টোলপ্লাজায় ভিআইপি লেন মানবাধিকারের বিরোধিতা করে
শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার জন্যই ভিআইপি লেনের বন্দোবস্ত রাখা উচিত
- Total Shares
দেশের সবকটি জাতীয় সড়কের টোলপ্লাজায় ভিআইপি লেন তৈরি করা হবে। মাদ্রাজ হাইকোর্ট সম্প্রতি ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এনএইচএআই)-কে ভিআইপি লেন নির্মাণ করার যে নির্দেশ দিয়েছে তা আমি মানি না। মাদ্রাজ হাইকোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এনএইচএআই-কে এমনই অন্তর্বতী নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে যে নির্দেশ না মানলে কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শাতে হতে পারে।
এতদিন আমরা সবাই এ ভাবেই যাতায়াত করেছি, কখনও কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এই রায়ের ফলে বিভিন্ন ভিআইপি তথা বর্তমান বিচারপতিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এখন থেকে দেশের সবকটি জাতীয় সড়কে আলাদা করে একটি লেনের বন্দোবস্ত রাখতে হবে।
শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার জন্যই ভিআইপি লেনের বন্দোবস্ত রাখা উচিত
প্রথম থেকেই তো কোনও রকম আলাদা লেন ছাড়াই এঁরা যাতায়াত করতেন। তা হলে আজ হঠাৎ এই নির্দেশের কী প্ৰয়োজন পড়ল? আমার মনে হয় কোর্ট যে নির্দেশটি দিয়েছে তার কোনও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। আলাদা একটি রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে যেমন খরচ হবে পাশাপাশি আলাদা কোনও পথ থাকলে তা বাড়তি যানজটেরও সৃষ্টি করবে।
এর আগেই একবার উত্তরপ্রদেশ হাইকোর্ট এই ধরণের একটি রায় দিয়েছিল তবে সমালোচনার মুখে পড়ে তাঁরা তাঁদের সেই নির্দেশ ফিরিয়েও নিয়েছিল। এটাই তো ঠিক।
কোনও সভ্য দেশে এই ধরণের আলাদা বন্দোবস্ত থাকাটা উচিত নয়। এমন বহু দেশ আছে যেখানে বিচারপতিদের জন্য আলাদা পথ তো দুরস্ত এমনকি তাঁদের গাড়িতে লালবাতিও থাকে না। আমি এমন বহু বিচাপতিকে চিনি যাঁরা নিয়মিত টিউব রেলে যাতায়াত করেন।
কোনও সভ্য দেশে এই ধরণের আলাদা বন্দোবস্ত থাকাটা উচিত নয়
দেশের সব নাগরিককেই রোডট্যাক্স দিতে হয়। তা হলে শুধুমাত্র ভিআইপি-রাই এই বিশেষ সুবিধাটি কেন ভোগ করবেন? দেশের নাগরিকদের করেই রাস্তা নির্মাণ করা হয় এবং তা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। তাই একটি রাস্তা বা সড়ককে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য যখন সব যাত্রীই টোলট্যাক্স দিচ্ছেন তখন সেই রাস্তা একজন বিচারপতি বা অন্যান্য ভিআইপি ব্যবহার করলে তিনি কর দেবেন না কেন? ভিআইপি এবং বিচারপতিরা যখন আয়কর দিচ্ছেন বা কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক তখন তাঁদের রোডট্যাক্সও দেওয়া উচিত।
একজন বিচারপতি হয়ে টোলপ্লাজায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে তাঁদের যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনই এটা তাঁদের পক্ষে বেশ অসম্মানজনকও বটে। মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলাটির শুনানির সময় বিচারপতি বলেন ট্রাফিকে দাঁড়াতে অসম্মান কিসের আমি ঠিক বুঝলাম না, কারণ যিনি আপনার আগে এসেছেন তাঁকে আগে যেতে দিতে হবে। এটা একটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, এর মধ্যে কোনও অন্যায় বা সম্মানহানি নেই।
দেশের সব নাগরিককেই রোডট্যাক্স দিতে হয়, শুধুমাত্র ভিআইপি-রাই এই বিশেষ সুবিধাটি কেন উপভোগ করবেন?
তাছাড়া, তাঁরা যখন কোনও রকম বিশেষ সুবিধার আশা করেন তাহলে তো প্রয়োজনে তাঁদের পরিচয়পত্রও দেখতে হবে।
আমরা সবাই দেশের নাগরিক। সাধারণ নাগরিক এবং ভিআইপি নাগরিক হিসেবে কোনও রকম ভাগ একেবারেই অনৈতিক। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার জন্যই ভিআইপি লেনের বন্দোবস্ত রাখা উচিত।
বিজেপি সরকার তথা সুপ্রিম কোর্ট লালবাতি গাড়ির প্রকোপ যাতে কম হয় তাই সে বিষয় আগেই পদক্ষেপ করেছিল। মাদ্রাজ হাইকোর্টের এই নির্দেশ তার বিরোধিতা করছে। এই ধরণের নির্দেশ মানবাধিকারের বিরোধিতা করে।

