কৌতুকের স্টুলিশ-সারাহা শান্তিভঙ্গ করতে পারে ব্যক্তিজীবনের, চুরি যেতে পারে ব্যক্তিগত তথ্য

পরিচয় প্রকাশ্যে এলে সামাজিক ভাবে অপ্রস্তুত হতে হতে পারে

 |  3-minute read |   26-05-2018
  • Total Shares

রামায়ণে লেখা করা আছে যে মেঘনাদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যুদ্ধ করতেন। সেখানে শত্রু তাঁর গতিবিধি জানতে না পারলেও সতর্কদৃষ্টিতে তিনি নিরীক্ষণ করতে পারতেন শত্রুর সব চাল, এবং সেই অনুসারে পালটা চাল দিয়ে করতেন বাজিমাত।

এটা ২০১৮ সাল। ত্রেতা যুগ ঠিক কোন খ্রিস্টপূর্ব সময় এবং সেই সময়ে কোন প্রযুক্তিতে রাবণনন্দন এই কারসাজি করতেন, তা নিয়ে পৌরাণিক গবেষকরা চিন্তান্বিত হলেও এ যুগের অ্যাপ্স-মেকাররা বিন্দুমাত্র ভাবেন না। তাএঁরা জানেন এ যুগে একমাত্র অস্ত্র ও উপহার হল  ‘কথা’। যা দিয়ে মুহূর্তে খানখান করে দেওয়া যায় এক সম্পর্ক, একটি জনপদের সুখ শান্তি মায় হরিপদ কেরানীদের চাকরিও। আবার কথার প্রসাদেই সম্পর্ক পায় মৃতসঞ্জীবনী, চাকরি রক্ষা করতে পেরে বেচুবাবু বা হরিপদ কেরানী বাড়িতে নিয়ে আসে এক হাঁড়ি রসগোল্লা, রাষ্ট্র বেঁচে যায় মানুষক্ষয়ী যুদ্ধের হাত থেকে।  তাই সারাহা, স্টুলিশ ইত্যাদির অবতারণা ঘটছে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। 

body1_052618032611.jpgস্টুলিশজাতীয় এই সাইটগুলোর হ্যাকিং এফেক্ট নিয়েও একদল বেশ বিব্রত

বলা যেতেই পারে এ যুগের বাণী অস্ত্রে আপনি মদন বাণ থেকে শুরু করে ব্রহ্মাস্ত্র-- যাই নিক্ষেপ করুন না কেন তা আপনাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে দেবে না, কিন্তু আপনার পরিচয় গোপন রাখবে। আসলে সব বন্ধুদের ওই ভাবে স্টুলিশে গা ভাসাতে দেখে আমারও শখ হল একটা ডাকবাক্স বাড়ির সামনে রাখি। করলাম রেজিস্টার। লোকে বলে কবিরা প্রেমিক হয়, আর আমাদের যা সুনাম তাতে প্রেমেরা জানলা দরজা ভেদ করে আসবে এটা ভাবা আর দিবাস্বপ্ন দেখা প্রায় একই রকমের অলীককুসুম প্রস্তাবনা। কিন্তু আশায় মরে চাষা। ভাবলাম দু’-একটা মিষ্টি প্রশংসা আসবে তাই জয় মা কালী বলে পেন্নাম ঠুকে রেজিস্টারের পর প্রথম যে প্রস্তাব এল আমার অনামা প্রেরকের থেকে তা কিঞ্চিৎ বিস্ময়কর।

প্রথম জনের জিজ্ঞাসা – “তুমি নিজেকে ঠিক কত বড় কবি ভাব?”।

দ্বিতীয়জনের কৌতুহল – “বিছানায় তুই  যৌনসঙ্গীকে কতটা তৃপ্তি দিস? তাহলে কি আমার চান্স আছে?” এই দুটোতেই কুপোকাত হব কি না ভাবতে ভাবতে দেখলাম প্রশ্নবাণ ছুড়তে থাকা মেঘনাদ বা মেঘনাদদের প্রশ্ন রক্তবীজের মত আমার ঘর ছেড়ে বিছানা অধিগ্রহণ করলে। এবং তার ভাষা ও ভঙ্গী এমনই এক পর্যায়ে যাচ্ছে যা বুঝতে অসুবিধা হয় না ব্যক্তিগত আক্রমণ ও একটা ট্রিক্স। যাতে রেগে গেলে আপনার নিজের কাজ পণ্ড হবে। শুধু তাই নয় আপনি ভাবতে আরম্ভ করবেন কে আপনার এই গোপন শত্রু যে সামনে বন্ধু সেজে পিঠে ছুরি মারছে। অনেক ক্ষেত্রে খুব কাছের লোক আপনার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করতে এই অ্যাপ্সের সহায়তা নিচ্ছে। অর্থাৎ সাধারণ জীবনে যে জায়গায় আপনি অন্যদের প্রবেশাধিকার দেননি তারা অনায়াসে সেখানে ঢুকে পড়ে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে দিচ্ছে। 

