শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে শুরু হতে চলেছে সমগ্রশিক্ষা অভিযান
“প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার পেছনে সিবিএসই-র কোনও হাত নেই”
- Total Shares
আমাদের দেশে জাতীয় শিক্ষা প্রকল্পটি দু'টি ভাগে বিভক্ত - সর্বশিক্ষা অভিযান ও রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান। এর ফলে সবকটি রাজ্যকে পড়ুয়াদের শিক্ষার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
সর্বশিক্ষা অভিযানে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, আর নবম ও দশম শ্রেণীকে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে স্কুল শিক্ষার বিষয়টিকে ভাগ করলে বিভিন্ন পরিকাঠামোগত ও অন্যান্য আরও সমস্যা খাড়া হচ্ছে।
প্রারম্ভিক শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপকেও যেমন দু'টি প্রকল্পের একটিতেও রাখা হয়নি তেমনই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাও এই প্রকল্পের অঙ্গ নয়।
শিক্ষার এই দু'টি দিককে আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনা কারণ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ গোড়ার পেছনে দু'টি ধাপের ভূমিকা বিশাল। এই দিকগুলোকে মাথায় রেখেই দেশ জুড়ে সমগ্রশিক্ষা অভিযান চালু করা হবে।
২০১৮-১৯ সালের বাজেটে প্রকল্পটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সবক'টি রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে চালু হয়ে যাবে সমগ্রশিক্ষা অভিযান।
কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় প্রকল্প প্রসারিত করা হবে এবং মেয়েরা এখন দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুবিধা পাবে
আমাদের দেশে কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় প্রকল্পটির সাহায্যে আজ বহু পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর নারীরা স্কুল যেতে পেরেছে। কিন্তু এই প্রকল্পটি জনপ্রিয়তা লাভ করলেই এতেও বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়ে গেছে। এই প্রকল্পটিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী অবধি মেয়েদের পড়াশোনার সুবিধা দেয়া রয়েছে। তাই এবার এই প্রকল্পটিকে প্রসারিত করা হবে এবং নারীরা এখন দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুবিধা পাবে। এই প্রকল্পেটিতে ছাত্রীদের জন্য আবাসিক স্কুল তৈরি করা হবে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় রাজ্যগুলি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে সেই রাজ্যে শিক্ষার কোন খাতে ঠিক কত টাকা বরাদ্দ করবে।
আমি শিক্ষা সচিব হওয়ার পর প্রথম তিন মাসের মোটামুটি ২৪টি রাজ্য চষে ফেলেছিলাম। তখন আমি বহু শিক্ষা মডেল দেখেছি যেগুলো প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলো ব্যবহার করে। তারা নিজেদের আর পাঁচটা ভালো স্কুলের সামনে আদর্শ উপমা হিসেবে খাড়া করতে পারে। এ ভাবে আমি মোটামুটি ১১১টি মডেল সিস্টেম দেখেছি।
সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় রাজ্যগুলি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে সেই রাজ্যে শিক্ষার কোন খাতে ঠিক কত টাকা বরাদ্দ করবে
মহারাষ্ট্রের থানে থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত একটি গ্রাম যার নাম বস্তেপাড়া, সেখানকার একটি স্কুলে গিয়ে তাক লেগে গিয়েছিল। ওই স্কুলে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি তা সত্ত্বেও স্কুলটি সম্পূর্ণ ভাবে ডিজিটাল। ভাবতে যায়! স্কুলের পড়ুয়ারা ট্যাব ও মোবাইলের সাহায্যে পড়াশোনা করছে। ওই স্কুলের শিক্ষক সন্দীপ গুন্ড সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ট্যাবলেট, মোবাইল ও কম্পিউটারের ব্যাটারি চার্জ করার ব্যবস্থা করেছেন।
মহারাষ্ট্রের ৬০ হাজার স্কুল এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে শুরু করেছে। কোনও রকম সরকারি অনুদান ছাড়াই শুধু মাত্র বিভিন্ন এনজিও এবং সিএসআর প্রকল্পের সাহায্যে ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ জোগাড় করে এই কাজে লাগিয়েছে বিভিন্ন গ্রামগুলি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সব ধরণের ভালো মডেল ব্যবহার করা হচ্ছে, সরকার চেষ্টা করছে সেগুলো চিহ্নিত করে অন্যদের কাছে তুলে ধরতে এবং সেই সব মডেল অন্যান্য স্কুলগুলিতে কাজে লাগাতে। প্রয়োজনে বিভিন্ন মডেল আমরা আরও উন্নত করারও চেষ্টা করব।
আমি উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলে পরিদর্শন করতে গিয়ে ওখানকার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বসেই দুপুরের খাওয়ার সেরেছিলাম। আমাদের দেশে মিড ডে মিলের বেশ দুর্নামই রয়েছে তার গুণমানের জন্য। কিন্তু ওই স্কুলের খাবারটি ছিল অত্যন্ত সুস্বাদু। আমি স্কুলের আধিকারিকদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি 'অক্ষয়পাত্র' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই মিড ডে মিল রান্না করে। তখনই আমি ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আর এখন আমাদের চেষ্টা হল বিভিন্ন রাজ্যের স্কুলগুলিতেও এই সংস্থার মাধ্যমে মিড ডে মিল পৌঁছে দেওয়া। প্রথমে সংস্থাটি মোটে দু'টি জেলায় মোট ১৫ লক্ষ পড়ুয়ার জন্য রান্না করত। আজ তাঁরা মোটামুটি ৩০ লক্ষ স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মিড ডে মিল রান্না করেন। আমি ওই সংস্থার আধিকারিকদের পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলোতেও মিড ডে মিল দিতে পারেন সে বিষয় নিয়েও কথা বলেছি।
আমাদের দেশে মিড ডে মিলের বেশ দুর্নামই রয়েছে তার গুণমানের জন্য
এবার আসি আমাদের দেশের পরীক্ষা ব্যবস্থার দিকটায়। এই যে সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সামনে এসেছে তার পেছনে সিবিএসই-র কোনও হাত নেই। যেই ব্যাঙ্ক ও যে সব অসাধু শিক্ষক-শিক্ষিকা এতে জড়িত ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ঘটনাটা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাই প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করা যায় এবং ত্রুটিমুক্ত করা যায়, সে সম্বন্ধে আমার চিন্তা-ভাবনা করছি।
লেখকের অনুমতিক্রমে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখিত

