ছোট শহরের সরল জীবনের ইতিকথা

যতবারই ফিরে আসি ততবারই দেখতে পাই কেউ না কেউ হারিয়ে গিয়েছেন

 |  2-minute read |   19-12-2018
  • Total Shares

ছোট শহরগুলো সহজে বদলায় না। সুন্দর ভবিষ্যৎ, ভালো চাকরি, ভালো সুযোগ, উচ্চশিক্ষা ও উচ্চমানের জীবনযাত্রার স্বপ্ন দেখতে দেখতেই আমরা এই ছোট্ট শহরগুলোতে বেড়ে উঠি। যাঁদের সঙ্গে আমাদের এই বেড়ে ওঠা তাঁরা অবশ্য এই শহরেই রয়ে যান, নিজের ঘরের শহরের রক্ষাকর্তা হিসাবে। যতবারই আমি বাড়ি ফিরি (ভাগ্য ভালো থাকলে বছরের অন্তত একবার সেই সুযোগ আসে), ততবারই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়। তবে অভিজ্ঞতা যতই নতুন হোক না কেন অভিজ্ঞতাগুলো কোথাও যেন একসূত্রে গাঁথা।

বাজারে দেখতে পাওয়া মুখগুলো আর এক থাকে না। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের পাকাচুলের সংখ্যাটাও আরও একটু বেড়ে গিয়েছে, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়েছে, হাঁটুর জোর কমেছে। তাই সিঁড়ি ভাঙা রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। মুখে বয়সের রেখা আর বলিরেখাগুলো আরও গভীর হয়েছে -- বোঝাই যাচ্ছে যে তাঁদের বয়স আরও বেড়েছে। কোথাও যেন একটা মৃত্যুর ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।

body1_121918020438.jpgছোট শহরে যখন সূর্য অস্ত যায় [ছবি: লেখক]

তিন সপ্তাহ আগেই আমি বাড়ি গিয়েছিলাম, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। আমার মা-বাবা একটি নতুন বাড়িতে উঠেছেন আর আমি তাঁদের সাহায্য করতে বাড়ি গিয়েছিলাম। এই গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। সত্তর বছর ধরে আপনি যদি কোনও ছোট শহরে বাস করেন তাহলে শহরের প্রতিটি বাসিন্দার সঙ্গে আপনার আলাপ হতে বাধ্য। এরা প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অবাক: "তুই কত বড় হয়ে গেছিস। তোকে সেই ছোট্টটি দেখেছিলাম।"

অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকের মুখেই এই কথাটি ঘুরছিল। প্রায় ১৭ বছর পরে আমাদের বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হল। শেষবার ২০০১ সালে আরও একটি গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান করা হয়েছিল।

তাঁদের দেখতে পেয়ে আমিও যেন কতকটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই কাকু-কাকিমা, জেঠু-জেঠিমা বা পিসিদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। অথচ সেই বয়সে আমি কখনও ভাবিনি যে তাঁরাও একদিন বৃদ্ধ হবেন। কিন্তু তাঁদেরও নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমেছে, শরীর দুর্বল হয়েছে বয়স বেড়েছে।

body2_121918020514.jpgস্মৃতিরোমন্থন [ছবি: লেখক]

আর, এই উপলব্ধিটা আমার মনকে বেশ নাড়া দিয়েছে।

এদের মধ্যে একজনকে আমি পিসি বলে ডাকতাম। ছোটবেলায় তিনি আমাকে গান শেখাতেন। আজ সকালেই বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মারা গিয়েছেন। স্ট্রোক হয়েছিল। এই তিন সপ্তাহ আগেই গৃহপ্রবেশের পুজোর সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।

যতবারই আমি বাড়ি ফিরি ততবারই দেখতে পাই কিছু পরিচিত লোক হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা মারা গিয়েছেন। শহরের দোকানগুলোরও বয়স বেড়েছে। কয়েকটি দোকানের সাইনবোর্ড নতুন করে রং করা হয়েছে, আবার কিছু দোকানের সাইনবোর্ডের লেখাগুলো ফিকে হয়ে গিয়েছে। দোকানে বসা পরিচিত মুখটি আর নেই। তার জায়গায় নতুন কেউ ওই দোকানে বসছেন। আবার অনেক জায়গায় পুরোনো মুখই রয়েছে। কিন্তু তাঁদের বয়স বাড়লেও তাঁরা আসন ছাড়তে নারাজ।

শহরটা একই রয়ে গেছে। যাঁরা ছেড়ে গেছেন ফিরে এসে স্মৃতিরোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে আগন্তুকরা অবশ্য় এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Ananya Bhattacharya Ananya Bhattacharya @ananya116

Books for the mind; heels for the feet; travel tales for the soul. And conversations. Too much to ask for, eh? ~ Assistant Editor at @IndiaToday

Comment