ভীতি কাটাতে বৈদিক গণিত কার্যকরী হলেও তা কেন স্থায়ী হল না?
বৈদিক পদ্ধতি ব্যবহার করে সহজেই জটিল গণিতের সমাধান করা যায়
- Total Shares
প্রথাগত ভাবে বিদ্যালয়গুলিতে যে গণিত শেখানো হয় তার পাশাপাশি বৈদিক গণিতও আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি স্কুলে চালু করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুলেও এই বিষয়টি চালু করা হয়।
আমি যখন বিড়লা গোষ্ঠীর স্কুলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তখন ওখানকার প্রাথমিক স্তরে বিয়ষটি চালু করি। ২০১০ সালের গোড়ার দিকে কলকাতার যে সব স্কুলে বৈদিক গণিত চালু করা হয়, বিড়লা স্কুলটি ছিল সেই সব স্কুলের অন্যতম।
বহু পড়ুয়ারই গণিতে ভীতি রয়েছে
আমাদের দেশে ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈদিক গণিতের প্রচলন ছিল।
আমি আমার পেশা জীবনে এমন অনেক ছাত্রছাত্রীকে দেখেছি যারা অঙ্ক করতে চায় না কিংবা বিষয়টিকে শুধুমাত্র ভয়ের কারণে এড়িয়ে চলে। যার ফলে পরীক্ষায় এমনকি বোর্ডের পরীক্ষায়ও বিষয়টিতে ভালো ফল করতে পারে না বলে তাদের সার্বিক নম্বর অনেক কমে যায়।
যে সব ছাত্রছাত্রী অঙ্কে বেশ কাঁচা কিংবা অঙ্ককে খুব ভয় পায় তাদের কথা মাথায় রেখেই আমি এই বিষয়টি চালু করি। গতানুগতিক গণিতের পাশাপাশি পড়ুয়ারা বৈদিক পদ্ধতিতেও গাণিতিক সমস্যায় সমাধান করত।
জ্যামিতি, বীজগণিত ও ডেসিবেলের অঙ্ক করতেও বৈদিক গণিত ব্যবহার করা যায়
যদিও এই বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি তবুও দেখেছিলাম বহু পড়ুয়া গণিতের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে তখন আমি খুব ভালো সাড়াও পাই। অঙ্কে পিছিয়ে পড়া বহু ছাত্রছাত্রী বেশ ভালো নম্বরও পেয়েছিল। এ ছাড়া বৈদিক গণিতের সাহায্যে প্রথাগত গণিতেও তারা বেশ ভালো ফল করতে আরম্ভ করেছিল।
খেলার ছলে জটিল সব অঙ্ক এক নিমেষে সমাধান করে ফেলা বা পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের কাছে অঙ্ককে সহজবোধ্য করে তোলার উদ্দেশে বাধ্যতামূলক না হলেও কলকাতার বহু স্কুল এই বিষয়টি চালু করে।
আমাদের স্কুলে বিষয়টি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে প্রথম চালু করি। বৈদিক গণিতের কয়েকটি সহজ নিয়মকে কাজে লাগিয়ে কঠিন ও সব জটিল অঙ্ককে অনায়াসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সমাধান করে ফেলা সম্ভব। ক্যালকুলেটর বা অঙ্কের গণনার সরঞ্জাম যেমন অ্যাবাকাস, এই সব কোনও কিছুর ব্যবহার না করে শুধু মাত্র বৈদিক গণিতের সাহায্যে বড় ও জটিল সব যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতি করে ফেলা সম্ভব।
যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগের সমাধান করে ফেলা সম্ভব
এ ছাড়া জ্যামিতি, বীজগণিত ও দশমিকের অঙ্ক করতেও বৈদিক গণিত ব্যবহার করা হয়। তাই বাচ্চাকে খেলার চলে অঙ্ক শেখাতে হলে কিংবা ছোট থেকেই সে যাতে অঙ্ককে বিভীষিকা বলে মনে না করে তাই বৈদিক গণিতের ছোটছোট সহজ গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের অঙ্কের হাতে খড়ি হলে ভবিষতে তাদের অনেক সুবিধা হবে।
তবে দুঃখের বিষয় হল অনেক স্কুল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি চালু করলেও বহু শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক মহলের একাংশ এই বিষয়টিকে মন খুলে স্বাগত জানায়নি। কারণ তাঁদের মতে তাঁরা যে গতানুগতিক পদ্ধতিতে অঙ্ক করাতে অভস্ত্য বৈদিক গণিত সেই পদ্ধতির বিরোধিতা করে।
তাঁরা মনে করেন বৈদিক গণিত করতে গিয়ে যেসব সহজ ও চটজলদি পদ্ধতি ব্যবহার করে জটিল ও বড় অঙ্ককে সমাধান করে দেয় ঠিকই কিন্তু তার ফলে পড়ুয়াদের অঙ্কের ভিতটা নড়বড়েই থেকে যায়। তাই তাঁরা কখনোই বৈদিক গণিতকে পাঠক্রমে পাকাপাকি ভাবে স্থান দিতে রাজি নন। এমনকি আজ প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে স্কুল পাঠক্রমে যাতে বৈদিক গণিতের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি বিষয়কে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার যায় সেই জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।
উঁচু ক্লাসে পড়ুয়াদের বেশি মনোযোগ থাকে বোর্ডের পরীক্ষার দিকে
আসলে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থার একটা মস্ত সমস্যার দিক হল আমরা কোনও পরিবর্তনকে খুব সহজে পারি না। তাই আমার মনে হয় যাঁরা সিলেবাস কমিটিতে রয়েছেন তাঁদের এই বিষয়গুলিকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ। এর ফলে বহু পড়ুয়ারা যাদের অঙ্ককে ঘিরে ভীতি রয়েছে সেই সব পড়ুয়াদের সত্যিই খুব উপকার হবে।
আমার মনে হয় বিষয়টি দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে চালু করা গেলে সব চেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, পরীক্ষামূলক ভাবে কোনও একটি বিষয়কে শুরু করলে সেই বিষয়টিকে ঘিরে সাফল্য আসার জন্য কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সেই সময়টা দিতে চাই না। প্রাথমিক শ্রেণীতে এই বিষয়টি যদি আরম্ভ করা যায় তা হলে হাতে বেশ কিছুটা সময় পাওয়া যায় কিন্তু উঁচু ক্লাসগুলোতে গিয়ে সেই অবকাশ আর থাকে না কারণ তখন পড়ুয়াদের বেশি মনোযোগ থাকে বোর্ডের পরীক্ষার দিকেই।

