লোকে দূরবীনে পাখি দেখছে না, শুধু ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিচ্ছে

একটা পাখি দেখলেই ৪০ জন ফোটোগ্রাফার ছুটছেন, তাতে পাখি পালাতে পারে

 |  3-minute read |   24-04-2018
  • Total Shares

কলকাতার আবহাওয়ায় খানিকটা বদল হয়েছে। কয়েকদিন আগে যে ঝড় হল, আয়লার পরে এমন তীব্র ঝড় সম্ভবত আর হয়নি কলকাতায়। শহরের মধ্যে ঝড়ের প্রবণতা বাড়ছে, বিদ্যুৎ চমকানো অনেক বেড়েছে। হাওড়া অফিসও কয়েক বছর এ ব্যাপারে একটা বার্তা দিয়েছিল। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই কারণ সম্ভবত এখানে একটা উষ্ণ পরিমণ্ডল তৈরি হওয়া।

কলকাতা ক্রমেই কংক্রিটের হচ্ছে, সবুজ কমে যাচ্ছে। পুরনো বাড়িগুলো ভেঙে নতুন হচ্ছে এখানে। সব মিলিয়ে প্রচুর গাছ এখানে ধ্বংস হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগের ঝড়ে দুশোর উপরে গাছ পড়েছে। গাছ অতটা বড় হতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ বছর। সেই গাছ পড়ে গেলে তার উপরে নির্ভরশীল সকলেরই ক্ষতি হয়। এমনিতেই কলকাতায় গাছ কম, নতুন করে গাছ লাগানোর জায়গাও নেই। কয়েকটি উদ্যান রয়েছে, এ ছাড়া একেবারে হাতে গোনা কয়েকটি সবুজ জায়গা আছে, যেমন ময়দান, রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবর, রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব—এগুলো ১০০ থেকে ২০০ একর জায়গার উপরে। এই সব জায়গার পাশাপাশি চিড়িয়াখানাতেও গাছপালা রয়েছে।

হাতেগোনা এই ক’টি জায়গায় গাছপালা থাকায়, বন্যপাখির সংখ্যা এখানে খুব কম হওয়ার কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে পাখি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি। অনেক পাখিই কমে গেছে, যেগুলো আগে খুব বেশি সংখ্যায় দেখা যেত, এখন আর দেখা যাচ্ছে না, যেমন নীলকণ্ঠ। এর একটা কারণ হল অনেক পাখিই খাবার পাচ্ছে না। আমরা যে আগে কালীপুজোর সময় শ্যামাপোকা প্রচুর দেখা যেত, এখন আর তেমন দেখা যাচ্ছে না বেশ কয়েকবছর। তা ছাড়া আগে কলকাতার বাড়িগুলোতে আলোয় যে সব পোকা-মাকড় আসত, এখন সে সব অনেক কমে গেছে। সুতরাং যে সব পাখি পোকা খায়, তাদের পক্ষে সমস্যা হয়ে গিয়েছে। যে সব পাখি ফল খায় তাদের জন্য অবশ্য বট-পাকুড় এই সব গাছ রয়েছে।

bird_body1_042418023602.jpgডাল ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে বলে উল্টো দিক থেকে হাওয়া বইলেই গাছ পড়ে যাচ্ছে

কলকাতায় নানা রকম গাছ রয়েছে, দেশী গাছ এবং বিদেশি গাছ। বিদেশী গাছেও প্রচুর পাখি আসে, সেখানে বাসা বেঁধে থাকে। যেমন কৃষ্ণচূড়া গাছে বসন্তবৌরী ও নীলগলা বসন্তবৌরী বাসা বাঁধছে, অর্থাৎ তারা এই ধরনের গাছে বাসা বাঁধা শিখে গিয়েছে। এরা হয়তো সংখ্যায় বাড়ছে।

