ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করা ছেলেটাই কলেজে বলবে না তো “মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি”

মাধ্যমিক বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা গর্ব করে বলত “আমাদের বোর্ডে ৫০% পাওয়া মানে অন্য বোর্ডে ৭০%”

 |  2-minute read |   10-06-2018
  • Total Shares

২০১৮ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন দিয়ে ঘুরে আশা যাক ‘ফ্ল্যাস ব্যাক’ থেকে।

বেশ কয়েক বছর আগের কথা, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেতে ছাত্র ছাত্রীদের বেশ বেগ পেতে হত। মাধ্যমিক বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা গর্ব করে বলত “আমাদের বোর্ডে ৫০% পাওয়া মানে অন্য বোর্ডে ৭০%”, “অত সোজা নয় মাধ্যমিক পাস করা”, “আমাদের পড়া শক্ত, নম্বর খুব চেপে দেয়”। তখন এমনও বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল যে অন্য বোর্ডের খাতা তো কম্পিউটারে দেখা হয়, তাই নাম পদবি নির্বিশেষে সবাই উপযুক্ত নম্বর পায়। যেখানে মাধ্যমিক,উচ্চ-মাধ্যমিকে লেখাপড়ার বাইরে অন্য অনেক কারণে নম্বর চেপে দেওয়া হয়। এই সব শুনে অন্য বোর্ডের পড়ুয়ারা নয় মাথা নিছু করে হজম করত, আর নয়ত প্রতিবাদে শুধু বলত “তোদের থেকে ইংরেজি আমরা বেশি ভালো জানি”।

body_061018063612.jpgমাধ্যমিক,উচ্চ-মাধ্যমিকে লেখাপড়ার বাইরে অন্য অনেক কারণে নম্বর চেপে দেওয়া হয়

কিন্তু মনে মনে খুব ভালো জানত কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় তাদের নম্বরের ২০% কেটেই বিচার করা হবে। এ ভাবেই কাটছিল বছর, রাজ্য বোর্ডের ছেলেমেয়েদের বাবা মায়েরাও বেশি করে বকাঝকা করত, মারত আর বলত “ওরে পড়তে বস, ফার্স্ট ডিভিশন না পেলে পাড়ায় যে মুখ দেখাতে পারব না। বাবার এত পয়সা নেই যে বেসরকারি কলেজে ভর্তি করব।” বেচারা ছেলেমেয়েগুলোর পড়া মাথায় না ঢুকলেও তখনকার মাস্টারমশাইরা ‘গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানাতেন’। না, তখন কথায় কথায় বাবা মায়েরা দৌড়ে গিয়ে শিক্ষকের কলার ধরে বলতেন না “কেন আমর ছেলের গায়ে হাত তুলেছেন?” উলটে পরীক্ষার আগে আর ফল বেরনোর পর মাস্টারমশাইয়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পাঠাতেন। এই হল সাদা কালো ফ্ল্যাস ব্যাক।

ফিরে আসা যাক ‘রঙিন বর্তমানে’। ২০১৮ তে মাধ্যমিকে প্রথম যে হয়েছে সে পেয়েছে ৯৮.৪৩% এবং পাসের হার ৮৫.৪৯%। আর উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম যে হয়েছে তার সংগ্রহ ৯৯.২% এবং পাসের হার ৮৩.৭৫%। ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই খুব খেটে এই নম্বর পেয়েছে। না, কোনও শিক্ষক নয় এদের সাফল্যের চাবিকাঠি হয় আম প্রকাশনী নয় জাম প্রকাশনীর প্রশ্ন বিচিত্রা। এই যে ছাত্রছাত্রীরা প্রায় ১০০% নম্বর পাচ্ছে তাহলে অন্য বোর্ডে কত পাওয়া উচিৎ?

body1_061018063646.jpgকলেজে উঠে শিক্ষকদের প্রহার করা এখন রাজনীতির অঙ্গ

১২০ শতাংশ? এবং আগে যারা “অন্য বোর্ডে কম্পিউটারে খাতা দেখা হয়” বলে দাবি করতেন এখন কি এই খাতা গুলো ‘রোবট’ দেখেছে? বেশ কয়েক বছর যাবৎ এক লাফে এত নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতার কারণ রাজ্যের বাইরে ছাত্রদের মুখ থুবড়ে পড়া না তো? সে ক্ষেত্রে শুধু হাত খুলে নম্বর না বিলিয়ে বাস্তবমুখী পাঠ্যক্রম তৈরিটা বেশি জরুরি নয় কি? যাই হোক এই সব কৃতী ছাত্রছাত্রীরা যখন টিভি চ্যানেলে বসে বলে “১৮-২০ ঘণ্টা প্রতিদিন পড়েছি” এবং কটা টাকার জন্য বুক ফুলিয়ে প্রচার করে “আম জাম প্রকাশনীর প্রশ্ন বিচিত্রা আমাদের সাফল্যের চাবি কাঠি” তখন কোথাও মাস্টারমশাইদের উপেক্ষা করা হয় না তো? নাকি কলেজে উঠে শিক্ষকদের প্রহার করার রাজনীতির এটাই সূত্রপাত? আজ ঘরে ঘরে একটা করে ফার্স্ট ডিভিশন। বেড়েছে পুঁথিগত শিক্ষার ঢল। কিন্তু এই ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করা ছেলেটাই কলেজে গিয়ে বলবে না তো “মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি”।

আজ হারিয়েছে ‘গাধা পিটিয়ে ঘোড়া’ করানো শিক্ষক। তাঁদের জায়গা নিয়েছে পয়সালোভী ‘টিউটরিয়াল হোম’। পরীক্ষার খাতায় বেড়েছে নম্বর, পাশাপাশি বেড়েছে শিক্ষক নিগ্রহ। উন্নয়ন কে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে, ক্লাসরুমের ভেতর শিক্ষক ঠেঙানো আর কত দিন?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SOUMYA CHATTERJEE SOUMYA CHATTERJEE

Travel freak. Aspiring film director.

Comment