পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করতে স্মার্টক্লাস চালু হলেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই শিক্ষক-শিক্ষিকার
শহরের বেশিরভাগ বেসরকারি এবং অভিজাত স্কুলগুলোতে স্মার্টক্লাসের চল আছে
- Total Shares
ছাত্রছাত্রীদের কাছে শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতেই চালু করা হয় স্মার্টক্লাস বা ডিজিটাল ক্লাসরুম। শহরের বেশিরভাগ বেসরকারি এবং অভিজাত স্কুলগুলোতে স্মার্টক্লাসের চল আছে।
আসুন আগে দেখেনি স্মার্টক্লাস আসলে ঠিক কী?
আজ প্রায় ১০-১২ বছর হল বিভিন্ন স্কুলে স্মার্টক্লাসের চলন শুরু হয়েছে। ঠিক যেমন ক্লাসে পড়াবার সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করেন ঠিক তেমন ভাবেই স্মার্ট ক্লাসরুমগুলোতে এখন ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গা নিয়ে নিয়েছে অত্যাধুনিক প্রজেক্টর এবং ডিজিটাল ইন্টার্যাকটিভ হোয়াইট বোর্ড। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের সাহায্যে শিক্ষাদান করা হচ্ছে।
শহরের বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুলগুলোতে স্মার্টক্লাসের চল আছে
স্মার্টক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাদানের অনেকগুলো ভালো দিক রয়েছে। এর ফলে পড়ুয়াদের কাছে পড়াশোনাটা বেশ আনন্দদায়ক ও সহজ হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা বইতে যা পড়ছে প্রজেক্টরের সাহায্যে সেটাই তাদের চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং কঠিন বিষয়গুলোকে তারা সহজেই বুঝতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর ফলে যে সব পড়ুয়া স্কুলে অনেক কম উপস্থিত থাকতো তাদের উপস্থিতিও অনেক বাড়বে। এছাড়াও যে সব কক্ষে অনেক ছাত্রছাত্রী রয়েছে সেই সব কক্ষে একেবারে শেষের দিকে যারা বসে তারা অনেক সময় শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকার গলার স্বর শুনতে পায়না কিংবা বোর্ডের লেখা ঠিক মতো দেখতে পায়ে না। তাই তাদের জন্য এই ধরণের ইন্টার্যাক্টিভ হোয়াইট বোর্ডের লেখাগুলো মাপ মতো বাড়ানো বা ছোট করাও যায়। অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা নোট নেওয়ার সময় তাড়াতাড়ি লিখতে গিয়ে অনেক কিছু বাদ দিয়ে বসে তাই শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা বোর্ডে সেই পাতাটিকে 'সেভ' করে রেখে দিলে সেই পড়ুয়া বাদ দিয়ে দেওয়া অংশগুলো আবার পরে লিখে নিতে পারে।
এর অনেক সুবিধেও যেমন রয়েছে পাশাপাশি বহু অসুবিধাও রয়েছে। কারণে এই ধরণের স্মার্টক্লাস পরিচালনা করার জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। সেই অর্থে কোনও প্রশিক্ষণ পান না শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই ধরণের ক্লাসরুম ব্যবস্থার থেকে যাতে ছাত্রছাত্রীরা সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে পারে সেই জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তাই শুধুমাত্র স্মার্ট ক্লাসরুম থাকাটাই যথেষ্ট নয় যাতে পড়ুয়ারা উপকৃত হতে পারে সেই দিকটাও নিশ্চিত করতে হবে।
বহু গ্রামাঞ্চলের স্কুলেও এখন ডিজিটাল বা প্রজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষাদানের সুবিধা দেওয়া হয়েছে
বহু গ্রামাঞ্চলের স্কুলেও এখন ডিজিটাল বা প্রজেক্টরের সাহায্যে শিক্ষাদানের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সব স্কুলগুলোর ওই একই চিত্র। মেশিন থাকলেও সেগুলোর সাহায্যে পড়াবার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণের আকাল। তাই ইচ্ছে থাকলেও সে সব মেশিনকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
এ ছাড়াও আরও একটা ব্যাপার হল কোনও স্কুলে স্মার্টক্লাস চালু হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন দেখভাল করা হলেও কয়েকদিন পর থেকে পুরো বিষয়টিকে তেমন ভাবে আর তত্ত্বাবধান করা হয় না। অর্থাৎ ক্লাস উপযোগী মডিউলের সাহায্যে পড়ান হচ্ছে কী না, সেই সব মডিউল সময় মতো আরও সময় উপযোগী করা হচ্ছে কী না, দরকার মতো সফটওয়্যার আপডেট করা হচ্ছে কী না এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা স্মার্টক্লাসের সাহায্যে ছাত্রছাত্রীদের ঠিকঠাক ভাবে পড়াতে পারছেন কী না।
স্মার্টক্লাস পরিচালনা করার জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যে প্রশিক্ষণটা দেওয়া হয়ে থাকে সেটা বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজের চাপে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঠিক যতটা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ততটা প্রশিক্ষণ তাঁরা পেয়ে উঠতে পারেন না। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে ডিজিটাল বা স্মার্টক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাদানের একটা ভালো দিক নিঃসন্দেহে রয়েছে।
শহরতলিতে এখনও বহু জায়গায় নিয়মিত লোডশেডিং হয়, তাই যে সব স্কুলে স্মার্টক্লাসের সুবিধা রয়েছে সেই সব স্কুলে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
তবে স্মার্টক্লাসের সাহায্যে পড়াশোনা করার ফলে দেখা যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাশক্তি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।
ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গা নিয়েছে অত্যাধুনিক প্রজেক্টর
আবার বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসছে যে গ্রামাঞ্চলের এমন বহু স্কুল আছে যেখানে স্কুলবাড়ির মাথার উপর ছাদটাই নেই বা ক্লাসে একটা ব্ল্যাকবোর্ডও নেই সেসব স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু শহরতলীর তুলনায় অনেক ভালো ফল করছে। কারণ অধিকাংশ সময় তাদের কাছে স্মার্টক্লাস না থাকলেও রয়েছে অসাধারণ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা।
তাই আমার মনে হয় স্মার্টক্লাস তথা পারম্পরিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থাকে যদি একসঙ্গে পাশাপাশি রাখা যায় তাহলে অবশ্যই উপকার হবে। কোনও একটা কঠিন পড়াকে এই স্মার্টক্লাসের মাধ্যমে পড়ালে তা পড়ুয়ারা সহজেই বুঝতে পারবে তাই সম্পূর্ণ ভাবে স্মার্টক্লাসের উপর নির্ভর না করে শিক্ষাদানের এই দুটো পদ্ধতিই চালাতে হবে পাশাপাশি।

