টপিক্যাল বিজ্ঞাপনে পণ্যের বিক্রিতে হেরফের হয় না, মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক থাকাই এর উদ্দেশ্য
একটা ব্র্যান্ড কতটা 'টপিক্যাল' হতে পারে, তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমুল-এর বিজ্ঞাপন
- Total Shares
ভারতীয় বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে, একটা ব্র্যান্ড কতটা 'টপিক্যাল' হতে পারে, তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমুল-এর বিজ্ঞাপন। ১৯৬৬তে সিলভেস্টার ডাকুনহা, উষা কাট্রাক এবং ইলাস্ট্রেটর ইউস্টেস ফার্নান্দেস তৈরী করেন আমুলের প্রথম বিজ্ঞাপন। পোল্কা ডটেড জামা পড়া, নাকহীন এক বাচ্চা মেয়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয়কে নিয়ে হালকা মেজাজের 'pun' সমৃদ্ধ হেডলাইন এবং সিম্পলিস্টিক ইলাস্ট্রেশন এর মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছে সমসাময়িক বিষয়কে নিয়ে কীভাবে বিজ্ঞাপন করতে হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিজ্ঞাপনগুলো করে কি মাখনের বিক্রি বাড়ছে?
হয়ত যা বিক্রি হত তাই হচ্ছে। তাহলে কেন করা? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ 'ব্র্যান্ড রিকল' এবং মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক থাকা। অর্থাৎ আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া যে কালকের আইপিএল কিংবা আজকের মন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে আর কেউ বিজ্ঞাপন করুক কি না করুক, আমুল নিশ্চয়ই কিছু একটা মজা করবে। আর তাই ,পাড়ার মুদির দোকানে মাখন কিনতে গেলে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমুলের নামটাই প্রথম মাথায় আসে। মাখনের গুণাবলী নিয়ে বিজ্ঞাপন না করে, আমূল তাই সামাজিক বিষয় নিয়ে একটা ভালোলাগা তৈরী করে চলেছে মানুষের মনে, প্রত্যেক সপ্তাহে।
মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞাপন থেকে এখন বেশির ভাগ ব্র্যান্ড-ই ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে মন দিয়েছে, কারণ খবরের কাগজে ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটা ফুল পেজ বিজ্ঞাপন ছাপার থেকে ব্র্যান্ডের ফেসবুক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন বার করা হাজার গুনে লাভজনক। তাই যে কোনও ব্র্যান্ড খুব কম খরচায় 'হ্যামারিং' অথবা 'ব্র্যান্ড রিকল' তৈরী করছে, টপিক্যাল বিজ্ঞাপন করে।
ভারতীয় বিজ্ঞাপনের ইতিহাসে, একটা ব্র্যান্ড কতটা 'টপিক্যাল' হতে পারে, তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ আমুল-এর বিজ্ঞাপন
এই ধরণের বিজ্ঞাপন যে যে বিষয়ের উপর হয় সেগুলো মূলত বছরের বিশেষ বিশেষ দিন বা ঘটনা উদযাপন করার জন্য, যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃ-দিবস, পিতৃ-দিবস, পরিবেশ দিবস, বিশ্বকাপ, রামাদান, শিশুশ্রমদূরীকরণ দিবস, পয়লা বৈশাখ ইত্যাদি।
যেমন কোকা কোলা বাংলাদেশ-এর জন্য বিজ্ঞাপন সংস্থা 'গ্রে বাংলাদেশ ' ২০১৮'র ভাষা দিবস উপলক্ষে এক অসামান্য ভিডিও বানিয়েছে হারিয়ে যাওয়া বাংলা শব্দ ফিরিয়ে আনতে।
কলকাতার এক ছোট্ট বিজ্ঞাপন সংস্থা SoS আইডিয়াস তাদের ক্লায়েন্ট এবিপি ডট কম এবং এবিপি ওয়েডিংস-এর জন্যও বহূদিন ধরে বানিয়ে চলেছে টপিক্যাল ফেসবুক পোস্ট।
অগিলভি মুম্বাই গুগল-এর জন্য, ভারতের প্রথম ভোটার শ্যাম নেগিকে নিয়ে বানিয়েছিল একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও ২০১৪'র লোকসভা ভোটের আগে।
এই ধরণের বিজ্ঞাপনের আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে, কোনও রকম ব্যবসায়িক তথ্য কিংবা প্রোডাক্ট কত ভালো অথবা সার্ভিস কতটা বিশ্বস্ত- এই সব নিয়ে কথা না বলে, ব্র্যান্ডগুলো ছোট ছোট ইমোশনাল কিংবা মজার গল্প বলে। তার কারণ হচ্ছে, এই ধরণের গল্প গুলোই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয় এবং মানুষ শুধু গল্পটার জন্যই ফিল্ম বা পোস্টগুলো শেয়ার করে।
অর্থাৎ পরোক্ষভাবে ব্র্যান্ডগুলো পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের মনে, একটা স্মরণীয় গল্পের মাধ্যমে, ফলত তৈরী হচ্ছে ব্র্যান্ডটির দীর্ঘায়ু।
কলকাতা পুলিশও বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে
দেশি এবং বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো তাই ক্রমশ ঝুঁকছে এইধরণের টপিক্যাল বিজ্ঞাপনের দিকে, যাতে ঘামে ভিজে মেট্রোতে ফিরতে থাকা মেয়েটা, উবারের ক্লান্ত ড্রাইভার, কলেজ ক্যান্টিনের তরুণ তুর্কি কিংবা সদ্য ফেসবুক জয়েন করা মেসোমশাই-এর ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি, আর ব্র্যান্ডের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ফিল্মের শেয়ার মনে করিয়ে দেয়, বছরের এই আপাত গুরুত্ত্বহীন দিনগুলোকে সেলিব্রেট করা আজ কতটা দরকারি।

