রাত জেগে ইউরো ফুটবল দেখা বাঙালির লাতিন আমেরিকা সমর্থন অস্তমিত, মোহ বাড়ছে ইউরোপের প্রতি

কেবল টিভির দৌলতে ইউরোপের তারকাদের দলগুলিকে সমর্থন করছে বাঙালিরা

 |  2-minute read |   22-06-2018
  • Total Shares

সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল। সত্যিই বাঙালিদের সঙ্গে ফুটবলের কেমন যেন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক। বাঙালি জাতি হিসেবে আর কিছু পারুক না পারুক, দুটো জিনিস খুব ভালো পারে। একটা হল তর্ক, আরেকটা হলো আড্ডা। আর বাঙালিদের এই তর্ক বা আড্ডা জমে দুটো জিনিসকে কেন্দ্র করে। ফুটবল আর রাজনীতি।

তর্কপ্রিয় বা আড্ডাপ্রিয় বাঙালি রাজনীতি বা ফুটবলকে বিষয় হিসাবে পেলে চায়ের কাপে তুফান তোলে। এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালির সকল আড্ডা তর্ক এখন বিশ্বকাপ ফুটবল কেন্দ্রিক। তাই ট্রামে, বাসে, ট্রেনে, পাড়ার মোড়ে বা চায়ের দোকানে সব আড্ডা তর্কের বিষয়‌ও বিশ্বকাপ ফুটবল। বাঙালি এখন বিভক্ত আর্জেন্তিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স পর্তুগাল, স্পেন, উরুগুয়ে, জার্মানি নিয়ে। বাঙালি বিভক্ত মেসি-নেইমার-পোগবা-রোনাল্দো বা সুয়ারেজকে নিয়ে।

body_062218040105.jpgসত্তর ও আশির দশকের বাঙালি ফুটবল বলতে মূলত ব্রাজিলকেই বুঝত

তবে আগে বাঙালি এত বহুধা বিভক্ত ছিল না। বিশ্ব ফুটবলের আনন্দ নিতে বাঙালির সামনে ছিল পেলে, গ্যা রিঞ্চা, ইউসোবিও, পুসকাস বা বেকেনবাওয়ারংর খেলা।

সত্তর ও আশির দশকের বাঙালি ফুটবল বলতে মূলত ব্রাজিলকেই বুঝত। আর ব্রাজিলের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটেছিল মূলত পেলেকে দিয়ে। বিক্ষিপ্ত লগ্নে ইউসেবিও, পুসকাস বা বেকেনবাওয়ারকেও ভালবেসেছিল বাঙালি। তবে অধিকাংশ বাঙালির পছন্দের দল ছিল ব্রাজিল। ব্রাজিলের প্রতি আনুগত্যের বা ভালোবাসার সেই একচেটিয়া আধিপত্যে প্রথম বড়সড় থাবা পড়ল ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে। বিশ্ব ফুটবলে পেলের অনুপস্থিতিতে বাঙালি খুঁজে বেড়াচ্ছিল এক শিল্পী ফুটবলারকে। এই বছরই (১৯৮৬) তারা সামনে পেল ছোটখাট চেহারার এক আর্জেন্তিনীয় ফুটবলারকে। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।

body1_062218040215.jpg ১৯৮৬ সালে তারা সামনে পেল ছোটখাট চেহারার এক আর্জেন্তিনীয় ফুটবলারকে, দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা

একার কাঁধে আর্জেন্তিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করলেন মারাদোনা। ব্যাজস, তৎকালীন যুব সমাজের একটা বড় অংশ হয়ে গেল আর্জেন্তিনার সমর্থক। বাঙালির চিরন্তন ফুটবল বিতর্কে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বাদ দিয়ে নতুন একটা রাইভ্যাফলরি তৈরি হলো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সেই ধারা চলেছে

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত। ১৯৮৬ পরবর্তী পাঁচ থেকে ছ’টা বিশ্বকাপ বাঙালি কিন্তু হয় আর্জেন্তিনার সমর্থক নয়তো ব্রাজিলের সমর্থক।

body2_062218040256.jpgবাঙালিরা এখন রাত জাগে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোকাপ দেখার জন্য

ইতিমধ্যে বিশ্ব ফুটবলের সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ভারতীয় সরকারি প্রচার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনকে বাদ দিয়ে বেসরকারি মাধ্যম‌ও বিশ্ব ফুটবল, বিশেষ করে ক্লাব ফুটবল খেলা সরাসরি দেখাতে শুরু করেছে। বিশ্বকাপ ফুটবল বাদ দিলেও বাঙালিরা এখন রাত জাগে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোকাপ দেখার জন্য। এখনকার ফুটবল পাগল যুব সমাজ তো 'সিরি-আ', 'লা-লিগা' বা ইপিএলেরও ভক্ত।

ফলে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার ফুটবলারদের পাশাপাশি তাদের চোখে রোনাল্দো, ইনিয়েস্তা, জিদান, রুনি, সুয়ারেজরা মহানায়কের সম্মান পাচ্ছেন।স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বকাপের আসরে এই সব নায়কদের দলকেই সমর্থন করতে শুরু করল বাঙালি‌ও।

দেশ হিসেবে ব্রাজিল আর্জেন্তিনার সমর্থকের মধ্যে ভাগ বসাল স্পেন, ইতালি, হল্যান্ড, জার্মানি, পর্তুগাল, ইংল্যাযন্ড এমনকি সুইডেন ও ডেনমার্কের মতো দেশও। রজার মিল্লাকে আমরা প্রথম দেখি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে। গোল করার পর তাঁর সেই কোমর দুলিয়ে নাচ আমাদের অনেককেই ক্যামেরুন সমর্থক বানিয়ে দিয়েছিল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SANJU SUR SANJU SUR

The writer is a journalist.

Comment