body2_052618032636.jpgরেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নিজেদের তথ্য দিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন ভেবে ব্লাডপ্রেশার হাই করছেন

স্টুলিশজাতীয় এই সাইটগুলোর হ্যাকিং এফেক্ট নিয়েও একদল বেশ বিব্রত। কারণ অনেকেই রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নিজেদের তথ্য দিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন ভেবে ব্লাডপ্রেশার হাই করছেন। তাঁদের চিন্তা অমূলক নয়। কারণ একটু একটু করে খেলার ছলেই আমরা তুলে দিচ্ছি আমাদের যা যা ব্যক্তিগত তথ্য তা সবই এই হ্যাকারদের হাতে। তাই একটু হলেও চিন্তা স্বাভাবিক। তবে আইপি অ্যাড্রেস ও রেজিস্ট্রেশন ডিটেলসে নজর করে দেখুন এই পোর্টাল আপনাকে আর কোন পেজ-এ রিডিরেক্ট করছে কি না। যদি করে, তবে অনুরোধ আপনার রেজিস্ট্রেশন বাতিল করুন। আর আইপি অ্যাড্রেস একটা হলেও নোট করে রাখুন। এটা নিজস্ব নিরাপত্তার জন্যই করবেন তা নয়, কারণ আপনাকে প্রশ্ন করছে যে মেঘনাদ সেও এর মাধ্যমে বিপদে পড়লে বেরিয়ে আসতে পারবে।

এবার কথা হল এত জেনেও কেন স্টুলিশ! তা হলে প্রথমেই বলি, মানুষ তো একা থাকাটা অভ্যাস করলেও তার নিজের জন্য একটা ছায়া দরকার যার সঙ্গে কথা বলে, যুদ্ধ করে, খুঁচিয়ে সে নিজেকে ভারমুক্ত করতে চায়। ফলে তীর্থের কাকের মতো এই গোপন-গোপন খেলা। সে চায় কেউ তাকে নিয়ে খেলুক, তাকে মিথ্যে মিথ্যে স্তোক শোনাক বা তার সুপ্ত বাসনায় তাকে উস্কে দিক। আর এই চাওয়া, এই একাকিত্ব কাটানোয় সঙ্গী ছায়া হয়ে সারাহা-স্টুলিশের মতো কিছু পেলে সে ভাবে ক্ষতি কী!

body3_052618032724.jpgআড়াল খসে পড়লে তখন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি লজ্জা দেবে না তো?

আমিও বলব, ক্ষতি হয়ত নেই, শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন।  আর যাঁরাই এই ছায়াযুদ্ধে ছায়া সাজতে ভালবাসি ও নিজেদের আজেবাজে প্রশ্নের জঞ্জালে অন্যদের ব্যাতিব্যস্ত করি তারাও যদি খেয়াল রাখি যে মজাটা মজা অবধি সীমিত থাকাই ভাল, তবেই এই খেলাগুলো মনকে রাঙাবে। না হলে অপ্রীতিকর ঘটনা আর তিক্ততা বাড়বে। ইন্দ্রজিৎ তো মেঘের আড়ালে নিজেকে বাঁচাতেন, কিন্তু এই ইথার তরঙ্গের সময়ে আমরা যতই ভাবি আমাদের গোপন কথা গোপন থাকবে না, একটু ভেবে দেখুন তো, তা কি আদৌ সম্ভব? আড়াল খসে পড়লে তখন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি লজ্জা দেবে না তো?

নিজেরাই বিচার করুন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHAMIK JOY SENGUPTA SHAMIK JOY SENGUPTA

The writer is a poet, owner Abhi Joy Prakshani and editor-in-chief Soptoporno

Comment