দেশে উচ্চশিক্ষার পরিকাঠামোর অভাব তাই আমি বিদেশে
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের প্রশ্ন,আমি দেশে কোনও দিন ফিরব কি না
- Total Shares
বাকি লক্ষ ভারতীয়র মত আমিও এখন বিদেশে। হয়তো দেশের বাইরেই কাটবে বাকিটা জীবন। দু বছর দেশের বাইরে থাকাতেই, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে যে আমি দেশে কোনদিন ফিরব কিনা। এই ভাবে নিজের মন্তব্ব্য প্রকাশ করতে পারার সুজগ পেয়ে হয়ত তাঁদের সবার উত্তর কিছুটা হলেও দিতে পারব। তাই প্রথমেই অনেক অনেক ধন্যবাদ আমায় এই সুযগ টি দেওয়ার জন্য।
ছোট থেকেই সবার মুখে শুনে এসছি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা। তবে সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, স্কুল এ থাকতে কখনই বুঝে উঠতে পারিনি কি পরিমান চেষ্টা, কষ্ট, কিছু ক্ষেত্রে আবার টাকা বা রাজনৈতিক দখল এর ও প্রয়োজন দেশে নিজের সপ্ন পূরণ করতে। মধ্যবিত্ত ছাত্র হয়েও স্কুলের ফাইনাল এ বেশ ভালই মার্ক্স পেয়েছিলাম। নিজের পছন্দের ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগও পাই। যদিও বলা জরুরি যে এই সময় ই প্রথম আশ্বাস করতে পারি যে যে কোনও ভাল কলেজ বা চাকরি, এমনকি নিজের ব্যবসা খুলতেও কি পরিমান চেষ্টার প্রয়োজন আর সাফ্যলতার মাত্রা তা কতটাই কম। চাপ টা সময় এর সাথে আরো বাড়তে থাকে। চার বছর লক্ষ টাকা খরছা করে পড়ে, সেই বছর এর প্রথম কয়েক জন চাকরিপ্রাপ্তিদের মধ্যেই আমার নাম ছিল। চাকরি টি নিজের পছন্দের না হলেও কলেজ থেকে আর সুযোগ পাইনি কলেজ এ আসা চাকরি গুলো এ চেষ্টা করতে কারণ বাকি কয়েকশো ছেলে মেয়েরা তখনও চাকরির অপেক্ষায়। কলেজ শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে আনন্দ পেয়েছিলাম খুবই। কিছু মাস সেই জায়গায় কাজ করে, পরে নিজের পছন্দের এক কাজে যোগ দিয়ে ফেলি। এখানে বলা জরুরি যে,যা রোজগাড় করতাম তাতে বাড়িতেও টাকা পাঠাতে সাহস করতে পারিনি। সঙ্গে রাজিনিতি মুখমুখি হয়ে ক্লান্ত হয়ে পরছিলাম।
কলকাতায় উপযুক্ত শিক্ষা পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে (ছবিটি উপস্থাপনার জন্য)
অনেক বছর এর বিদেশে আশার স্বপ্নের মধ্যেই কখন আবার চাড়া দিয়ে উঠেছিল নিজেও ঠিক জানিনা। চাকরি থেকে ফিরে রোজ পড়া শুরু করলাম। চাকরি ছেড়ে, পরীক্ষা গুলোয়ে বসে, মাঝে প্রায়ে এক বছর অপেক্ষার পর আসি আমেরিকায়। মাস্টারস পড়ার ইছাই প্রথমে ছিল পরে পিএইচডি তে ঢুকি এই দেশের ই অন্য এক কলেজে। আর ঠিক ১৩ দিন পরে এই দেশে দুই বছর থাকাও পুরণ হয়ে যাবে।
কি পেলাম এই দেশে এসে? ঊচ্চ মানের এক রিসার্চ ল্যাবে কাজ করতে পারার সুযোগ পাওয়ায়ে US Army ফান্ডিং এ মাস্টার্স থিসিস এর রিসার্চ করার সুযোগ পেয়েছি, রিসার্চ দল এর সাথে একটি পেটেন্ট অ্যাপ্লাই ও আরও বেশ কয়েকটি প্রোজেক্ট এ কাজ করার সুযোগ ও ইতিমধ্যেই পেয়েছি। বলা প্রয়োজন যে আমার এই কলেজ একটি পাব্লিক রিসার্চ ন্যাশনাল রাঙ্ক আধিকারিক কলেজ। এখানে পড়ার খরচ আমার ফ্রি, উল্টে নিজের হাত খরচা ও পাই তা দিয়ে গাড়ি কিনেছি ইতিমধ্যেই। ঘোরাঘুরি, এমনকি দেশে বাবা, মা বা বোন কে টাকা পাঠাতেও পারি মাঝেমাঝে। সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেও যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি।দেশের বন্ধু দের সঙ্গে কথোপকথন হলে বুঝি যে দেশে ভাল পাব্লিক কলেজ এ সুযোগ পাওয়া, ফ্রী তে পড়া, ঠিক সময় স্টাইপেন্ড পাওয়া, সর্বোপরি উচ্চ মানের পড়াশোনা আর রিসার্চ করা কতটা কঠিন। নামি দামি বড় কলেজগুলতেও একই অবস্থা। উল্টে তাঁরাই এখন কাজ খুজছে বিদেশে। সবার মত আলাদা হয়ে তবে আমার
মতে এর জন্যে আমাদের গনশঙ্খা, রাজনৈতিক ছেলেখেলা,সবার অতিরিক্ত ভাবে অন্যের সবকিছু তে নাক গলানো, অদরকারী চাপ আর দরকারি ব্যাপারে গা হেলানো সবছচেয়ে বেশি দায়ি।
হাঁ জীবন এখানে সহজ না। বাড়ির কথা মনে পরে, মায়ের রান্না মনে পরে, নিজের সহর কলকাতা, এত বন্ধু, এত আড্ডা, ফুচকা, খেলাধুলো কি না মিস করি। এখানে নিজের “সব”, আবারো একটু জোর দিয়েই বলি “সব” কাজই নিজেকে করতে হয়ে। সবাই প্রচণ্ড দ্রুত বেগে এগিয়ে চলেছে। হয়ত সেই ঘাশ, মাটির গন্ধ ও আর নাকে আসেনা। প্রায়ে ৭-৮ মাস বরফ দেখি চারিদিকে। -৪০ তাপমাত্রার সম্মুখিন ও হচ্ছি অনেকবারই। কিন্তু দিনের শেষে, বাবা মা কে খুশি দেখে, নিজে এত বড় সুযোগ পেয়ে, গবেষণা আর চাকরি ক্ষেত্রে শিক্রিতি পাওয়ার সুযোগ দেখে, এত দারুন একটি দেশ দেখতে পেয়ে, যেখানে উন্নত মানের জীবন যাত্রা আর
পরিবেশ দূষণ নেই বললেই চলে, সেই দেশে আরামের ঘুম ঘুমতে আমার তো বেশ লাগে! ভুল বুঝবেন না, দেশে একটি ভাল সুযগ পেলে সত্যি দেশে ফেরার চিন্তা এখনি শুরু করে দিতাম। নিজের দেশের জন্যে ভালবাসা দেশের বাইরে এলে কয়েক গুন বেড়ে যায়!

