নতুন চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকা: পক্ষপাতিত্বের চাপ সহ্য করে সম্মান আদায়ের এক উপখ্যান

সেরেনার ভক্তরা তাঁর হার সহ্য করতে না পেরে বিজয়ীকে অসম্মানও করেছেন

 |  4-minute read |   11-09-2018
  • Total Shares

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে দর্শকদের অতিপ্রিয় সেরেনা উইলিয়ামসকে স্ট্রেট সেটে পরাজিত করে খেতাব জিতে নিলেন বছর কুড়ির জাপানি তরুণী নাওমি ওসাকা।

সেরেনাকে তাঁর ২৪তম উল্লেখযোগ্য খেতাব জিততে না দিয়ে, এই প্রথম গ্রান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতে টেনিস জগতের নতুন তারকা রূপে উদিত হলেন এই জাপানি তরুণী। নিজের পেশাদারিত্ব দক্ষতার পরিচয় দিয়ে, টেনিস দুনিয়ার সম্মান আদায় করে নিয়ে এবং সর্বপরি নিউ ইয়র্ক স্টেডিয়ামে উপস্থিত সেরেনার সমর্থক-দর্শকদের চাপ সহ্য করে এই তরুণ বয়সে নিজেকে মেলে ধরলেন নাওমি।

আমি টেনিসের অন্ধভক্ত। কিন্তু সময় পার্থক্যের জন্যে ফাইনাল ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার আমার দেখা হয়নি। সকালে উঠে নাওমির চ্যাম্পিয়ন হওয়া বা সেরেনার হারের খবরটা পেলাম। আমরা যারা টেনিস খেলাটাকে নিয়ে চর্চা করে থাকি আশা করেছিলাম যে নাওমি কঠিন লড়াই করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ সেরেনারই জয় হবে। সম্প্রতি এক কন্যা সন্তানের মা হয়ে সেরেনা নতুন করে দর্শককূলের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছিলেন। তাই আমরা ভেবেছিলাম যে দর্শক সমর্থনের জোরে শেষ পর্যন্ত সেরেনাই চ্যাম্পিয়ন হবেন।

body_091118024905.jpgনিঃসন্দেহে দিনটি ওসাকারই ছিল [ছবি: রয়টার্স]

কিন্তু সকালে উঠে যে খবরটা পেলাম তা সত্যি সত্যিই অন্যরকম।

সেরেনাকে দাঁড়াতে না দিয়ে ৬-২, ৬-৪ ফলাফলে খেতাব জিতে নিয়েছে নাওমি। গোটা ম্যাচে ১৮টি গেমের মধ্যে মাত্র ছ'টি গেমে জিততে পেরেছেন সেরেনা।

কিন্তু আরও একটি ঘটনার জন্যে ২০১৮ সালের যুক্তরাস্ট্র ওপেনের ফাইনাল ম্যাচটি অন্য মাত্রা পেয়ে গেল। ম্যাচ চলাকালীন চেয়ার আম্পায়ার কার্লস রামোস বিধি ভঙ্গের জন্যে সেরেনাকে সাবধান করেন। ক্ষিপ্ত সেরেনাও এরপর চেয়ার আম্পায়ারের বিরুদ্ধে 'চুরির' অভিযোগ তোলেন।

সেরেনা ভক্তদের ও যারা সেরেনাকে সমর্থন করেন না - উভয়পক্ষই এই ম্যাচ নিয়ে বিস্তর কাঁটাছেড়া করবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সকলকে মেনে নিতে হবেই যে চাপ কাটিয়ে নিজের জীবনের গৌরবজনক একটি অধ্যায় রচনা করে ফেলেছেন নাওমি ওসাকা।

দর্শককূল সেরেনার প্রতি পক্ষপাতপূর্ণ আচরণ করেছে এবং খুলেআম সেরেনাকে সমর্থন করে গেছেন। এতে আমি অবশ্য খুব একটা অবাক হয়নি কারণ সেরেনা বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস ভক্তদের কাছে অতি প্রিয়। দ্বিতীয় সেটে তো রীতিমতো নাটকের সূত্রপাত হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেরেনা যে ভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যে তাঁর বিরুদ্ধে পেনাল্টি পয়েন্ট আরোপ করা হয়। এতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুন্ন হল।

body1_091118025014.jpgআশা করা গিয়েছিল অভিজ্ঞ সেরেনাই শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হবেন [ছবি: রয়টার্স]

