সবরীমালা বিতর্ক: রঙ্গমঞ্চ আবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেরলে
আয়াপ্পা ভক্তরা আর রাজনৈতিক দলগুলো জানিয়েছে যে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ
- Total Shares
সবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার এবং এই সংক্রান্ত রাজনীতি নিয়ে ফের মন্দির প্রাঙ্গন উত্তাল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত জানুয়ারী মাসে পেস করা একটি হলফনামা অবশেষে ১৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট গৃহীত হয়েছে। শীর্ষ আদালত সেই হলফনামার শুনানিতে রাজি রয়েছে।
নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবার এই মামলায় নতুন কোনও পদক্ষেপ নেন কিনা তা নয় বিতর্ক এখন তুঙ্গে। আয়াপ্পা ভক্তরা অবশ্য আশা করে আছেন ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে তাদের আর্জিকে গুরত্ব দিয়েই বিচার করবেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
আয়াপ্পা ভক্তদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর তরফ থেকে মতো ৪৯টি আলাদা আর্জি পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে যেমন মন্দিরের থন্ত্রী (মুখ্য পূজারী)-র আর্জিও রয়েছে তেমনই রয়েছে পণ্ডলম রাজপরিবারের আর্জি। এই রাজপরিবারই বহু যুগ ধরে মন্দিরের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে।
পুনর্বিবেচনার আবেদনের মামলা সুপ্রিম কোর্ট সাধারণত এইভাবে খোলা আদালতে করে না। পুরোনো হলফনামাগুলোর সঙ্গে এই মামলা সংক্রান্ত আরও তিনটি নতুন হলফনামাও গৃহীত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এর ফলে, বিতর্ক আরও বেড়েছে।
মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ এখনও নিষিদ্ধ, জানিয়েছে ভক্তরা আর রাজনৈতিক দলগুলো [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সকালে যখন গগৈর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে হলফনামাগুলো পেশ করা হয় তখন বেঞ্চ জানায় যে যদি পাঁচ সদস্যের কোনও বেঞ্চ পুনর্বিবেচনার আর্জি শোনে তাহলে পুনর্বিবেচনার আরজিগুলোর সঙ্গে এই মামলা সংক্রান্ত অন্যান্য হলফনামাগুলোকেও একই মামলায় পেশ করা যেতে পারে।
বিকেল চারটে নাগাদ যখন যখন কোর্টের নির্দেশ সরকারিভাবে প্রকাশ করা হল তখন আয়াপ্পা ভক্তদের আইনজীবীদের বেশ আশাবাদী দেখাচ্ছিল। তাঁদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সবকটি হলফনামা একই মামলায় গৃহীত হলে তা বিচারকদের উপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য কারণ এর ফলে বিচারকরা বুঝতে পারবেন যে, 'আদালতের বর্তমান নির্দেশ কী ভাবে বহু মানুষের ভাবাবেগের উপর প্রভাব ফেলেছে'।
আইজীবীরা মনে করছেন তাঁরা যদি মামলাটির শুনানির প্রক্রিয়া একেবারে নতুন করে করার আর্জি জানান তাহলে আদালত এই মামলাটিকে সাত কিংবা ন'সদস্যের বেঞ্চে সরিয়ে দিতে পারে।
এদিকে, প্রতিবাদের রাজনীতি জোরকদমে চলছে কেরলে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই এই পরিস্থিতির 'ফায়দা' তুলতে চাইছে। সংবাদমাধ্যম যখন ভক্তদের প্রতিবাদকে 'রাজনীতিকরণ' আখ্যা দিতে চাইছে তখন বিজেপি ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কেরল জুড়ে মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি মিছিল বের করা হয়েছিল।
২৮ সেপ্টেম্বরের নির্দেশে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র জানিয়েছিলেন, " যে কোনও নিয়মে যদি লিঙ্গ বৈষম্যতার জন্য মহিলাদের আলাদা চোখে দেখা হয় সেই নিয়ম কোনও মতেই সাংবিধানিক নয়।"
বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা [সৌজন্যে: টুইটার]
আয়াপ্পা ভক্তরা চান যে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়স্কা মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ যেন না করেন।
আবেদনকারী আদালতে জানিয়েছে যে এই প্রথা মূলত 'প্রতিমার পবিত্রতা' করার জন্য করা হয়েছে। আর, এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিন্তু আয়াপ্পা ভক্তরা করেননি। হাতেগোনা কয়েকজন সমাজকর্মী করেছেন।
নতুন হলফনামায় কিন্তু বিশ্বাস বনাম আদালতের এক্তিয়ার, বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে, দ্বন্ধ লেগে যেতে পারে।
তবে এই মুহূর্তে সবরীমালা বিতর্কের রঙ্গমঞ্চে সুপ্রিম কোর্ট নয়, কেরলের মন্দির প্রাঙ্গন। আয়াপ্পা ভক্তদের সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে আদালতের নির্দেশ যাই থাকুক না কেন, ১৬ নভেম্বর থেকে সুর হতে চলা মকরভিলাক্কু চলাকালীন মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধই থাকবে।

