স্মার্টফোনের দাম কমায় সামাজিক ভাবে আমাদের কতটা ও কী ক্ষতি হচ্ছে?

একটি চার জিবির মেমোরি কার্ডেই তিন থেকে চারটে পর্ন সিনেমা অনায়াসে ধরে যায়

 |  3-minute read |   22-07-2018
  • Total Shares

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিকে পূর্ব দিল্লিতে ২২ বছর বছরের মনোজ শাহ ও তার ১৯ বছর বয়সী সাকরেদ প্রদীপ কুমারকে তাদেরই প্রতিবেশী একটি পাঁচ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। মনোজ একটি জামাকাপড়ের কারখানায় কাজ করত। পুলিশ হেফাজতে তারা স্বীকার করে যে এই জঘন্য অপরাধ করার ঠিক আগে তারা প্রদীপের স্মার্টফোনে একটি পর্ন বা নীল ছবি দেখেছিল।

আগে শুধুমাত্র তারাই পর্ন ছবি দেখতে পারত যাদের কম্পিউটার এবং ডিভিডি প্লেয়ারের কোনও একটি কোনার সামর্থ্য থাকত এবং একা সে সব দেখার সুযোগ থাকত। ইদানিং বহু মানুষ টাকা জমিয়ে অল্প দামের একটা স্মার্টফোন কিনছেন এবং খুব সহজে ও সস্তায় এখন ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব বলে বলে সেই ফোনটিকে ইন্টারনেটের সঙ্গেও যুক্ত করে নিচ্ছেন।

চলতি বছরের মার্চ মাসে দা ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (আইএমএআই)-র ঘোষণা করে যে  এ বছরের জুন মাসের মধ্যে আমাদের দেশে মোটামুটি ৪৭.৮ কোটি মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। আইএমএআই-এর তরফ থেকে এটাও জানানো হয়েছিল যে এখনও পর্যন্ত যদিও আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোটে ১৮ শতাংশ হয় তবে শহরাঞ্চলে মোবাইলে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা হল মোটামুটি ৫৯ শতাংশ। যদিও শহরে যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাঁদের মধ্যে ৪৬ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নীচে এবং গ্রামের দিকে যাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন তাঁদের সংখ্যা হল ৫৭ শতাংশ। সাধারণ মানুষের হাতে খুব সহজে ইন্টারনেট পৌঁছে যাওয়ার জন্য যেমন আমরা এখন নানা রকম তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যাই তেমনই এর ফলে খুব সহজেই লোকে এই ধরণের পর্ন সিনেমাও দেখতে পারে।

আইএমএআই-র একটি সমীক্ষা বলছে যে স্কুল ও কলেজের বহু তরুণ-তরুণী এখন বেশিরভাগ সময়ই স্মার্টফোনে গান শোনে এবং নানা রকম ভিডিও দেখে। আর কারও যদি স্মার্টফোনে ইন্টারনেট ঠিকঠাক কাজ না করে তাহলে যে সব  দোকানে মোবাইল সারানো হয় সেখানে গিয়ে ফোনটা সারিয়ে নেয়। এই সব দোকানিরা মোবাইলের বিষয় সব জানেন।

smart_body_072218020331.jpgসবার হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন

দিল্লির কুখ্যাত গফ্ফর বাজারের অলিগলি থেকে শুরু করে করোল বাগ হয়ে দক্ষিণ দিল্লির মনীশ বাজার ও চণ্ডীগড় সেক্টর ২২ পর্যন্ত সার দিয়ে রয়েছে বহু দোকান, যেখানে ছোট ছোট মেমরি কার্ডের মধ্যে দোকানিরা ভরে দেন বহু পর্ন সিনেমা। ছোট এই মেমরি কার্ডগুলো মোবাইল ফোনের ভেতরে ভরে নেওয়া যায়।