যেটা আরও লজ্জাজনক তা হল স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরা নাওমির অনবদ্য পারফরম্যান্সকে কৃতিত্ব দিলেন না। শেষ পর্যন্ত, পরিস্থিতি হালকা করতে, চোখে জল নিয়ে সেরেনাকে বলতেই হল, "আমি এতটা কঠোর হব না। ও সত্যিই ভালো খেলেছে। আসুন আমরা মুহূর্তটা উপভোগ করি, কাউকে কোনও রকম আঘাত না দিয়ে।"

পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে যখন নাওমি উইনার্স ট্রফিটা নিতে যান। গোটা ম্যাচে যে পরিমাণ অপমান তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল তাতে যথেষ্ট বিহ্বল ছিলেন তিনি। চোখে জল নিয়ে, ম্যাচের ফলাফল দর্শকদের পছন্দের মতো না হওয়ার জন্যে তিনি দর্শকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই ধরণের ঘটনা অতীব বিরল এবং টিভির পর্দায় এই দৃশ্য দেখে গোটা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে।

body2_091118025134.jpgচেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন সেরেনা [ছবি: রয়টার্স]

নাওমিকে যে ভাবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল বা পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে এক ঘরে করে রাখা হল তা সত্যিই মর্মস্পর্শী। ওই মঞ্চে তিনজন বয়স্কা মহিলা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই ২০ বছরের এক উদীয়মান তারকাকে সমবেদনা জানবার জন্যে পিঠ চাপড়ে দিলেন না। এই ঘটনায় অনুষ্ঠানের জৌলুশ যে অনেকখানি কমে গেল তা বলাইবাহুল্য।

আগামী কয়েকসপ্তাহ ধরে এই ম্যাচটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা হবে এবং সেরেনার এই পর্যায় যে সত্যিই দুঃখের তা প্রমাণ করবার চেষ্টা চলবে। এর আগে ২০০৯ সালে সেমিফাইনালে কিম ক্লিজস্টারের বিরুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সময়ও ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন সেরেনা। সেই সময়ে লাইন্সম্যানকে ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালমন্দ করেছিলেন সেরেনা। তাঁর সেই প্রতিক্রিয়া নিয়েও এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় বইছে।

body3_091118025232.jpgপুরস্কার বিতরণী মঞ্চে কেউই সমবেদনা দেখালেন না [ছবি: রয়টার্স]

ইতিহাস কিন্তু সেরেনা উইলিয়ামসকে একজন বড় মাপের টেনিস খেলোয়াড় হিসেবেই মনে রাখবেন। ২৩ টি উল্লেখযোগ্য খেতাব জয় কিন্তু মুখের কথা নয়। কিন্তু বেশ কয়েকটি কারণের জন্য শনিবার সেরেনার দিন ছিল না। আর, সেদিন ফ্লসিং মেডোর দর্শকেরা যা আচরণ করেছে তাতে একটা কথাই প্রমান হয় যে খেলার মাঠে এখনও একচোখামি গভীরভাবে খচিত রয়েছে।

অ্যাম্ফিথিয়েটার নিয়ে একবার রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি বলেছিলেন, যখন পছন্দের বীর যোদ্ধা (গ্ল্যাডিয়েটর) পরাজিত হন তখন সেখানে রোমের মতো জনপ্লাবন দেখা যায় আর সুসভ্য রোমনগরী যেন উন্মত্তের মতো আচরণ করে। 

আর, ঠিক এই দৃশ্যটিই ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যাবেলা লক্ষ করা গিয়েছিল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

C UDAY BHASKAR C UDAY BHASKAR @theudayb

The writer is Director, Society for Policy Studies.

Comment