রাজ্য সরকারের স্বল্প বেতন, তাই চিকিৎসকরা ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন
শারীরিক ভাবে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন বহু চিকিৎসক
- Total Shares
সম্প্রতি উত্তরকন্যায় আলিপুরদুয়ার জেলার একটি প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে চিকিৎসক সংকট নিয়ে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন যে চাকরিরের অর্ডার হওয়া সত্ত্বেও অনেক চিকিৎসক কাজে যোগ দিচ্ছেন না। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন যে রাজ্যের বেশিরভাগ চিকিৎসক ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী পদ সামলানোর পর প্রথম থেকেই রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবহার উন্নতির জন্য বিশেষ নজর দিয়েছেন তবুও অবস্থার কোনও উন্নতিই হয়নি। তার অবশ্য অনেকগুলো কারণ আছে যা রাজ্যের চিকিৎসকমহলকেও যথেষ্ট ভাবছে।
বলুন তো আপনার বাড়িতে কোনও মানুষ গেলে যদি তাঁর সঙ্গে আপনি কুকুর-বেড়ালের মতো আচরণ করেন ও উপযুক্ত সম্মান না দেন সে কী আপনার বাড়িতে আর কখনও আসবেন? প্রতিবছর আড়াই হাজারের বেশি এমবিবিএস ও প্রায় দেড় হাজার পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসক পাশ করে বেরোচ্ছেন। তাঁদের কী ভাবে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে কোনও সরকার কোনও দিনই সদর্থক চিন্তাভাবনা করেনি। (কেবল ডাক্তারদের দোষারোপ করে চলেছে)। দেশের মধ্যেই মিলিটারিতে (এমনকি জম্মু ও কাশ্মীরে যেখানে মঝে মাঝে যুদ্ধ যুদ্ধ হয়) সেখানেও চিকিৎসকের ঘাটতি নেই।

সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের অভাবের অনেকগুলো কারণ আছে।
১. কাজের জায়গায় চিকিৎসকেরা সুরক্ষিত নয়। এমনকি গণতন্ত্রের যেটুকু সুরক্ষা সাধারণ মানুষ পায়, ডাক্তাররা কাজের জায়গায় সেটুকুও পান না। চুড়ান্ত অসম্মান নিয়ে কাজ করতে হয় তাঁদের। চিকিৎসকরা নিগৃহীত হলে সাধারণ প্রশাসন নির্বিকার থাকে । পুলিশ তাঁদের আটক করলেও তা নামমাত্র। ভারতীয় দণ্ডবিধিরর যে ধারাগুলো দিয়ে নিগ্রহ কমানো যেতে পারে তার কোনও রকম চেষ্টা বা প্রয়োগ নেই।
২. পরিকাঠামোর ঘাটতি: রোগীর প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে পরিকাঠামো বেশ কম। একটি বেডে একাধিক রোগী থাকতে বাধ্য হন। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও সহায়তাকারী লোকজনের চূড়ান্ত অভাব। এই সমস্ত দায় চিকিৎসকের উপর এসে পড়ে। (সরকার এবং কয়েকটি মিডিয়া এর জন্য দায়ী)
৩. বিজ্ঞানসম্মত বদলি, পোস্টিং ও পদোন্নতির ঠিকঠাক কোনও নীতি নেই: এর ফলে যেই চিকিৎসক গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা দিচ্ছেন তাঁকে কতদিন সেখানে থাকতে হবে তা অনিশ্চিত।

৪. চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় বাধা: তিন বছর সরকারি চাকরি করলে এবং সর্বভারতীয় নিট-পিজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড প্রার্থী হিসেবে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে যেতে পারে। কিন্তু ২০১৫ থেকে অর্থাৎ গত চার বছর ধরে সরকারি চাকুরিরত চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় ক্রমাগত বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্পন্সরর্ড প্রার্থী হিসেবে পিজি পড়ার সুযোগ (এই সুবিধাকে 'ট্রেনি রিজার্ভ' বলা হয়) থাকলে যারা সবেমাত্র এমবিবিএস পাশ করেছেন তাঁরা যেমন চাকরি গ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে আবার সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল গরিব, সাধারণ মানুষও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসায় উপকৃত হবেন। ক্রমাগত টিআর-এর সুযোগ সংকুচিত করার ফলে চিকিৎসকদের কাছে সরকারি চাকরির আকর্ষণ কমে যাচ্ছে।

৫. স্বেচ্ছা অবসরের সুবিধা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে: যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর পেশা জীবনে কুড়ি বছর বা পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেন তাহলে তাঁকে সমস্ত সুবিধা সহ অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে বয়সের উর্ধ্বসীমা সরকার বাড়িয়ে চলেছে। শারীরিক ভাবে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন বহু চিকিৎসক।
৬. স্বল্প বেতন: কেন্দ্র সরকার ও অনেক রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকদের মাইনে অর্ধেকেরও কম।

৭. নিজস্ব কোয়াটার্স-সহ গ্রুপ এ অফিসাররা আর যে যেসব সুবিধাগুলো পান চিকিৎসকরা তেমন পান না। হাসপাতালের চিকিৎসকদের থাকার জায়গা এমনকি তাঁরা যে বাথরুম ব্যবহার করেন সেগুলোর বেহাল অবস্থা।
তাই আমার মনে হয় প্রশাসনিক অব্যবস্থা যদি বন্ধ করা যায় পাশাপাশি এই সব সমস্যাগুলো যদি সমাধান করা হয় তাহলে সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অভাব হবে না।

