একটা অলস টুইট কী ভাবে বদলে দিল স্লিপার ক্লাসের পরিস্থিতি
কী ভাবে সমস্যা কথা জানালে দ্রুত কাজ হয় রেলে জানুন যাত্রীরা
- Total Shares
শুত্রুবার ঠিক সময়েই পুরী স্টেশন থেকে ট্রেনটা ছেড়েছিল। এসি কম্পার্টমেন্টে আসন ফাঁকা ছিল না। তাই বহুদিন বাদেই পুরী এক্সপ্রেসের স্লিপার ক্লাসের টিকিট কেটেছি। শেষ মুহূর্তের টিকিট, তাই হয়ত দরজা দিয়ে উঠে একেবারে প্রথম কুপটিতেই আমাদের আসন নির্দিষ্ট হয়েছিল।
কিন্তু ট্রেন ছাড়তেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। দরজা ও আমাদের কুপের মাঝখানের জায়গা লোকে লোকারণ্য। এদের মধ্যে কার টিকিট রয়েছে বা কে বিনা টিকিটে যাত্রা করছে সে বিষয় আমি নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু এদের কারুরই যে সংরক্ষিত কামরার টিকিট ছিল না সে বিষয় আমি শতকরা একশো ভাগ নিশ্চিত ছিলাম। এমন ভাবে জায়গা দখল করে ছিল তারা যে বৈধ যাত্রীরা ট্রেনের শৌচালয়তেও যেতে পারছিলেন না। এর মধ্যে একজন আবার আবদার করে বসলেন যে যতক্ষণ আমরা শুতে না যাচ্ছি ততক্ষন যেন তাকে আমাদের আসনে বসতে দেওয়া হয়। আমি অবশ্য সেই অনুরোধ রক্ষা করিনি।
ট্রেনে তখন তিলধারণের জায়গা ছিল না
ট্রেন সাক্ষীগোপাল স্টেশনে ঢুকতেই আরও বেশি কিছু 'অবৈধ' যাত্রী আমাদের কম্পার্টমেন্টে প্রবেশ করলেন। দরজার সামনে তখন আর তিলধারণের জায়গা নেই। অনেকেই তাই ততক্ষণে আসন সংলগ্ন প্যাসেজে ঢুকে পড়েছেন। আর কোনও উপায় না দেখে আমি আমার আসনে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লাম। 'অবৈধ' যাত্রীদের ভুলে নিজের স্মার্টফোনে মনোনিবেশ করলাম।
হঠাৎ কী একটা মনে হল। কামরার ভিতরকার ছবি তুলে দিলাম টুইট করে। আমার টুইটের সঙ্গে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, প্রধানমন্ত্রী দপ্তর, দক্ষিণ পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব উপকূল রেলের টুইট অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করে দিলাম। টুইটটা অবশ্য নাম কে ওয়াস্তেই করা। কারণ আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে রেলের তরফ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। দিনের বেলাতেই নেওয়া হয় না তো এই ভর সন্ধ্যাবেলাতে আর রেল আধিকারিকরা কী ব্যবস্থা নেবেন! তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চলে গেল।
@RailMinIndia @PiyushGoyalOffc @PMOIndiaThis is our Reserve Sleeper compartment, GRP/RPF doing nothing,,Please do something PNR:6213967471,TRAIN:12838,DOJ:18-08-18,SL,PURI-HWH,Dep:20:20,ANJAN SARMA+5 S1 9,S1 10,S1 11,S1 12,S1 13,S1 14, pic.twitter.com/WhM5k9F1mj
— anjan sarma (@anjan6600) August 18, 2018
পরের স্টেশন খুরদা রোড। ট্রেন স্টেশনের ঢোকার মুখে মনে হল কোনও ভিআইপি মুভমেন্ট রয়েছে। প্লাটফর্ম পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। বেশ কয়েকজন সিনিয়র আধিকারিকের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম, একবার বলে দেখলে কেমন হয়? হয়ত ভিআইপির সামনে অভিযোগ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হবে।
কিন্তু এ যে কোনও ভিআইপি মুভমেন্ট নয় সে ভুলটা ভাঙলো ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকতেই। হে হে করে পুলিশকর্মীরা উঠে এলেন আমাদের কামরায়। সকলকে সংরক্ষিত আসনের টিকিট দেখতে বললেন। যারা পারলেন না তাদের রীতিমতন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দিলেন। মিনিট দুয়েক ট্রেন দাঁড়িয়েছিল প্লাটফর্মে আর এর মধ্যেই ম্যাজিকের মতো সবক’টি স্লিপার কোচের ভিড় পাতলা হয়ে গেল।
Thank you very much for your quick action & response Sir,,and special thanks to Railway Police for prompt action ????
— anjan sarma (@anjan6600) August 18, 2018
এখানেই শেষ নয়, দু'জন ভ্রাম্যমান পুলিশ কর্মীকে দেখলাম ট্রেনে আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। পরবর্তী স্টেশনগুলোতে কেউ উঠতে গেলেই আগেই টিকিট পরীক্ষা করে হচ্ছে। বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ কী এমন হল যে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের জন্যে রাজকীয় ব্যবস্থা।
ট্রেন ভুবনেশ্বর পৌঁছানোর ঠিক আগে এক পুলিশ কর্মী আমার কাছে এসে জানতে চাইলেন যে আমি কি সেই ব্যক্তি যে টুইটারে অভিযোগ জানিয়েছি। আমি হ্যাঁ বলতেই তিনি বললেন, "যদি পারেন তো দয়া করে আর একটি টুইট করে জানিয়ে দেবেন যে কাজ হয়েছে। মানে, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।"
রেল সত্যি সত্যিই যে ব্যবস্থা নিয়েছিল তা অনস্বীকার্য। ডিজিট্যাল যুগে পৃথিবীটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। তাই তো আমরা খুব দ্রুত অভিযোগ জানাতে পারি। আমি খুশি যে আমার অভিযোগের খুব দ্রুত সাড়াও পাওয়া গেছে রেলের পক্ষ থেকে। আমি একটাই পরামর্শ দেব যে রেলের উচিত ডিজিট্যাল দুনিয়ায় এই অভিযোগ জানানোর পরিধি আরও বাড়াতে।
সকলের টুইটার আছে এমন নয়। ফেসবুক কিংবা এসএমএস কিংবা ওয়াটসঅ্যাপেও যেন অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা হয়। পারলে, টিকিটতেই যেন এই অভিযোগ জানানোর পদ্ধতিগুলো দিয়ে দেওয়া হয়।
পরিশেষে আমি শুধু একটা কথাই বলব। ধন্যবাদ ভারতীয় রেল। আপনাদের সময়মতো পদক্ষেপে আমার মতো সাধারণ যাত্রীর যাত্রা সত্যিই মঙ্গল হয়েছে।