।

