জানেন কী একটানা বসে কাজ করার ফলে শরীরের কতটা ক্ষতি করছেন?
হাতের ও পায়ের স্নায়ুর অক্ষমতা দেখা দিতে পারে
- Total Shares
আমাদের সবারই এখন শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। পেশাগত কারণে আমরা অনেকেই এখন দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করি। বসে কাজ করায় পরিশ্রম অনেক কম হয় ঠিকই কিন্তু আমাদের অজান্তেই শরীরে বাসা বাঁধে অনেক রোগ। তাই সারাদিন বসে কাজের ক্ষতিকর পরিণাম ও নানা অসুখের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে।
হিসেব করলে দেখা যাবে যে অফিসে প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় দশ ঘণ্টা একটা চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়। ফলে দিনের শেষে ঘাড়ে ও মাথায় ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এর জেরে এখন অনেক অল্পবয়সীদের স্পন্ডিলোসিস ধরা পড়ছে। আগে সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী লোকজনদের মধ্যে সমস্যাটা দেখা যেত। ঘাড় গুঁজে মোবাইল ব্যবহার বা কাজের ডেস্কে বসে এক নাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ করার জন্যও এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

প্রথমদিকে ব্যথা তেমন ভাবে অনুভূত না হলেও পরে এটা বেড়ে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় যখন শুধু ঘাড়েই নয়, ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ে হাতেও। সর্বক্ষণ হাতদুটো ঝিনঝিন করতে থাকে। দিনের শেষে কাঁধেও ব্যথা হয় ও পিঠের উপরের দিকে একটা ক্লান্তি অনবরত হতে থাকে। কোমরের নানা সমস্যার পাশাপাশি পায়ে রক্ত চলাচল করতে পারে না।
যাঁরা দীর্ঘক্ষণ হাত দুটোকে টেবিলের উপরে রেখে কম্পিউটারে কাজ করেন, তাঁদের কব্জির হাড়গুলির মধ্যে যে মূল স্নায়ুটি থাকে (মিডিয়েন নার্ভ) তার উপর অনবরত চাপ পড়ে বলে কব্জি দুটো ব্যথা করে।
আবার এর ফলে কারপল টানেল সিনড্রোম হতে পারে। কারপল টানেল সিনড্রোম হলে হাত দুটো ঝিনঝিন করে কিংবা হাত বেশিক্ষণ নিচু করে রাখলে যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। এই সমস্যাটাও আগে ৫০ থেকে ৬০বছর বয়সীদের মধ্যেই বেশি দেখা যেত।

অনেক্ষণ বসে কাজ করার ফলে কোমর ও পিঠ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পিঠের নিচের অংশে সর্বক্ষণ চাপ পড়ে বলে ওই অংশের পেশীগুলো খুব ক্লান্ত হয়ে পরে এবং দিনের শেষে কোমরের যন্ত্রণা হয়।
তা বেড়ে গেলে কোমরের ডিস্কের সমস্যা দেখা দেয় যাকে আমরা 'ডিস্ককোল্যাপ্স' বলি। মজার ব্যাপার হল আগে ডিস্ককোল্যাপ্স-এর সমস্যাটা শুধুমাত্র যাঁরা অতিরিক্ত ভারী কাজ করেন তাঁদের মধ্যেই দেখা যেত কিন্তু এখন যাঁরা অনেক্ষণ বসে কাজ করেন, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি জগতে কর্মরতদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে।
দিনের বেশিরভাগ সময়টা বসে কাজ করলে পিঠের পেশিগুলো অচল থাকে বলে সেগুলো শিথিল হয় থাকে। তার উপর সর্বক্ষণ একটা চাপে থাকে বলে ওখানকার হাড় ক্ষয়ে যায় আর সেখান থেকে ডিস্ক বেরিয়ে আসে সহজেই। সমস্যাটির মূল কারণই হল বসে থাকা ও হাঁটাচলা কম করা।

শুরুর দিকে যখন কোমরে বা পিঠে ব্যথা হয় তখন আমরা সেই দিকে তেমন গুরুত্ব দিই না কিন্তু সেই ব্যথাই যদি হাত বা পা অবধি গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা সৃষ্টি করে তা হলে অবশই সেটা চিন্তার বিষয়। যদি সময় মতো ডাক্তারের পরামর্শ না নেওয়া হয় বা ব্যথায় যথাযত গুরুত্ব না দেওয়া হয় তা হলে হাতে ও পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয়। অনেক সময় 'ফুটড্রপ' হতে পারে অর্থাৎ পায়ের চেটো ঠিক ভাবে ওঠা-নাবা বা উপর-নীচ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। হাত দুটো ওঠাতে বা নামাতে কিংবা আঙুলগুলো নাড়াতে সমস্যা হয়।
প্রস্রাবের স্নায়ুগুলোর ওপরেও চাপ সৃষ্টি হয় এবং নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে। সময় মতো চিকিৎসা করানো না হলে পরবর্তী সময় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অসুবিধা দেখে দিতে পারে।
আমাদের জীবন ধরণের জনই এখন এই সব রোগ বা সমস্যাগুলো (লাইফস্টাইল ডিসিজ) হয় তাই জীবন ধারণে কিঞ্চিৎ রদবদল করলেই এর হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে। এই ব্যথা সারাতে ওষুধে তেমন একটা কাজ হয় না, তাই জীবনধারণের রদবদল সমস্যাগুলোর সমাধানের একমাত্র উপায়।
প্রথমত যেখানে বসে কাজ করেন সেই জায়গাটার একটু রদবদল করতে হবে অর্থাৎ যেই চেয়ারে বসেন সেই চেয়ারটা টেবিলের থেকে একটু উঁচু হতে হবে যাতে মাথা উঁচু করে কাজ না করতে হয়।

দ্বিতীয়ত, যে চেয়ারটিতে আপনি দিনের অধিকাংশ সময় বসে কাজ করছেন সেই চেয়ারটিকে একটু নিজের পিঠের মতো করে ঠিকঠাক করে নিতে হবে নিতে হবে। আজকাল যে কোনও আসবাবপত্রের দোকানে এই ধরণের চেয়ার খুব সহজেই পাওয়া যায় সেগুলোকে 'লাম্বার চেয়ার' বলা হয়। আর যদি তা সম্ভব না হয় তা হলে পুরোনো চেয়ারের যে অংশে কোমরের উপরদিকের ফাঁকা অংশটি থেকে থাকে সেখানে একটি বালিশ বা কুশন দিয়ে ঠেসান দিতে হবে। এবং ঘাড়ের কাছে আর একটি ছোট নরম কুশন দিতে হবে।
পিঠের পেশিগুলো সারাদিন অচল থাকার ফলে যে দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে সেগুলোকে আবার সচল করার জন্য কয়েকটি যোগাসন করা অতন্ত প্রয়োজনীয়। এগুলোকে 'কোর এক্সারসাইজ' বলা হয়।
পিঠের বা কোমরের ব্যথা হলে বাড়ি ফিরে গরম সেঁক নিলে ব্যথার কিছুটা উপশম ঘটে।
যখন আমরা একটানা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকি তখন আমাদের পায়ের তলায় একটা সমতল টুল বা উঁচু পাটাতন রাখতে হবে যাতে তার উপর পা দুটো রাখা যায়।
আর তাও যদি ব্যথার উপশম না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়।

