সমাজকর্মীদের গ্রেফতারি মোদী সরকারকে চাপে ফেলেছে কেন
এই মামলা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের কাছে অগ্নিপরীক্ষার সামিল
- Total Shares
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাঁচজন সমাজকর্মীকে মাওবাদী সন্দেহে গ্রেপ্তারের পর আন্তর্জাতিক মহলেও পুনে পুলিশকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। পুনে পুলিশের এই গ্রেপ্তার কতটা আইনসঙ্গত তার প্রমাণ ৬ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে পাওয়া যাবে।
পুলিশের দাবি, ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, ভারনন গঞ্জাল্ভেস, অরুণ ফেরিরা ও গৌতম নওলাখা নামের যে পাঁচজনকে মাওবাদী সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা সরকার পতনের ছক কষেছিলেন।
পুনে পুলিশ একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, "সিপিআইএম (মাওবাদী) যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এদের যুক্ত থাকার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে যে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্যে নেপাল থেকে অস্ত্র আমদানির পরিকল্পনা করেছেন মাওবাদীরা। আর এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য রাওয়ের অনুমোদন একান্ত ভাবে প্রয়োজন।
[ছবি: পিটিআই]
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে পাওয়া তথ্যে দেখেছ করছে কী ভাবে একটি সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার সঙ্গে শহরাঞ্চলে যোগাযোগ ঘটিয়ে কট্টরপন্থী বামদলগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা চলে। সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা যে তরুণ ও ছাত্রদের কট্টরপন্থী করে তোলার জন্য আলাদা করে অর্থ ও অস্ত্র বরাদ্দ করেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন যে এই মামলায় প্রত্যেক অভিযুক্তকেই সিপিআই (মাওবাদী)-র সক্রিয় সদস্য হিসেবেই দাবি করা হয়েছে। এই পুলিশ অফিসারটি দাবি করেছেন যে অভিযুক্তরা নিজেদের দল ছাড়াও পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি) ও ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ফ্রন্ট নামের দু'টি মঞ্চকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে উদ্যত হয়েছেন।
গ্রেফতার হওয়া সমাজকর্মীদের সমর্থকরা অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন যে সরকারের ব্যর্থতার উপর মানুষের যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সেই ক্ষোভ অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই এই পাঁচজন সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন যে প্রান্তিক মানুষজনের প্রতি এই পাঁচজনই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং এই পাঁচজনকেই বিশিষ্ট সমাজকর্মী হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। সুতরাং, এঁদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে এঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ ঠিক কাজ করেনি।
বছরের শুরুতে করেগাওঁ ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন আন্দোলনকারীরা [ছবি: পিটিআই]
এঁদের সমর্থনে যে ৩৭টি সংগঠন এগিয়ে এসেছে সেই সংগঠনগুলো একটি যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, "বিদ্বজ্জন ও বিশিষ্ট সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করার যে প্রযন্ত রাষ্ট্র ও পুলিশের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।" এই সংগঠনগুলো সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার দাবি করেছে এবং এবছর পয়লা জানুয়ারির করেগাওঁ মামলার সঠিক তদন্তের জন্য আর্জি জানিয়েছে।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের হাতে। তাই এই মামলাটি যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অগ্নিপরীক্ষা, তা বলাই বাহুল্য। তিনি একটি উদ্ভট পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যেখানে রাজ্যে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনায় দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক মতালম্বী লোকেদের দোষী সাব্যস্তের চেষ্টা চলছে। এলগড় পরিষদ মামলায় সন্দেহের তির বামপন্থী মাওবাদী সংগঠনের দিকে। অন্যদিকে, করেগাওঁ মামলায় অভিযুক্ত ডানপন্থী সমর্থকরা।
তার সরকার যদি এই আরবান নকশাল তত্ত্ব প্রমাণ করে ফেলতে পারে তা হলে দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ বিজেপি সমর্থকদের মন জয় করে ফেলতে পারবে। তিনি ব্যর্থ হবেন না সফল হবেন তার কিছুটা আভাস ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে পাওয়া যাবে।
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

