সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১২৫: কেন তিনি মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় জোর দেন

গ্যালিলিও সেই সময় ইতালীয় ভাষায় নিজের গবেষণা লিখে গিয়েছিলেন

 |  3-minute read |   01-01-2019
  • Total Shares

এ দেশে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার পুরোধা হলেন অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু। যদিও সত্যেন্দ্রনাথ নিজে বহু ভাষা জানতেন, বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা তো তিনি জানতেনই এর পাশাপাশি বিশেষ করে ইতালীয়, জার্মান, ফরাসি ভাষাও জানতেন। তিনি চিনা ভাষাও শিখেছিলেন। অর্থাৎ তাঁর কোনও ভাষার প্রতি অনীহা ছিল এ কথা কখনও মনে করা ঠিক হবে না।

তিনি নিজে বহু ভাষা জানলেও তিনি চেয়েছিলেন এ দেশে যে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করা হয়। প্রশ্ন হল কেন?

satyendranath-bose_010119010126.jpegনিজে বহু ভাষা জানতেন সত্য়েন্দ্রনাথ বসু

সত্যেন্দ্রনাথ  বসু যখন ছাত্র ছিলেন সেই সময় বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হলে জার্মান ভাষা শিখে নিতেই হত। বিজ্ঞান বিষয়ক বেশির ভাগ জার্মান ভাষায় লেখা বলেই জার্মান জানার দরকার হত। এ ছাড়া ইংরেজি তো ছিলই। তিনি ভেবেছিলেন যে যদি বিদেশি ভাষা না শিখলে বিজ্ঞান চর্চা না করা যায় তা হলে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে বিজ্ঞান শিক্ষা কঠিন হয়ে যাবে। সর্বসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটাতে গেলেও যদি তাঁদের প্রথমে ভাষার প্রাচীর লঙ্ঘন করতে হয় তা হলে বিজ্ঞান শিক্ষা কঠিন হয়ে যাবে।

তাই তিনি চেয়েছিলেন যে যাদের পক্ষে অন্য কোনও ভাষা শেখা কোনও কারণে সম্ভব নয়, তাদেরও যেন বিজ্ঞানের শিক্ষা হয়। তাই তিনি চেয়েছিলেন যেন বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা করা হয়।

এ ব্যাপারে তাঁর কাছে বেশ কয়েকটি উদাহরণও ছিল। তিনি যখন ইতালীয় ভাষায় লিখলেন তখন দেশের মানুষ জানতে পারলেন তাঁর আবিষ্কারের কথা। তখনই চার্চের যাঁরা কর্তাব্যক্তি তাঁরে ক্ষেপে উঠলেন গ্যালিলিওর প্রতি। তিনি কথ্য ইতালীয় ভাষায় তাঁর গবেষণার কথা লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সেই সময় ইয়োরোপে বিজ্ঞানের চর্চা হত ল্যাটিন ভাষায়।

জাপানের উদাহরণও তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। জাপানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে যত বড় মাপের আলোচনা ও বিতর্কসভাই হোক না কেন, সে সবই হয় পুরোপুরি জাপানি ভাষায়। এই সব ব্যাপারই তাঁকে মাতৃভাষায়, মূলত বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি সারা জীবন চেয়েছিলেন, কোনও একটি ভাষা যেন বিজ্ঞান শিক্ষার পক্ষে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়।

তাঁর পরে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষা এগোয়নি এ কথা বলা যাবে না। এ কথা ঠিক যে এখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার প্রবণতা বেড়েছে। তবে এমন একটা সময় ছিল যখন ম্যাট্রিকুলেশনের কেনও বই বাংলায় পাওয়া যেত না কিন্তু এখন দশম শ্রেণীর সব বই বাংলায় হয়েছে। স্নাতক স্তরে তো বটেই, কেউ চাইলে স্নাতকোত্তর স্তরেও এখন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার অনেকাংশে বেড়েছে।

satyenboseimg_010119010229.jpgসত্যেন্দ্রনাথের উদ্য়োগে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয় বাংলায়

এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনা করলে চলবে না, কারণ পশ্চিমবঙ্গ হল একটি বৃহৎ দেশের মধ্যে একটি রাজ্য। তাই বাংলাদেশের কথাও বিবেচনা করতে হবে। সেখানেও বাংলায় ভাষার প্রচার ও প্রসার যথেষ্ট ভাবে এগোচ্ছে।

ভাষার প্রসারের দিক দিয়ে বিচার করলে বাংলা ভাষা এখন পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১২৫ বছর পার করলেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য যে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন তারা তাঁর জন্মের ১২৫ বছর সে ভাবে পালনই করেনি। তবে আমরা বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর জন্মের ১২৫ বছর পালন করেছি।

fdc_010119035022.jpg

stamp_010119035224.jpgসত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত বিশেষ খামে ডাকটিকিক ও স্মারক ডাকটিকিট

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য তিনি বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথম দিন থেকেই এখান থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশ হয়ে আসছে – জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকা। বাংলা ভাষায় এখান থেকে বই প্রকাশ করা হয়, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সত্যেন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম পুরো পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গত এক বছর ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে আমরা চেষ্টা করেছি। রাজ্যে এক বছরে তাঁর জীবন কর্মের উপরে ১০৯টি বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছে এখানে সেখানে বক্তৃতা করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

তাঁর উপরে নানা প্রতিযোগিতা হয়েছে, যেমন ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা। ১ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিনেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে, এটিই হবে সমাপ্তি অনুষ্ঠান।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সও খুব সুন্দর ভাবে জাতীয় এই অধ্যাপকের জন্মের ১২৫ বছর পালন করছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Dr SUMITRA CHAUDHURI Dr SUMITRA CHAUDHURI

Tresurer & former Secretary, Bangiya Bijnan Parisad| Former Principal, Victoria College for Women

Comment