অন্য অনেক পাখি বিলুপ্তির পথে, পায়রার সংখ্যা কিন্তু বেড়েই চলেছে
এক সময় চিঠি নিয়ে যেত, ই-মেলের যুগে তারা নাকি মাদক পাচার করে
- Total Shares
একটা খবর হয়তো আমাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। ভারতের 'পক্ষী যুদ্ধে' পায়রারা বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে। তা সে নীল আকাশই হোক বা বাড়ির বারান্দা - তারা রয়েছে সর্বত্রই। এই আধুনিক প্রযুক্তি আর কংক্রিটের জঙ্গলে তারা চড়ুই পাখির মতো বহু প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিয়েছে। তাদের প্রতিপক্ষরা এখন অবলুপ্তির পথে।
কিন্তু আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করি না। কারণ পায়রা খুব সহজে আমাদের চোখে পড়ে না। অন্তত যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা আমাদের বারান্দায় বা আমাদের ঘাড়ে বিষ্টাত্যাগ না করে।
বহু প্রাকৃতিক ঘাত-প্রতিঘাতের শিকার হয়েছে দেশের পক্ষীকূল। এরই মাঝে পায়রারা শুধু বেঁচে থাকতেই সক্ষম হয়নি তাদের বংশবৃদ্ধিও ঘটেছে। নগরোন্নয়নের সুবিধা পায়রাদের থেকে বেশি আর কোনও পাখি অন্তত ভোগ করেনি। নগরোন্নয়নের ফলে পায়রারা তিন তিনটে সুবিধা পেয়েছে: নিরাপদ বাসা, নিত্যদিন খাবারের জায়গা এবং শিকারি না থাকা। পায়রারা দ্রুত বংশবৃদ্ধির করে। বছরে ছ'য়বার করে ডিম পাড়ে। এই ধরণের নিরাপদ পরিবেশে পায়রার মত একটি পাখি বিপুল সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যান্য প্রাণীদের মতো পায়রারাও কীন্তু বেশ করিৎকর্মা। ময়ূর যেমন সৌন্দর্য্যের প্রতীক, কোকিল যেমন গলার স্বরের জন্য বিখ্যাত, ঈগলের রাজসিক উড়ান যেমন সকলের নজর কাড়ে, পায়রা কিন্তু চিঠি-চাপাটি নিয়ে যেতে সিদ্ধহস্ত।
তবে উন্নত প্রযুক্তির কাছে হার মেনেছে পায়রার সাহায্যে চিঠিপত্র আদানপ্রদান। ই-মেলের যুগে আমরা শুধু নেশার জিনিস পাঠানো নিয়ে পায়রাদের মজার গল্প শুনতে পাই। কুয়েতে যেমন একটি পায়রার কাছে ২০০টি বড়ি পাওয়া গিয়েছিল। পাকিস্তান থেকে আসা একটি পায়রাকে আটক করা হয়েছিল পাঠানকোটে। 'পাকিস্তানী চর' আখ্যা পাওয়া পায়রাটি নাকি মোদীর জন্য হুমকির বার্তা বয়ে আনছিল।

পায়রার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য খুব জোলো। তাই তো আমাদের লোকগাথায় বা কিশোর কাহিনিতে কিংবা কবিতায় পায়রা মানে চিঠিপত্র দেওয়া নেওয়ার মাধ্যম । ঘুঘুর মতো পায়রা শান্তির প্রতীক নয়, ঈগলের মত পায়রা নিষ্ঠুর নয়, পেঁচার মতো পায়রা অনিদ্রায় ভোগে না। পায়রা শুধুই কাজের প্রতীক। ম্যায় নে পেয়ার কিয়া ছবিতে সলমন খান ও ভাগ্যশ্রীর প্রথম প্রেমের চিঠি পায়রার মাধ্যমেই পাঠানো হয়েছিল।
তবে পায়রারা শুধুমাত্র চিঠি নিয়ে যায় না। পক্ষিবিজ্ঞানীরা মনে করেন তাদের বিষ্ঠা ও পালক শ্বাসনালীর রোগের কারণ।চিকিৎসকেরা হাঁপানি রোগীদের পায়রা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনার ফুসসুস যদি দুর্বল হয় তাহলে কুয়াশা ভেদ করে পায়রার উড়ে আসার দৃশ্য আপনার জন্যে নয়।
ডিএনএ-তে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, "পায়রার বিষ্ঠা নিশ্বাসের সঙ্গে ঢুকলে শ্বাসনালীতে সংক্রমণ হতে পারে।এতে এত পরিমান অ্যাসিড থাকে যা দিয়ে একটি গোটা বাড়িও ধ্বংস করে দেওয়া যায়। একটি স্ত্রী পায়রা বছরে ৪৮টি মত শাবকের জন্ম দিতে পারে। পায়রাদের আয়ু ২০ থেকে ২৫ বছর। একটি পায়রা বছরে গড়ে ১১.৫ কেজি বিষ্ঠাত্যাগ করতে পারে।"
এই রিপোর্টে উল্লেখ আছে যে ২০০১ সালে একটি বিশ্ব যুদ্ধের সূচনা হয় পায়রার মলকে কেন্দ্র করে। ২০০১ থেকে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়্যারে পায়রাদের খাওয়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২০০৮-এ ভেনিসও এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেন্ট মার্ক্স্ স্কোয়্যারে পাখিদের খাবার বিক্রি করলে জরিমানা ধার্যের আইন তৈরী করা হয়। কিছু বছরের আগে কাতালোনিয়ার ভুট্টার দানা দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ ধরনের খাবার পায়রাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যা খেলে পায়রাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করা যাবে।
পায়রাদের খুব বেশি পাত্তা না দিয়ে আমরা কিন্তু তাদের সহ্য করে নিয়েছি। সমীক্ষা অনুযায়ী পায়রা সবচেয়ে জনপ্রিয় পাখি এবং দেশের জাতীয় পাখির ঠিক উল্টো। পায়রারা সর্বত্র দেখা গেলেও, ময়ূরদের শুধুমাত্র জঙ্গল ও অভয়ারণ্য ছাড়া অন্যত্র বিশেষ পাওয়া যায় না।
জাতীয় প্রতীককে যে সবসময় আদর্শ বা জীবনের প্রতীক হতে হবে এমন কোনও নিয়ম নেই। ময়ূরের মতো একটি সুন্দর প্রাণীর দুলকি চালের নাচ ভারতীয়দের জীবনের ঙ্গে খাপ খায় না। উল্টোদিকে, পায়রা কিন্তু দেশের সব পরিস্থিতিতে সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
এদেশ তো পায়রার নিজের দেশ হয়ে উঠেছে। পায়রার এইমানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু সহজ নয়। তাই একে একেবারে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। পায়রা তো আমাদের দেশের চরিত্র ও কর্মপদ্ধতির প্রতীক। কোনও কিছুতেই অসাধারণ না হয়েও পায়রা বাঁচতে পেরেছে। অনুকূল পরিস্থিতিতে বাড়তেও পেরেছে।

