শেষ পুরুষ নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোটির মৃত্যু কী ভাবে হল?

সঙ্গীর খোঁজে নয়, গন্ডার রক্ষণাবেক্ষণা তহবিলের জন্য ডেটিং অ্যাপে সুদানের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়

 |  3-minute read |   21-03-2018
  • Total Shares

পৃথিবীর শেষ পুরুষ নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোর (উত্তর আফ্রিকার সাদা গন্ডার) মৃত্যুতে একটি বড় প্রশ্ন উঠে গেল - এই বিরল প্রজাতির প্রাণীর কী অস্তিত্ব আর রক্ষা করা যাবে? বর্তমানে, আরও দুটি উত্তর আফ্রিকার সাদা গন্ডার বেঁচে রয়েছে, কিন্তু দু'টিই স্ত্রী গন্ডার।

৪৫-বছরের সুদান বার্ধক্য-জনিত সমস্যায় ভুগছিল। তার চামড়ার বেশ কয়েকটি জায়গা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল, পেশী ও হাড়েরও ক্রমশ ক্ষয় হচ্ছিল। ওআইপিজা কনজারভেন্সির (যেখানে সুদান থাকত) তরফ থেকে জানান হয়েছে, "মানুষের হিসাবে সুদানের বয়স এখন নব্বইয়ের কোঠায়।"

যত ধরণের গন্ডার রয়েছে তার মধ্যে এই নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো সবচেয়ে মিশুকে। সেভ দ্য রাইনোর ওয়েবসাইটে বলা আছে, বর্তমানে ১৯,৬৮২-২১,০৭৭টি সাদার্ন হোয়াইট রাইনো আছে। কিন্তু সুদানের মৃত্যুর সঙ্গে উত্তর আফ্রিকার সাদা গন্ডারের সংখ্যা মাত্র দুই-তে এসে ঠেকলো - সুদানের কন্যা নাজিন ও সুদানের নাতনি ফটু।

সুদানকে কেন ওষুধ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হল?

রিপোর্ট অনুযায়ী, বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিল সুদান। ওষুধ প্রয়োগের ফলে তার পেশি ও হাড়ে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছিল। শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পাচ্ছিল না সুদান। যে পশুচিকিৎসক দলটি সুদানের চিকিৎসা করছিল তারা তাই ওষুধ প্রয়োগ করে সুদানকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।

সুদানের আগে উত্তর আফ্রিকার শেষ পুরুষ সাদা গন্ডারটি ২০১৪ সালে স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছিল।

বিলুপ্তির পথে নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো 

উগান্ডার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে, দক্ষিণ সুদানের দক্ষিণ প্রান্তে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর উত্তর পশ্চিম প্রান্তে এই নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোদের দেখতে পাওয়া যেত। একটা সময় এ দেশগুলোতে শিকারের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সত্তর ও আশির দশকে তাই এই প্রজাতির গন্ডারের সংখ্যা হুট্ করে ৫০০ থেকে নেমে মাত্র ১৫ হয়ে যায়। প্রশাসনের ঘুম ভাঙে। বহু চেষ্টার পরে নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৩ অবধি এই গন্ডারের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায় - সেই সময় ৩২টিরও বেশি নর্দার্ন হোয়াইট রাইনো ছিল। তা সত্বেও শিকার বন্ধ করা যায়নি। এই প্রজাতির গন্ডারের শৃঙ্গের চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রচন্ড চাহিদা রয়েছে।

গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার আবার গন্ডারের শৃঙ্গ ব্যবসাকে সে দেশে বৈধতা দিয়েছে।

১৯৭৮ সালে জন্ম হয়েছিল সুদানের। কিন্তু সুদানের ভাগ্য ভালো যে এত দিন বেঁচে ছিল কারণ তাকে চেক প্রজাতন্ত্রে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছিল। ২০০৯তে সুদান আবার আফ্রিকায় ফিরে আসে।

rhino_032118011648.jpg১৯৭৮ সালে জন্ম হয়েছিল সুদানের

ডেটিং অ্যাপে ছিল সুদান

২০০৯ সালে চেক চিড়িয়াখানায় চারটি সাদা গন্ডার ছিল - দুটি পুরুষ ও দু'টি স্ত্রী। পরিবেশ বদল হলে মিলনে উৎসাহিত হবে - এই ভেবে তাদেরকে কেনিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। উল্টে, বয়স বেড়ে ততদিনে শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছিল সুদান।

এর পরে ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সুদানের নামে। তবে, এই অ্যাকাউন্ট সুদানের সঙ্গী খোঁজার জন্য নয়, গন্ডার রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলের জন্য। গত বছর টিন্ডারের পক্ষ থেকে সুদানকে 'সবচেয়ে উপযুক্ত অকৃতদার' (most eligible bachelor) হিসেবে আখ্যা দেন। টিন্ডার আর কঞ্জারভেন্সি জোট বেঁধে এই প্রজাতির প্রাণীদের বাঁচানোর জন্যে ৯o লক্ষ ডলার (প্রায় ৬১০ লক্ষ টাকা) তুলেছিল।

একমাত্র সারোগেট পদ্ধতিতে অন্য প্রজাতির সাদা গন্ডারের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহার করে এখন নর্দার্ন হোয়াইট রাইনোকে বাঁচানো সম্ভব।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment