সুন্দরবনের উপকণ্ঠে ডুবছে রাসায়নিক ভরা জাহাজ, ক্ষতি বন্যপ্রাণ ও মৎস্যজীবীদের

জ্বালানি ও রাসায়নিকের প্রভাবে মাছ গভীর সমুদ্রে চলে গেলে মৎস্যজীবীরা সমস্যায় পড়বেন

 |  3-minute read |   18-06-2018
  • Total Shares

জাহাজ ডুবে যাওয়া মানেই হল, জাহাজের সঙ্গে থাকা সব পণ্য ডুবে যাওয়া। অন্য ধরনের পণ্য থাকলে যতটা না ক্ষতি হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয় কখনও যদি রাসায়নিক পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে যায়। যে সব এলাকায় মূলত জাহাজডুবি হয়, সেগুলো মৎস্যশিকারের এলাকা বা ফিশিং জোন।

যে কোনও জাহাজ ডুবে গেলে সেখানে জাল ফেলতে সমস্যা হয় বলে মাছ ধরার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। তা ছাড়া সেখান দিয়ে ট্রলার যাতায়াতেও সমস্যা হয়। কিন্তু এখন যে জাহাজটা ডুবছে, তা এমন একটা জায়গায় যা আমাদের মৎস্যশিকারের জায়গা। এই সময় ইলিশমাছ ধরার জন্য প্রতিনিয়তই ওই জায়গা দিয়ে ট্রলার চলাচল করে।

ঠিক কোন জায়গায় জাহাজটা ডুবেছে, সে কথা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে উপরক্ষাবাহিনী। যে জায়গায় জাহাজটা ডুবছে, সেটি মোহনার মুখ। তার নাম স্থানীয় ভাবে বাঘের চর, লোকে জায়গাটিকে ডালহৌসি নামেও চেনে। এই জায়গায় মোহনার মুখেই ডুবেছে জাহাজটি। নদী থেকে যেখানে জল যাচ্ছে সমুদ্রে, মোহনার ঠিক সেই জায়গাতেই জাহাজটি ডুবেছে। খাঁড়ি হয়ে ঠিক এই জায়গাটি দিয়েই মিষ্টি জল সাগরে গিয়ে পড়ে।

body2_061818052120.jpgহেলিকপ্টারের মাধ্যমে জাহাজটিকে নোঙর করানো হয়েছে

তারা জানিয়েছে যে ওই জাহাজে রাসায়নিক আছে। তা ছাড়া প্রতিটি জাহাজেরই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি মজুত করার ক্ষমতা থাকে। রাসায়নিকের প্রভাব পড়ে সমুদ্রের জলে। জাহাজ ডুবলে তেলও ছড়িয়ে পড়বে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে।

ইলিশ মাছ সাধারণ মিষ্টি জলের দিকেই আসার চেষ্টা করে, তাই তারা জলের উপরের দিকে উঠে আসতে চায়। সেখানে যদি রাসায়নিক ভেসে তাকে বা ডিজেল ভাসতে তাকে, তা হলে ইলিশ মাছ সেই জায়গায় থাকবে না। যেখানে রাসায়নিক ও ডিজেলের মিশ্রণ নেই, সেই জায়গায় চলে যাবে। অর্থাৎ তারা গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাবে। সেই জায়গায় আমাদের মাছ ধরাই সম্ভব নয়। কারণ আমাদের যে ধরনের ট্রলার আছে তা অত গভীর সমুদ্রে যাওয়ার উপযোগী নয়।

কোনও পুকুরে রাসায়নিক দিলে মাছ মরে যায়। সমুদ্রের ক্ষেত্রে প্রথমে কাছাকাছি তাকা মাছ হয়তো মরে যায়, পরে জলে ধীরে ধীরে রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়বে। তখন মাছগুলোও সেই রাসায়নিক এড়িয়ে চলার জন্য তা থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। তারা স্বাভাবিক পরিবেশ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই মাছ গভীর সমুদ্রে চলে গেলে আমাদের মৎস্যজীবীরা কোনও মাছ পাবেন না।

মাছের উপরে প্রভাব পড়লে মৎস্যজীবীদের ক্ষতি হয় ঠিকই, তবে জাহাজ ভেঙে গেলে সামগ্রিক ভাবেই সামুদ্রিক সব প্রাণী, উদ্ভিদ এমনকী স্থলের প্রাণীদের ক্ষতি হয়। যে দ্বীপের কাছে এটি ডুবেছে সেটি আসলে গভীর জঙ্গল, সুন্দরবন ব্র্যাঘ্র প্রকল্পের অধীন। তাই বাইরেও অরণ্য বিস্তৃত। এখানে যে লবনাম্বু উদ্ভিদের অরণ্য বা ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে, সেখানে নানা জীববৈচিত্র্য রয়েছে। খাড়ির জল প্রাণীরা পান করে। রাসায়নিক তো এই খাড়িতেও ছড়িয়ে পড়বে। তাদেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

body_061818052159.jpgকন্টেনারগুলিতে কী ধরনের রাসায়নিক আছে জানি না, তবে প্রচুর কন্টেনার রয়েছে

উপকূলরক্ষী বাহিনীর কমান্ডান্ট অফিসার (ফ্রেজারগঞ্জ) অভিজিৎ দাশগুপ্ত আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যাতে ওই জাহাজের কাছাকাছি কোনও মৎস্যজীবী যেন না যান। কারণ ওই জাহাজে যে রাসায়নিক রয়েছে, তাতে বিস্ফোরণ ঘটছে। তাই দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছিলাম এটিকে উদ্ধার করার কোও উপায় আছে কিনা। ওঁরা জানিয়েছেন জাহাজটি যে সংস্থার, সিঙ্গাপুর থেকে সেই সংস্থার আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে জাহাজটিকে নোঙর করানো হয়েছে। ওঁরা চেষ্টা করছেন যাতে জাহাজটিকে অন্য জাহাজের সাহায্যে তোলা যায়। তবে যে মৎস্যজীবীরা ওখানে মাছ ধরতে গিয়েছেন, যাঁরা জাহাজটিকে দেখেছেন, তাঁরা বলছেন যে জাহাজটি চরের এমন জায়গায় আটকে গেছে যে উদ্ধার করা মুশকিল।

ওঁদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধার করতে পারবেন কিনা জানি না, যদি উদ্ধার করতে পারেন তা হলে আমরা বেঁচে যাব, না হলে সমূহ বিপদ। কন্টেনারগুলিতে কী ধরনের রাসায়নিক আছে জানি না, তবে প্রচুর কন্টেনার রয়েছে। একটি করে রাসায়নিকের কন্টেনারে যদি বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে, কবে তা থামবে বলা মুশকিল। তাই যদি জাহাজটি ডুবে যায়, তা হলে যতক্ষণ না বেশি বর্ষা হচ্ছে, ততক্ষণ সমস্যা রয়ে যাবে। ধীরে ধীরে অবশ্য এটা বাংলাদেশের দিকে সরে যাবে। কিন্তু তাতে প্রকৃতির ক্ষতি এড়ানো যাবে না। সমস্যা মিটতে অন্তত এক বছর লেগে যাবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BIJAN MAITY BIJAN MAITY

Secretary, Kakdwip Matsyajibi Unnayan Samity| Former MLA

Comment