চণ্ডীগড়ে সাজু নামে একটি বিহারি ছেলে যে একটি বাড়িতে পরিচারকের কাজ করে। তার কথায়, "এই ধরণের তিন থেকে চারটে বি-গ্রেডের ভোজপুরি সিনেমা মোবাইলে ভরাতে খরচ মাত্র ১৫০ টাকা। এই সিনেমাগুলো ভরিয়ে নেওয়ার পরেও একটি চার জিবি মাপের মেমোরি কার্ডে বাকি যে জায়গা পরে থাকে সেখানে আরও কিছু পর্ন ছবি ভরে নেওয়া যায়।"

ইন্টারনেটের মোটামুটি ১৮ লক্ষ পর্ন সাইট রয়েছে তার মধ্যে ৩৬তম স্থানে রয়েছে অতি জনপ্রিয় 'পর্নহাব' সাইটটি। ২০১৭ সালে স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ এই সাইটে পর্ন সিনেমা দেখেছেন। এবার আসি আসল কথায়। পর্নহাব তাদের ২০১৭-র রিভিউতে বলেছে যে যারা এই সাইটিতে সব থেকে বেশি পর্ন সিনেমা দেখেছে তাদের মধ্যে ভারতের নাম রয়েছে একেবারে প্রথমে, অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতীয়েদর নিজেদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে এই সাইটে ঢুকে পর্ন দেখার হার বেড়েছে ১২১ শতাংশ। এর জেরেই হয়তো ভারতীয়দের মধ্যে যৌন হিংস্রতার ঘটনা এতটা বেড়ে গেছে।

গুগল অ্যাডওয়ার্ডস অনুসারে ২০১২ সালে ডিসেম্বর মাসে নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলার পর মানুষজন এক মাসের মধ্যে মোটামুটি ৪১ লক্ষ বার 'ধর্ষণ' কিওয়ার্ডটি গুগলে লিখে সেই সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য ও ভিডিও দেখেছেন। এ ছাড়াও অন্যান্য কিওয়ার্ড যেমন 'ভারতীয় মহিলাদের ধর্ষণ করা', “ধর্ষণ সম্পর্কিত ভিডিও", “ধর্ষণের অন্যান্য ঘটনা", “প্রকাশ্যে ধর্ষণ", “নাবালিকাকে ধর্ষণ", “মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে”, "বাবা তার নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করছে" এবং “ধর্ষণের ফলে মৃত্যু ঘটেছে" এই ধরণের বহু ভিডিও দেখেছেন সাধারণ মানুষ। যাঁরা গুগলে এই ধরণের ভিডিও দেখেন তাঁদের মধ্যে সেই সব লোকজন পড়ে না যাঁরা বিভিন্ন মোবাইল সারাবার দোকান, পাড়ার ডিভিডি-র দোকানের দোকানি কিংবা কোনও সাইবার কাফের মালিক (যাঁরা একটু বেশি বন্ধুত্বপরায়ণ) তাঁদের থেকেই এই ভিডিয়োগুলো নিজেদের মোবাইল ফোনে লোড করিয়ে নেন। ব্যাপারটা বেশ চিন্তার, কারণ আপনার রাঁধুনি, গাড়ির-চালক, বা পাশের বাড়িতে যে পত্রবাহক চিঠি দিতে আসেন, যে অটোরিকশাওয়ালা আপনার পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, আপনার পাশের বাড়ির ছোট ছেলেটা কিংবা আপনার পড়শি যাঁকে আপনি খুব ভালো বলে জানেন এবং যে একটি ভালো সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এবং যিনি মাঝে মধ্যেই আপনার বাজারের ভারী ব্যাগটা বয়ে দিতে চান, এঁরা সকলেই হয়তো গোপনে পর্ন দেখেন। আপনার পাঁচ বছর বয়সী ছোট্ট মেয়েটিও হয়তো দেখে।

(সৌজন্যে মেল টুডে)

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ASIT JOLLY ASIT JOLLY @asitjolly

Journalist with India Today magazine.

Comment