পায়রা, চড়ুই, কাক, শালিখ প্রভৃতি পাখি মানুষের উপরে নির্ভরশীল (কমেন্সাল), এরা মানুষ না থাকলে থাকতে পারে না। কিন্তু তা ছাড়াও গাছপালা থাকার জন্য এখানে নানা ধরনের পাখি রয়েছে। সম্প্রতি রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন অঞ্চলে এমন কয়েক ধরনের পাখি দেখা যাচ্ছে, গত আট-নয় বছরে সেই ধরনের পাখি আমরা দেখিনি। কেন এই সব পাখি আমরা দেখিনি। এমন পাখি ওখানে দেখা গিয়েছে যেটা ভারতে প্রথমবার দেখা গিয়েছে, এশিয়ান সাবটেল। এর দুটো দিক আছে। একটা ভালো দিক, তা হল আমরা কলকাতায় নতুন পাখি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হল রবিবার সকালেও দেখেছি তাদের পিছনে অন্তত ৪০ জন ফোটোগ্রাফার ছুটছেন। আমরা চাই যে লোকে পাখি দেখুক, পাখি সম্বন্ধে জানুক, তারা পাখিকে বাঁচাবার চেষ্টা করুক।

সমস্যা হল, এখনকার দিনে যাঁরা পাখি দেখতে যাচ্ছেন, তাঁরা ক্যামেরা নিয়েই যাচ্ছেন, দূরবীন তাঁদের কাছে প্রায় থাকেই না। তাঁরা পাখি দেখেন না, পাখির ছবি তোলেন। তারপর সেই ছবি প্রদর্শন করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি দেওয়ার একটা প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। রবিবার সকালে ওখানে ব্লু থ্রোটেড ব্লু ফ্লাই ক্যাচার দেখা গিয়েছে, তার আগে ইন্ডিয়ান পিট্টা দেখা গিয়েছে, কিন্তু তার পিছনে এত লোক দৌড়াচ্ছিলেন যে সেগুলো হয়তো পালাবে।

bird_body2_042418023647.jpgআমরা চাই যে লোকে পাখি দেখুক, পাখি সম্বন্ধে জানুক, তারা পাখিকে বাঁচাবার চেষ্টা করুক

এটা একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। আমরা চাই যে লোকে পাখি দেখুন। কিন্তু এখন যাঁরা পাখি দেখছেন, তাঁরা পাখিকে তাড়াচ্ছেনও হয়ত। এটা একটা সমস্যা। তাও কলকাতায় এখনও নেই নেই করেও যা পাখি আছে, খুব কম শহরে এত পাখি থাকে। কারণ আমাদের এখানে দেশী-বিদেশি গাছ যা আছে, তারা পাখিদের স্থান দেয়, থাকার জায়গা দেয়। এখানে অনেক পাখি থাকে। এটা ভালো দিক।

মন্দ দিক বলতে, এই যে দুশোর উপরে গাছ পড়ে গেল, ওই মাপের গাছ আবার তৈরি হতে অনেক সময় লাগবে। সুতরাং এমন গাছ লাগাতে হবে যেগুলো টিকে থাকতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, যে ভাবে গাছের ডাল ছাঁটা হচ্ছে, সেটা মারাত্মক ব্যাপার। রাস্তার দিকের ডাল ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে, তার ফলে উল্টো দিক থেকে হাওয়া বইলেই গাছ পড়ে যাবে। নিজের মতো করে ভারসাম্য তৈরি করে গাছ বড় হয়। আমরা তার উপরে বেশি কারিকুরি করলে সেই গাছ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

বলা হচ্ছে, বট-পাকুড়ের মতো গাছও পড়ে যাচ্ছে। আমার ধারনা এই সব গাছও পড়ে যাচ্ছে ঠিক মতো করে কাটা হচ্ছে না বলে। একদিক ভারী হয়ে যাচ্ছে ও একদিক হালকা হয়ে যাচ্ছে বলে হাওয়ার চাপ তারা সহ্য পারছে না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KUSHAL MOOKHERJEE KUSHAL MOOKHERJEE

Prakriti Samsad, President

Comment