যে ইমরান খানকে আমি চিনি ও বিশ্বাস করি
ইমরান হাত ধরেই নতুন পাকিস্তানের জন্ম হবে বলে অনেকেই মনে করেন
- Total Shares
আল্লামা ইকবালের একটা শায়েরি রয়েছে যার বাংলা তর্জমা: "আপনার মনের কথা সর্বশক্তিমান। ডানা না থাকলেও, তা ওড়ার ক্ষমতা রাখে।"
কিশোরে বয়সে আমি ইমরান খানের সঙ্গে লাহোর জিমখানা ক্লাবের হয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলতাম।
আমার বাবা মা অবশ্য সব সময়েই চাইতেন যে আমি ক্রিকেট ছেড়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি আর কিং এডওয়ার্ড মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ি। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক ইমরান খান আমাদের শিখিয়েছিলেন যে তোমার মনে যদি কিছু করবার সদিচ্ছা থাকে তা হলে মন যা চাইছে তাই তুমি পূরণ করতে পার।
১৯৮৫ সালে ইমরানের নেতৃত্বে ঢাকা সফরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম যে শুধুমাত্র ইমরানকে এক ঝলক দেখবার জন্যে শয়ে শয়ে বাংলদেশি ঢাকার বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তখনও বাংলাদেশিদের মনে অনেকটাই তাজা। তা সত্ত্বেও তারা ক্রিকেটার ইমরান খানকে ভালোবাসতেন।
ঢাকা বিমানবন্দরে ইমরানকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল
মাঠ ও মাঠের বাইরে দু'জায়গাতেই ইমরান খান তারকা ছিলেন। তাঁর দেশাত্মবোধ, তাঁর কঠিন শ্রমের প্রতি একাগ্রতা আর আমার মতো তরুণ পাকিস্তানিদের উজ্জীবিত করবার ক্ষমতা সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য চরিত্র ছিলেন ইমরান। আমার কেরিয়ারের অনুপ্রেরণা ও অভিভাবক তো তিনিই। আমার গান ও লেখাকে হাতিয়ার করে আমি আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে চেয়েছিলাম। এবং এর জন্যে একা ইমরান খানই আমাকে উজ্জীবিত করবার পক্ষে আদর্শ ছিলেন।
গত তিরিশ বছর ধরে আমি একধারে শিল্পী, সমাজকর্মী এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেছি। শেষ চার বছর ধরে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আমি পাকিস্তান থেকে পোলিও নিরাময়ের কাজ করে চলেছি।

২০১৪ সাল থেকে পাকিস্তান হিংসা ও জঙ্গি সমস্যায় জর্জরিত। দেশে শ'খানেকের উপর পোলিও কর্মী, বিশেষ করে মহিলা ও নিরাপত্তা রক্ষী গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যেই ৩০৬ থেকে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আমরা এখন আটে পৌছেছি এবং খুব শীঘ্রই আমরা পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছি। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ২২ বছর পর এবার ইমরান দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আর তাঁর এই সাফল্যের ফর্মুলাটা কিন্তু একই রয়েছে: 'মন যা স্বপ্ন দেখছে বা মন যা করতে ইচ্ছে করছে তার পিছনে ছুটতে থাক, সাফল্য আসবেই।'
২০১৮ সালে পিটিআই প্রতিদ্বন্ধি পিএমএলএন এবং পিপিপিকে সাধারণ নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। এর পিছনে কৃতিত্ব কিন্তু একজনের উপরেই বর্তায়। তিনি ইমরান খান যিনি দু'দশক ধরে পাকিস্তানে পরিবারতন্ত্র রাজনীতি বন্ধ করবার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ইমরানের এই লড়াই একবারে মসৃণ ছিল না, প্রতি মুহূর্তে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।
মাঠ ও মাঠের বাইরে দু'জায়গাতেই ইমরান তারকা
যদিও আমি সর্বদাই ইমরানকে বন্ধু হিসেবে সমর্থন করে এসেছি আমি কিন্তু কখনই পিটিআইয়ের সমর্থক ছিলাম না। কিছুদিন আগেই একটি বিষয় নিয়ে পিটিআইয়ের সমালোচনা করেছিলাম আমি। তখন ইমরান আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে পিটিআইয়ের সদস্যরা আমাকে এই বিষয়ে আর সমালোচনার সুযোগ দেবেন না। সদ্য শেষ হওয়া সাধারণ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। বিরোধী দল অবশ্য বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ করেছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল অবশ্য তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে যে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালে অনেক স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে পাকিস্তানে।
এ বছর জঙ্গি হানা ও হিংস্রতার মাঝেও সর্বোচ্চ ভোটার নিজেদের ভোটদান করেছেন। প্রচুর পরিমাণে মহিলা ও তরুণ ভোটার এ বছর ভোটদান করেছেন এবং সংবাদমাধ্যমগুলো প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরেই ভোটের খবর সম্প্রচার করেছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে ইমরানও নিজের ভাষণে জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি রিগিং অভিযোগগুলোর তদন্তের নির্দেশ দেবেন।
নতুন পাকিস্তান কি ইমরানের হাতেই গঠিত হবে?
আমি নিশ্চিত বহু ভারতীয়ই জানতে আগ্রহী যে ইমরান খান কেমন প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা স্বাভাবিক। কারণ ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাকিস্তানী হলেন ইমরান খান। বলিউডের তারকা থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, রাজনৈতিক নেতা সকলেই ইমরান মোহে আচ্ছন্ন।
নির্বাচন জয়ের পর নিজের বক্তৃতায় ইমরান ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আর্জি জানিয়েছেন। আমার মনে হয় দুই দেশের সম্পর্ক জোড়ার এটাই সেরা সময়।
পাকিস্তানের শাসন এখন ইমরানের হাতে। আমি আশাবাদী ইমরান নতুন পাকিস্তানের জন্ম দেবেন।

