মেধাতালিকায় পরিবর্তন কী তা হলে দলবদলের পুরস্কার

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর পরিবর্তন যে কোনও ক্ষেত্রেই আপত্তিকর

 |  3-minute read |   25-08-2018
  • Total Shares

এর আগেও বহু বার স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধাতালিকা প্রকাশে অনিয়ম ঘটেছে। অনেক সময় পরীক্ষার্থীরা আবেদন-নিবেদন করতে গিয়ে মারধর পর্যন্ত খেয়েছেন। তারপর তা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এই সব কারণে নানা সময় কমিশনকে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

তবে এবার দেখা গেল স্কুল সার্ভিস কমিশনের ‘ওয়েট লিস্ট’-এ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশচন্দ্র অধিকারী যিনি সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর নাম ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার দু’দিন পর রাতারাতি ওয়েটিং লিস্টটি পাল্টে যায়। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেধা তালিকায় প্রত্যেকের নাম পিছিয়ে গিয়েছে। এবং এর ফলে কেউ কেউ কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাক নাও পেতে পারেন।

body1_082518033045.jpgচূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর পরিবর্তন যে কোনও ক্ষেত্রেই আপত্তিকর

মেধাতালিকার ভিত্তিতে বহু মানুষ চাকরি পেয়ে থাকেন। চূড়ান্ত তালিকা একবার প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর তার পরিবর্তন যে কোনও ক্ষেত্রেই আপত্তিকর। কারণ পরীক্ষার নম্বর ঠিকঠাক করে ট্যাবুলেশন সিট তৈরি করে তারপর একটি নির্ভুল চূড়ান্ত তালিকা সময় মতো প্রকাশ করাই হল কমিশনের কাজ। সেটাই স্বাভাবিক এবং কাঙ্ক্ষিত। 

এখানে তর্কের খাতিরেও যদি এই পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া হয় তা হলে এবার প্রশ্ন আসবে শুধু মাত্র একটি নামের ক্ষেত্রে এই বদলটা কেন হল? এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে একজন প্রাক্তন মন্ত্রী যিনি দল বদল করার পরেই তাঁর মেয়ের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটল তাহলে তো যে কোনও মানুষের মনে হবে যে এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও রহস্য আছে।

meritbody3_082518033236.jpgমেধাতালিকা নিরপেক্ষ হবে সেটাই সবাই আশা করেন

রহস্যটা ঠিক কী তা নিয়ে নানা স্তরে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন কমিশন পরিচালনের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন। তবে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এতে সন্দেহ আরও দানা বাঁধছে। আগের প্রকাশিত তালিকার সঙ্গে নতুন তালিকাটির কোথাও কোনও অমিল নেই, শুধু মাত্র একটি নাম হঠাৎ এক নম্বরে চলে এসেছে।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে যেটুকু বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে তিনি এই বিষয়টি নিয়ে তেমন চিন্তিত নন। ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত না হলে তো চলবে না। যে কোনও ক্ষেত্রেই তালিকায় যে কোনও রকম গরমিল থাকবে না এবং একটি নিরপেক্ষ তালিকা প্রকাশ করা হবে সেটাই তো আমরা আশা করি। আর সেটা যদি না হয় তাহলে সেই ব্যতিক্রম মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি এই ব্যতিক্রম যদি মাত্র একটা ক্ষেত্রে ঘটে এবং যাঁর  ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি ঘটেছে তাঁর পিতা যদি দল বদল করে শাসক দলে যোগ দেন তাহলে প্রশ্ন আরও বেশি করে উঠবে।

কমিশনের উচিত তারা দ্রুত যেন এই গরমিল নিয়ে স্পষ্ট করে নিজেদের বক্তব্য জানান। যদি কর্তৃপক্ষ যথাযথ কোনও যুক্তি দর্শাতে পারেন তা হলে সব প্রশ্ন এবং সন্দেহ নিরসন হবে। তাঁরা কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে না পারেন তাহলে এই সন্দেহ আরও বাড়বে। এর ফলে সাধারণ মানুষ মনে করবেন দলের খাতায় একজন নাম লিখিয়েছেন বলে তাঁকে পুরস্কৃত করা হল।

meritbody2_082518033111.jpgমেধাতালিকার ভিত্তিতেই চাকরি পাওয়া যায়

কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ শিক্ষাব্যবস্থার কাছে যে নিরপেক্ষতা আশা করেন তা জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে। এটা একটি অনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। আগের সরকারের আমলেও একই ঘটনা ঘটেছে। 

কমিশনের আধিকারিকদের সরকারি নিযুক্ত করেন এবং আমার মনে হয় সরকারকেই এসব বিষয় রাশ টানতে হবে। সরকারকেই নজর রাখতে হবে যাতে কমিশন প্রভাবিত না হয় এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ACHINTYA BISWAS ACHINTYA BISWAS

Former VC, Gour Bangla University

Comment